হাইপারসনিক পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা রাশিয়ার

রুশ সেনাবাহিনী একটি অত্যাধুনিক হাইপারসনিক পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে দিন কয়েক আগে।দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মতে, শব্দের চেয়ে ২০ গুণ বেশি গতিতে চলতে সক্ষম এই অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রটিকে পরাজিত করা মার্কিন তথা বিশ্বের যেকোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পক্ষে অসম্ভব। এই উদ্ভাবন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার সামরিক শক্তির ভারসাম্য পুরোপুরি পাল্টে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

রাশিয়ার এই নতুন ক্ষেপণাস্ত্রের নাম আভনগার্ড হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র। এটি চলে শব্দের চেয়ে বিশগুণ বেশি গতিতে। রুশ সামরিক বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন, এটি বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে গিয়ে হামলা করতে সক্ষম এবং একে ঠেকানোর মতো প্রযুক্তি এখনও পর্যন্ত কারও হাতে নেই।

রাশিয়ার ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ইউরি বরিসভ দাবি করেছেন, পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণে ক্ষেপণাস্ত্রটির গতি ছিল ঘণ্টায় প্রায় ৩৩ হাজার ২০২ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার।

প্রেসিডেন্ট পুতিন এই সফল পরীক্ষার পর এতটাই উচ্ছ্বসিত যে, তিনি রুশ ব্যবসায়ীদের নাকি বলেছেন, এখন আর রাশিয়াকে হুমকি দেয়ার মতো কোনো শক্তি বিশ্বে নেই। আসলেই কি তাই? রুশ-মার্কিন অস্ত্র প্রতিযোগিতায় রাশিয়া কি অনেক বেশি এগিয়ে গেল?

ব্রিটিশ আমেরিকান সিকিউরিটি ইনফরমেশন কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক পল ইংগ্রাম বলছেন, রাশিয়ার দাবি যদি সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এখন পুরোপুরি সেকেলে অস্ত্রে পরিণত হলো।

রাশিয়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনও এই হাইপারসোনিক প্রযুক্তি অর্জনের চেষ্টা করছিল। তারা এক্ষেত্রে কিছুটা এগিয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত মোতায়েনযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থায় এই প্রযুক্তির সফল প্রয়োগ তারা করতে পারেনি।

পল ইংগ্রাম বলেন, রাশিয়ার হাতে এরকম ক্ষেপণাস্ত্র থাকার মানে হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম, অর্থাৎ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে গেল। কারণ তারা এতদিন পর্যন্ত ব্যালিস্টিক মিসাইলের দিকেই বেশি মনোযোগ দিয়েছে। ব্যালিস্টিক মিসাইল ঠেকানোর জন্যই তাদের পুরো ডিফেন্স সিস্টেম গড়ে তুলেছে। তাদের সেই প্রযুক্তি দিয়ে রাশিয়ার এই নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকানো যাবে না। এর মানে হচ্ছে রাশিয়া এখন স্বস্তিতে থাকতে পারবে এই ভেবে যে, তাদের ক্ষেপণাস্ত্র থামানোর ক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের নেই।

যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মধ্যে স্নায়ু যুদ্ধের সময় যে চুক্তি হয়েছিল, তাতে ভূমি থেকে নিক্ষেপনযোগ্য মধ্যম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেলে, রাশিয়াও নতুন করে মধ্যম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করবে বলে আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন পুতিন।

ব্যালিস্টিক ও হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্রের পার্থক্য কী

ব্রিটিশ আমেরিকান সিকিউরিটি ইনফরমেশন কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক পল ইংগ্রাম এ দুই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের পার্থক্য করতে গিয়ে বলেছেন, এখন যে ধরনের ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রচলিত, সেগুলো ছোঁড়া হয় রকেটের মতো। ফলে একবার উৎক্ষেপন করার পর এর ট্রাজেক্টরি বা সম্ভাব্য গতিপথ মোটামুটি অনুমান করা যায়। শত্রুপক্ষ তখন সে অনুযায়ী তাদের ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে এই ক্ষেপনাস্ত্র ধ্বংসের চেষ্টা করতে পারে।

কিন্তু হাইপারসোনিক মিসাইলের প্রযুক্তি একেবারেই ভিন্ন ধরণের। এটি উৎক্ষেপনের পর খুব দ্রুত উপরে উঠে যায়। তারপর আবার দ্রুত নেমে আসে। এরপর আনুভূমিকভাবে এটি বায়ুমন্ডলের মধ্যেই চলতে থাকে। চলমান অবস্থাতেও এর গতিপথ পরিবর্তন করা যায়। তার মানে হচ্ছে এটি কোন দিকে যাবে আগে থেকে অনুমান করা সম্ভব নয়। ফলে এটি মাঝপথে ধ্বংস করা প্রায় অসম্ভব। বিবিসি বাংলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *