সৌদি আধিপত্যে ভাগ বসাতে পারে ইরাক
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বাণিজ্য আধিপত্যে সৌদি আরবের অবস্থান বেশ দৃঢ়। বিশেষ করে ওপেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে দেশটির অবস্থান শীর্ষে। তবে অদূর ভবিষ্যতে জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক বাণিজ্যে সৌদি রাজত্বে ভাগ বসাতে পারে ওপেকভুক্ত দেশ ইরাক। সম্প্রতি প্রকাশিত ইরাকের জ্বালানি তেল মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২৩ সাল নাগাদ ইরাক অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলনে সৌদি আরবের বর্তমান মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলবে।
পাশাপাশি কৌশলগত উন্নয়নে জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন খরচও কমিয়ে আনবে সৌদি আরবের সমানুপাতে। সেই হিসাবে ইরাকই একমাত্র ওপেকভুক্ত দেশ, যা বিশ্ব জ্বালানি তেলের বাজার দখলে সৌদি আরবকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে। খবর অয়েলপ্রাইসডটকম।
এ-যাবৎ বিশ্ব রাজনীতিতে আন্তর্জাতিক জ্বালানি তেল বাণিজ্য নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। এ ইস্যুতে মধ্যপ্রাচ্যের তিন দেশ—সৌদ আরব, ইরাক আর ইরান বরাবরই পরস্পরের প্রতিযোগী। এবার প্রতিযোগিতার আগুনে ঘি ঢালতে নতুন তথ্য প্রকাশ করেছে ইরাক। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটি ২০২৩ সাল নাগাদ অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলনে সৌদি আরবকে ছুঁয়ে ফেলবে। গত নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন, তখন তা সৌদি আরবের জন্য স্বস্তি বয়ে এনেছিল। এতে সৌদি আরবের জ্বালানি তেলের বাজার আরো প্রসারিত হবে বলে ধারণা করেন খাতসংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে খুশি হয়ে উঠেছে ইরাকও। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আগামী দিনগুলোয় জ্বালানি তেলের বাজারে অবস্থান পোক্ত করতে পরিকল্পনা করে মাঠে নেমেছে দেশটি।
ইরাক সম্প্রতি ওপেকের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন কমিয়ে আনার সিদ্ধান্তকে পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে দেশটিতে জ্বালানি তেল খাতে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ও বিদেশী ডেভেলপারদের জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন বাড়াতে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে। ইরাকে বর্তমানে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলনের পরিমাণ দৈনিক গড়ে ৪৬ লাখ ব্যারেল।
উত্তোলন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় দেশটি ২০২০ সালের শেষ নাগাদ অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন বাড়িয়ে দৈনিক গড়ে ৬২ লাখ ব্যারেলে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। ২০২৩ সাল নাগাদ পণ্যটির উত্তোলনের পরিমাণ আরো বাড়িয়ে দৈনিক গড়ে ৯০ লাখ ব্যারেলে নিয়ে যেতে পারে দেশটি, যা সৌদি আরবে বর্তমানে উত্তোলিত অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সমান। ইরাকের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলনের তিনটি প্রধান তেলকূপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এগুলো হচ্ছে রুমাইলা, ওয়েস্ট কুরনা ও ঘারাফ।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ইরাকের সবচেয়ে বড় তেলকূপ রুমাইলা থেকে ২০১৮ সালে দৈনিক গড়ে ১৪ লাখ ৬৭ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন হয়েছে, যা ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) মতে, কূপটি থেকে বহু বছর ধরে জ্বালানি তেল উত্তোলন করা হলেও এখনো ৫৫ শতাংশ মজুদ রয়ে গেছে, যা ৩ হাজার ৫০০ কোটি ব্যারেলের সমান।
এছাড়া কূপটি থেকে পণ্যটির উত্তোলন খরচ কমে প্রতি ব্যারেলে ২-৩ ডলার নেমে আসতে পারে, যা খরচের দিক থেকে সৌদি আরবের সমপরিমাণ। বিশ্বে জ্বালানি তেলের উত্তোলন খরচ হ্রাসে সৌদি আরব অন্য দেশগুলোর তুলনায় এগিয়ে রয়েছে।
৪ হাজার ৭০০ কোটি ব্যারেল ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ইরাকের অন্যতম বৃহত্তম অপরিশোধিত জ্বালানি তেলকূপ ওয়েস্ট কুরনা। সম্প্রতি এ কূপটি থেকেও জ্বালানি তেল উত্তোলন দৈনিক গড়ে ৪ লাখ ২০ হাজার ব্যারেল থেকে ৪ লাখ ৬৫ হাজার ব্যারেলে উন্নীত হয়েছে। আর ২০২০ সালের শেষ নাগাদ কূপটি পূর্ণ কার্যক্ষমতায় গেলে উত্তোলনের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে দৈনিক গড়ে ৪ লাখ ৯০ হাজার ব্যারেলে।
এদিকে লক্ষ্য পূরণে ঘারাফ থেকে জ্বালানি তেলের উত্তোলন বাড়াতে ইরাক কূপটির পরিচালনকারী প্রতিষ্ঠান জাপানের জেএপিইএক্স কোম্পানির ওপর ক্রমাগত চাপ দিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে কূপটি থেকে জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন দৈনিক গড়ে ২ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল থেকে বেড়ে নয় লাখ ব্যারেলে দাঁড়িয়েছে। জেএপিইএক্স জানিয়েছে, ২০২০ সালের মধ্যে উত্তোলন লক্ষ্য পূরণের জন্য তারা এরই মধ্যে ৪৬ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। আর এসব উদ্যোগই বৈশ্বিক জ্বালানি বাণিজ্যে বিদ্যমান প্রতিযোগিতায় সৌদি আরবের সমকক্ষ হতে ইরাককে এক ধাপ এগিয়ে রাখছে।