সয়াবিন বাণিজ্য অর্ধেকে নেমেছে

সয়াবিনের বৈশ্বিক রফতানি বাণিজ্যে সবচেয়ে বড় বাজার চীন। কৃষিপণ্যটির ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ চাহিদার সিংহভাগই আমদানির মাধ্যমে পূরণ করে বেইজিং। চীনের বাজারে আমদানি হওয়া সয়াবিনের সবচেয়ে বড় জোগানদাতা যুক্তরাষ্ট্র। তবে ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হওয়া বাণিজ্যযুদ্ধ দুই দেশের সয়াবিন বাণিজ্যে ধস নামিয়েছে।

২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনা বাজারে সয়াবিন রফতানি প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে। এর মধ্য দিয়ে একদিকে ২০০৮ সালের পর এবারই প্রথম চীনে যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন রফতানি সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে। অন্যদিকে ব্রাজিলের কাছে চীনের বাজারে সবচেয়ে বেশি সয়াবিন রফতানিকারকের অবস্থান হারিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। খবর সিনহুয়া, রয়টার্স ও ওয়ার্ল্ডগ্রেইনডটকম।

চীন বিশ্বের শীর্ষ সয়াবিনের ভোক্তা দেশ। মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৩ সালের পর থেকে চীনে কৃষিপণ্যটির অভ্যন্তরীণ চাহিদায় ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি বজায় রয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ ২০১৮ সালে দেশটিতে সয়াবিনের চাহিদা দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ৯৬ লাখ টনে, যা আগের বছরের তুলনায় ৩ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি।

চীনা সয়াবিনের বাজারে সবচেয়ে বড় রফতানিকারক ছিল যুক্তরাষ্ট্র। চীনের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে দেশটিতে সব মিলিয়ে ৩ কোটি ২৯ লাখ টন সয়াবিন রফতানি করেছিলেন মার্কিন রফতানিকারকরা।

চাহিদার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সয়াবিন আমদানি করে চীন। ২০১৮ সালে দেশটি আন্তর্জাতিক বাজার থেকে নয় কোটি টন সয়াবিন আমদানি করেছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে ইউএসডিএ। এর মধ্য দিয়ে দেশটি বিশ্বের শীর্ষ সয়াবিন আমদানিকারক হিসেবে নিজের অবস্থান আরো পোক্ত করেছে।

২০১৮ সালে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ সয়াবিন রফতানিকারক দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনা বাজারে কৃষিপণ্যটির রফতানি ১ কোটি ৬৬ লাখ টনে নেমে এসেছে, যা ২০০৮ সালের পর সর্বনিম্ন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনে সয়াবিন রফতানি কমেছে ১ কোটি ৬৩ লাখ টন। কৃষিপণ্যটির রফতানি অর্ধেকে নেমে আসার পেছনে বাণিজ্যযুদ্ধকে চিহ্নিত করেছেন বিশ্লেষকরা।

বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ের পর থেকে চীনে মার্কিন সয়াবিন রফতানি কমতে শুরু করে। এ ধারাবাহিকতায় নভেম্বরে চীনের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন রফতানি শূন্যের কোটায় নেমে আসে। তবে ডিসেম্বরে এসে দুই দেশের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা বাণিজ্যবিরোধ প্রশমনে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

বাণিজ্যযুদ্ধের আওতায় গত ৬ জুলাই মার্কিন সয়াবিনের আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার ঘোষণা দিয়েছে বেইজিং। এর জের ধরে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন আমদানিতে আগ্রহ হারিয়েছেন চীনা আমদানিকারকরা। এর প্রভাব পড়েছে দুই দেশের সয়াবিন বাণিজ্যে।

এর জের ধরে গত ডিসেম্বরে চীনের বাজারে মার্কিন রফতানিকারকরা সাকল্যে ৬৯ হাজার ২৯৮ টন সয়াবিন রফতানি করেছেন বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে চীনা রাজস্ব বিভাগ। ২০১৭ সালের একই সময়ের তুলনায় গত ডিসেম্বরে চীনা বাজারে মার্কিন সয়াবিন রফতানি ৬ দশমিক ১৯ শতাংশ কমেছে।

চীনা জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ব্রাজিল থেকে চীনা আমদানিকারকরা সব মিলিয়ে ৪৩ লাখ ৯০ হাজার টন সয়াবিন আমদানি করেছেন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২৬ শতাংশ বেশি।

বিদায়ী বছরে চীন-মার্কিন সয়াবিন বাণিজ্য আগের বছরের তুলনায় অর্ধেকে নামলেও কপাল খুলেছে ব্রাজিলের। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিতে বাড়তি খরচ হওয়ায় চীনা সয়াবিন আমদানিকারকরা বিশ্বের শীর্ষ সয়াবিন রফতানিকারক দেশ ব্রাজিলের প্রতি ঝুঁকেছেন। চীনের সয়াবিন বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের হারানো অবস্থান দখলে নিয়েছেন ব্রাজিলীয় রফতানিকারকরা।

২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ব্রাজিল থেকে চীনে মোট ১৯ লাখ ৪০ হাজার টন সয়াবিন আমদানি হয়েছিল। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ব্রাজিল থেকে চীনের বাজারে কৃষিপণ্যটির আমদানি ২৪ লাখ ৫০ হাজার টন বেড়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *