স্থবির হয়ে পড়েছে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ

বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। টানা কমে চলছে ঋণের প্রবৃদ্ধি। গত পাঁচ মাস ধরেই প্রবৃদ্ধিতে ঋণাত্মক ধারা। গত আগস্ট মাসে ঋণ প্রবাহ বেড়েছে ১৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ, যা গত ৩১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি বছর বেসরকারি ঋণ প্রবাহে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ফেব্রুয়ারি মাসে। ওই মাসে ঋণ বিতরণের পরিমাণ আগের মাসের চেয়ে ১৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ বেড়েছিল। তারপর থেকেই প্রবৃদ্ধির হার ক্রমাগত কমছে। মার্চ মাসে ঋণ বিতরণে প্রবৃদ্ধি হয় ১৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ। পরের মাসে তা কমে ১৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ হয়।

মে মাসে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার আরও কমে ১৭ দশমিক ৬০ শতাংশে নামে। জুন মাসে তা কমে দাঁড়ায় ১৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। জুলাই মাসে ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ৮৭ শতাংশে নেমে আসে। আগস্ট মাসে তা ১৫ শতাংশের নিচে নেমে যায়। প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

জুলাই ও আগস্ট মাসের ঋণ প্রবৃদ্ধি চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম। জুলাই-ডিসেম্বর’১৮ সময়ের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৬ দশমিক ৮০ শতাংশ।

মূলত তিনটি কারণে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধিতে ঋণাত্মক ধারা চলছে। প্রথমত নির্বাচনের বছরে ব্যাংকগুলোর ঋণে লাগাম টানতে গত জানুয়ারিতে ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) কমানো হয়। ওই সময়ে ২৭টি ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ সীমার বাইরে চলে যায়।

ফলে এ ব্যাংকগুলোকে ঋণ সমন্বয় করতে হচ্ছে। এদের পক্ষে নতুন ঋণ দেওয়া বেশ কঠিন। অন্যদিকে সীমার নিচে থাকা ব্যাংকগুলোও সতর্কতার সঙ্গে ঋণ বিতরণ করছে, যাতে তারা সীমার বাইরে চলে না যায়। দ্বিতীয়ত: ব্যাংকে আমানতের সুদের হার কমানোতে আমানতে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না। বরং কোনো কোনো ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ কমে গেছে।

এতে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে তারা সেভাবে ঋণ বিতরণ করতে পারছে না। তৃতীয়ত: সামনে জাতীয় নির্বাচনের কারণে অনেক উদ্যোক্তা ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করেছেন। তারা নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যালোচনা সাপেক্ষে নতুন বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে চান।

বিশ্লেষকরা ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধির ঋণাত্মক ধারাকে উদ্বেগজনক মনে করছেন। কারণ ঋণ প্রবাহ কমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে বিনিয়োগও কমে যাওয়া। ফলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির হারও কমে যাবে। জিডিপিতেও তা নেতিবাচ প্রভাব ফেলতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *