সোনা আমদানির পথ খুলছে
বৈধভাবে সোনা আমদানির যুগ শুরু হতে যাচ্ছে। গত সপ্তাহে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড সোনার আমদানির পরিবেশক (ডিলার) লাইসেন্স পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করেছে। তার বাইরে কয়েকটি ব্যাংকও ডিলার লাইসেন্সের জন্য আবেদন করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১১ মার্চ সোনা আমদানির ডিলার নিয়োগের জন্য আবেদন আহ্বান করে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আগ্রহী প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক আবেদন করতে পারবে। সোনা ব্যবসায় সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত বছর স্বর্ণ নীতিমালা করে। সেই নীতিমালার আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক ডিলার লাইসেন্স দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোনা আমদানির পরিবেশক লাইসেন্সের জন্য ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড ১৮ আগস্ট বাংলাদেশের ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগে আবেদন করেছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ লাইসেন্স ফি বাবদ প্রতিষ্ঠানটি ৫ লাখ টাকা জমা দিয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, সিলেট ও মেহেরপুরের তিনজন সোনা ব্যবসায়ী বিভিন্ন ব্যাংকে আবেদন জমা দিয়েছেন। সেসব আবেদন বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষ হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা হবে।
ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের পরিবেশক লাইসেন্সের আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ডিলার লাইসেন্স দিলেই দেশে আন্তর্জাতিক দরে সোনা বেচাবিক্রি শুরু হবে। বর্তমানে বুলিয়ন মার্কেটের কাছে সোনা ব্যবসায়ীরা জিম্মি। তাই যত দ্রুত লাইসেন্স দেবে ততই মঙ্গল। তিনি বলেন, বর্তমানে বৈধভাবে সোনা আমদানির সুযোগ না থাকার কারণে লাইসেন্সপ্রাপ্তির প্রথম বছরে ২-৩ টন পর্যন্ত সোনা আমদানি হতে পারে।
এদিকে লাইসেন্স পেতে আবেদন করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে নতুন প্রজন্মের মধুমতি ব্যাংক। গতকাল ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিউল আজম বলেন, ‘আমরা সোনা আমদানির ডিলার হতে চাই। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা চলছে। শিগগির আবেদন করা হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, সোনা আমদানির ডিলার লাইসেন্সের জন্য আবেদনের সঙ্গে পাঁচ লাখ টাকার অফেরতযোগ্য পে-অর্ডারসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে। আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের ন্যূনতম মূলধন থাকতে হবে এক কোটি টাকা। সোনা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ভল্টের ব্যবস্থা ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে ৭৫০ বর্গফুটের কার্যালয় থাকতে হবে। সব ধরনের নিয়ম মেনে লাইসেন্স পাওয়ার পরও একটি প্রতিষ্ঠান ঠিকমতো দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে কোনো কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়াই লাইসেন্স বাতিল করতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জানতে চাইলে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, ‘লাইসেন্সপ্রাপ্তির পর পরিবেশকেরা বিভিন্ন সোনা ব্যবসায়ীর চাহিদাপত্র ও কাস্টমসের প্রত্যয়নপত্র অনুযায়ী সোনা আমদানি করবে। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীকে সোনার দামের ৫ শতাংশ অর্থ জামানত হিসেবে পরিবেশকের কাছে জমা দিতে হবে। আমদানির পর ব্যবসায়ীদের সোনা বুঝিয়ে দেবেন পরিবেশক।’
স্বর্ণ নীতিমালা অনুযায়ী, দেশে বছরে ২০-৪০ টন সোনা লাগে। যার বড় অংশ বিদেশফেরত বাংলাদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে, কিছুটা আমদানি করে ও পুরোনো সোনা গলিয়ে সংগ্রহ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা তাঁদের মজুত সোনার কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেন না। আবার জটিলতার কারণে ব্যবসায়ীরা সোনা আমদানি করেন না।
দেশে সোনার ব্যবসায় স্বচ্ছতা আনতে দীর্ঘদিন ধরে একটি নীতিমালা করার জন্য দাবি জানিয়ে আসছিলেন ব্যবসায়ীরা। তবে ২০১৭ সালে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনায় প্রধান আসামি আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে শাফাত আহমেদ গ্রেপ্তার হন। পরে দিলদার আহমেদের অবৈধ সম্পদ খুঁজতে আপন জুয়েলার্সের পাঁচটি বিক্রয়কেন্দ্রে অভিযান চালায় শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ। এ সময় বৈধ কাগজপত্র দেখাতে না পারায় সাড়ে ১৩ মণ সোনার অলংকার ও ৪২৭ গ্রাম ডায়মন্ড জব্দ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের জিম্মায় দেন গোয়েন্দারা। ওই ঘটনার পরই স্বর্ণ নীতিমালার বিষয়টি জোরেশোরে আলোচনায় আসে। পরে গত বছর নীতিমালা চূড়ান্ত করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
ডিলার লাইসেন্সের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, নিয়ম মেনে যেসব প্রতিষ্ঠানের আবেদন জমা হবে, তারাই লাইসেন্স পেতে পারে। সোনা আমদানিতে প্রতি পদে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে। তাই যেকোনো সময় লাইসেন্স বাতিলের সুযোগ আছে।