স্মার্টফোন বাজারগুলোয় প্রবৃদ্ধি অব্যাহত
বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজার টানা কয়েক বছর খারাপ সময় পার করছে। গত বছর স্মার্টফোনের বাজারে প্রথমবারের মতো সরবরাহ প্রবৃদ্ধিতে ঘাটতি দেখা গেছে। চলতি বছর এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কিন্তু সামগ্রিকভাবে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারের প্রবৃদ্ধিতে ঘাটতি দেখা গেলেও টানা কয়েক বছরের মতো চলতি বছরও বিশ্বের উদীয়মান বাজারগুলোয় সরবরাহ প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকার আশা করা হচ্ছে। গত শুক্রবার বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্যই উঠে এসেছে। খবর বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈশ্বিক বাজারে যত সংখ্যক ইউনিট স্মার্টফোন সরবরাহ হচ্ছে, তার ৫৯ শতাংশই উন্নয়নশীল বা উদীয়মান বাজারগুলোয় যাচ্ছে। চীনের বাজার বাদ দিলে উন্নত বাজারগুলোয় মোট ডিভাইসের ৩২ শতাংশ সরবরাহ হয়।
কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের সহযোগী পরিচালক তরুণ পাঠক বলেন, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) চলতি বছরের জন্য উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে, যা উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর চেয়ে দ্রুতগতির। বিষয়টি বৈশ্বিক স্মার্টফোনের বাজারের জন্য ইতিবাচক।
কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের মার্কেট আউটলুক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালের তুলনায় চীন বাদে উন্নয়নশীল বাজারগুলোয় স্মার্টফোনের প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের বেশি হবে। অন্যান্য স্মার্টফোনের বাজারের চেয়ে উন্নয়নশীল দেশের বাজারে প্রবৃদ্ধি দ্রুত হবে। যেসব স্মার্টফোন নির্মাতা বাজার বাড়াতে চাইছে, তাদের জন্য এটি ইতিবাচক হতে পারে।
বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে ডিভাইস সরবরাহ প্রবৃদ্ধি কমার পেছনে বেশকিছু কারণ আছে। এর মধ্যে ব্র্যান্ডভেদে দামের পার্থক্য বড় একটি কারণ। এছাড়া স্মার্টফোনে নতুন প্রযুক্তি আশা করে গ্রাহক। কিন্তু সাম্প্রতিক সময় স্মার্টফোনকেন্দ্রিক উদ্ভাবন স্থবির হয়ে পড়েছে। এটিও বৈশ্বিক বাজারে সরবরাহ প্রবৃদ্ধি কমার অন্যতম কারণ।
বর্তমানে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোয় স্মার্টফোন বিক্রি ক্রমান্বয়ে কমছে। কারণ এসব বাজারের বেশির ভাগ মানুষের হাতে স্মার্টফোন ডিভাইস পৌঁছে গেছে। এছাড়া স্মার্টফোনকেন্দ্রিক নতুন উদ্ভাবন না থাকায় মানুষ এখন প্রতি বছর হালনাগাদ ডিভাইস কেনা বন্ধ করে দিয়েছে। অন্যদিকে চড়া দামের কারণে উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলোর মানুষের কাছে গুরুত্ব হারাচ্ছে স্মার্টফোন।
দৈনন্দিন নানা কার্যক্রম পরিচালনা ও অনলাইন কেনাকাটার পাশাপাশি সবকিছুতেই স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়ছে। প্রযুক্তির অনুষঙ্গ হিসেবে স্মার্টফোনের মতো জনপ্রিয় পণ্য খুব কমই দেখা যায়। এক দশকের বেশি সময় ধরে ইলেকট্রনিক ডিভাইস হিসেবে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল স্মার্টফোন। কিন্তু কয়েক বছরে সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হওয়ায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, তাহলে কি স্মার্টফোন বিরক্তিকর পণ্যের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে?
বিশ্লেষকদের ভাষ্যে একটা সময় ছিল ফিচার ফোনের, এরপর এসেছে স্মার্টফোনের যুগ। স্মার্টফোনের যুগ এখনো শেষ হয়ে যায়নি। স্মার্টফোন ডিভাইসকেন্দ্রিক উদ্ভাবন এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। ডিভাইসের পোর্টেবিলিটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। ডিভাইস কেনার ক্ষেত্রে গ্রাহকরা দেখছেন কনফিগারেশন কতটুকু শক্তিশালী। তারপর দেখছেন স্ক্রিন সাইজ কিংবা ক্যামেরা ফিচার কতটুকু উন্নত।
সব মিলিয়ে বাজেট আগেই নির্ধারণ করা থাকে এবং সে অনুযায়ী বিভিন্ন ব্র্যান্ডের হ্যান্ডসেটও মিলে যাচ্ছে। আগে খুব অল্প সময়ে স্মার্টফোন বদলানোর একটা প্রবণতা ছিল। এখন হ্যান্ডসেটের আয়ুষ্কাল বেড়েছে। ডিভাইস নির্মাতা নতুন হ্যান্ডসেটের মাধ্যমে উদ্ভাবনী ফিচার উন্মোচনে ব্যর্থ হচ্ছে। যে কারণে গ্রাহকরা সহজে হ্যান্ডসেট পরিবর্তন করছেন না।
বিশ্বের একাধিক বাজারে চলতি বছরই পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভজির বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হতে পারে। এটা হলে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যেতে পারে। অর্থাৎ ফাইভজি সমর্থিত স্মার্টফোনের চাহিদা কিছুটা বাড়বে। তবে স্মার্টফোন শিল্পকে অস্তিত্ব সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে এ বিক্রি প্রবৃদ্ধি কতটুকু সহায়ক হবে, তা নিশ্চিত নয়।