সৌদিতে খাবারের পাহাড়, ইয়েমেনে কঙ্কালসার শিশু

খাবারের বিশাল থালার চারপাশে মাত্র  দু’চারজন লোক। থালার মধ্যে বিরিয়ানির সঙ্গে আস্ত খাশি বা ছোটখাটো উট ভুনা রয়েছে, চারপাশে আছে হরেক রকম ফল। কোমল পানীয়ও রয়েছে কয়েক পদের।

এটি সৌদি আরবের যে কোনো পরিবারের ছোটোখাটো উৎসবে খাওয়ার চিত্র। স্বাভাবিকভাবে বাড়িতে যে খাবার খাওয়া হয় তাতেও পদের কোনো অভাব থাকে না।

অথচ তেলসমৃদ্ধ এই দেশটির প্রতিবেশী ইয়েমেনের চিত্রটি ঠিক এর বিপরীত। দেশটির প্রায় দেড় কোটি মানুষ খাদ্যাভাবে মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে। নিজেদের দোষে নয়, বরং সৌদি আরবের হামলার কারণেই ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তারা। মানবতার এই পরাজয় সৌদি শাসক তো দূরের কথা দেশটির পশ্চিমা মিত্রদের বিবেককেও নাড়া দেয় না।

২০১৮ সালে রিয়াদের পরিবেশ, পানি ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসেবে, বিশ্বে খাদ্য অপচয়ের দিক থেকে শীর্ষ স্থানে রয়েছে সৌদি আরব। বিশ্বের ৩০ শতাংশ খাদ্য অপচয় হয় দেশটিতে। বছরে এক সৌদি নাগরিক ২৫০ কেজি খাবার অপচয় করেন, আর্থিক বিচারে এর মূল্য দাঁড়ায় ১৩ দশমিক শূন্য সাত বিলিয়ন মার্কিন ডলার!

অনিয়ন্ত্রিত খাদ্য গ্রহণের কারণে সৌদি আরবের ৫৯ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ অতিরিক্ত ওজন সমস্যায় ভোগেন। এছাড়া ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ ডায়াবেটিকসে, ৪০ দশমিক ৫ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপ জনিত সমস্যায় ভোগেন।

ইয়েমেনের উত্তরের পুরোটা সীমান্তজুড়েই রয়েছে সৌদি আরব। সমধর্মাবলম্বীর দেশ হলেও প্রতিবেশীর প্রতি সৌদি আরবের আচরণ অত্যন্ত নিষ্ঠুর। পাঁচ বছর ধরে রিয়াদ দেশটিতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে স্রেফ রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের জন্য।

সৌদি হামলার কারণে ইয়েমেনের তিন কোটি বাসিন্দার মধ্যে খাদ্যাভাবে পড়েছে দুই কোটি ১ লাখ মানুষ। আর খাদ্যাভাবে মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছে এক কোটি ৪৪ লাখ মানুষ। বাস্তুচ্যুত হয়েছে ৩৬ লাখ ৫০ হাজার মানুষ।

বিশ্ব খাদ্য সংস্থার হিসেবে, খাদ্যভাবে প্রতিদিন ক্ষুধা নিয়ে সকালে ঘুম ভাঙ্গে ইয়েমেনের এক কোটি ৫৯ লাখ মানুষের।

ইউনিসেফের হিসেবে, দেশটির ১৮ থেকে ২৮ লাখ শিশু খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছে। এই শিশুরা রয়েছে প্রাণঘাতি অপুষ্টির ঝুঁকিতে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, সৌদি আরবের এক জন সাধারণ মানুষ যখন তৃষ্ণা মেটাতে কোমল পানীয়ের বোতলে চুমুক দেন, তখন নিরাপদ পানির অভাবে দিন পার করতে হয় ইয়েমেনের এক কোটি ৯৩ লাখ মানুষকে। নিরাপদ পানির অভাবে গত দুই বছরে দেশটির ১০ লাখ মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হয়েছে।

খাদ্য অপচয়ের মাধ্যমে বছরে যে পরিমাণ অর্থ স্রেফ নর্দমায় ঢালেন সৌদি নাগরিকরা তা দিয়ে ইয়েমেনের তিন কোটি মানুষের সারা বছরের খাদ্যের জোগান হয় অনায়সে। অবশ্য সৌদি শাসকদের এর দিকে তাকানোর সময় নেই। তাদের প্রতিই হয়তো  প্রেমেন্দ্র মিত্র প্রশ্ন ছুঁড়েছিলেন- ‘রাজপথে এই সব কচি কচি শিশুর কঙ্কাল–মাতৃস্তন্যহীন/

দধীচির হাড় ছিলো এর চেয়ে আরো কি কঠিন?’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *