স্থিতিশীলতায় ফিরছে মসলার বাজার

স্টাফ রিপোর্টার

শবেবরাতের আগের দিনই অনেকটা আনুষ্ঠানিকভাবে রমজানের পণ্য বিকিকিনি শুরু হয়, যার প্রভাব পড়ে খুচরা বাজার থেকে শুরু করে পাড়ার দোকানেও। দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে দেশের সব ধরনের পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও অনেকটা স্থিতিশীলতায় ফিরেছে মসলার বাজার। গতকালও অনেকটা নিম্নমুখী ছিল এসব পণ্যের দাম।

উৎসব ঘিরে দেশে আদা, রসুন, পেঁয়াজের পর মসলার চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে শুকনো মরিচ, আস্ত হলুদ, সরিষা, ধনে, কালিজিরা, তেজপাতা ও মিষ্টি জিরা ছাড়া প্রায় সব ধরনের মসলাই আনতে হয় বিশ্ববাজার থেকে। সাম্প্রতিক সময়ে ডলার সংকট, এলসি (ঋণপত্র) খুলতে দীর্ঘসূত্রতায় আমদানীকৃত মসলার দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। তবে সর্বশেষ কয়েক দিন ধরে দু-একটি ছাড়া প্রায় সব ধরনের মসলার দামই নিম্নমুখী। কেবল জায়ফল, জয়ত্রি ও বাদামের দামই ঊর্ধ্বমুখী।

দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জিরার দাম একসময় কেজিপ্রতি ৬০০ টাকা পেরিয়ে গেলেও বর্তমানে কিছুটা কমে ৫৮০-৫৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে দারুচিনির দাম কেজিপ্রতি ৫-৭ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৩১৬ টাকায়, এলাচের দাম নিম্নমুখী অবস্থায় লেনদেন হচ্ছে কেজিপ্রতি ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৪৩০, লবঙ্গ কেজিপ্রতি ১ হাজার ৩৫০, গোলমরিচ ৬০০-৬১০, সরিষা (মানভেদে) ৯০-৯৫, ধনে কেজিপ্রতি ১০৭-১১২, কালিজিরা ২৩০-২৪০, আস্ত বাদাম ১৪৫-১৫০, আস্ত হলুদ ১১৬-১২০ ও তেজপাতা ৭০-৮০ টাকায়। অন্যদিকে মসলার মধ্যে জয়ত্রি কেজিপ্রতি ৫০-৭০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৯০০ টাকায়, জায়ফল কেজিপ্রতি ২০-৩০ টাকা বেড়ে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬৬০ টাকায়।

শুকনো ফলের দাম অবশ্য কিছুটা বাড়তি। পাইকারি পর্যায়ে কেজিপ্রতি কিশমিশ বিক্রি হচ্ছে ৩৮০-৪০০ টাকায়, কাঠবাদাম কেজিপ্রতি ৭১০-৭২০, পেস্তা ২ হাজার ৭০০ ও কাজুবাদাম ৯৪০-৯৫০ টাকায়। বাদামের দাম কেজিতে ১৫-২০ টাকা বেড়ে ১৭৫-১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

শুকনো খাবারের মধ্যে রমজান মাসে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় খেজুরও লেনদেন হচ্ছে বাড়তি দামে। আমদানীকৃত খেজুর মানভেদে কেজিপ্রতি ১২০-৮০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

খাতুনগঞ্জের চাক্তাই এলাকার মেসার্স নাজিম ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী মো. কাউসার আলম বলেন, ‘কয়েক মাস আগেও দেশে মসলার আমদানি কম ছিল। ওই সময় চাহিদার তুলনায় সরবরাহ না থাকায় দাম বেড়ে যায়। বর্তমানে সীমিত পরিসরে হলেও আমদানি শুরু হয়েছে। তাছাড়া মসলার মতো বিলাসী এ পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় বাজারে দাম সেভাবে আর বাড়ছে না। অন্যদিকে রোজা শুরুর দুই সপ্তাহ আগে বাজারে মসলার সরবরাহও বাড়িয়েছে ট্রেডিং প্রতিষ্ঠান ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা। ফলে কয়েক দিন ধরে মসলার বাজার নিম্নমুখী। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগের অবস্থানেই দাম ফিরে যেতে পারে বলে ধারণা করছি।’

মসলা ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে চাল, ডাল, ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন অতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় মসলার বাজারে চাহিদা কম। মানুষ এখন কেবল প্রধান প্রধান ভোগ্যপণ্য ক্রয় ও সংগ্রহ করছে। মসলার মতো দামি পণ্যের প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দেয়ায় অনেক ব্যবসায়ীই মজুদ মসলা বাজারে ছেড়ে দিচ্ছেন। আবার চলতি বছরের শুরুতে সরকার রমজান উপলক্ষে ভোগ্যপণ্য আমদানির এলসি খুলতে ব্যাংকগুলোকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়। এর পর থেকে ব্যবসায়ীরা বড় এলসি না খুললেও ছোট পরিসরে কয়েক দফায় পণ্য আমদানির উদ্যোগ নিয়েছেন। ফলে বর্তমানে মসলার সংকট কমায় বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে বলে আশা করছেন তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *