সুন্দরবনকে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় করতে উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে
জীবন ইসলাম, সুন্দরবন থেকে ফিরে
স্বাধীনতার ৫৪ বছর পাড় করলেও পর্যটন খাতের উন্নয়ন হয়নি। আইনী জটিলতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নেতিবাচক প্রচার এ খাতকে তলানিতে ফেলে রেখেছে।
বিশ্ববিখ্যাত কক্সবাজার সী বীচ, ৬ হাজার বর্গ কিলোমিটারের বেশি সুন্দরবন, মহাস্থান গড় ও তক্ষশিলা সহ অসংখ্য স্থান রয়েছে ভ্রমন পিপাসুদের মন জয় করার মত। ভ্রমনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ও আনন্দদায়ক করতে পারলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা এ খাত থেকে আয় করা সম্ভব।
দর্শনীয় এসব স্থান সম্পর্কে ভ্রমন পিপাসু মানুষদের আকৃষ্ট করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যদিও বিগত সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে ভ্রমন পিপাসুদের আকৃষ্ট করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।
আর্থিকভাবে দেউলিয়া ঘোষিত শ্রীলংকা পর্যটকদের আকর্ষণ করার মাধ্যমে আর্থিকভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। পর্যটকদের আগমন বাড়াতে পারলে বাংলাদেশও এ খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে।
পলিথিনমুক্ত সুন্দরবন নিঃসন্দ্রেহে ভ্রমনের জন্য আকর্ষণীয়; সুন্দরবনের ১৪ থেকে ১৫টি পয়ে্ন্টে পর্যটক নিরাপদে ভ্রমন করতে পারেন। এছাড়া আরো অনেক পয়েন্ট বা স্থান রয়েছে যেখানে ভ্রমন নিরাপদ মনে করা হয় না।
খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাঘেরহাট এই তিন জেলা জুড়ে সুন্দরবন; এখানে ভ্রমনের জন্য নিরাপদ স্পটগুলো হচ্ছে- করমজল, আন্দারমানিক, হাড়বারিয়া, পটকা, কচিখালী বা টাইগার পয়েন্ট, ডিমের চর, ধুবলার চর, হিরণ পয়েন্ট বা নীল কমল, তিন কোনা আইল্যান্ড বা কোকিলমনি, ঢোবেকী, নোটাবেকী, মান্দারবাড়িয়া, কালাবাগী এবং আলী বান্দা উল্লেখ যোগ্য।
সুন্দরবনে যাতাযাতের জন্য এসি লঞ্চ ভাড়া করে সুন্দরবন ঘোরার সুযোগ রয়েছে। আইনী জটিলতা দূর করে সরকারকে ইতিবাচক প্রচারের উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি মান-সম্পন্ন হোটেল এবং আরামদায়ক লঞ্চ ও স্টীমারের ব্যবস্থা করাসহ বিদেশীদের চাহিদা পূলন করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এ খাত বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম খাত হিসেবে চিহ্নিত হবে।
সারা বিশ্বে প্রতি বছর ১০০ কোটির উপরে লোক ভ্রমন করে। এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় ভ্রমন করে প্রায় ২০ কোটি লোক। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, থাইল্যাণ্ড এবং সিংগাপুর ভ্রমন করে পর্যটকরা। কিন্তু বিদেশী পর্যটক বাংলাদেশে নেই বললেই চলে।
বিদেশী পর্যটক বাংলাদেশে না আসার কারণ হচ্ছে- প্রাকৃতিক দুযোর্গ, বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচার, তার উপর রাজনৈতিক অস্থিরতা তো রয়েছেই। সুযোগ সুবিধার অভাব, ভালো মানের হোটেল বা রেস্তোরাঁ নেই। মান-সম্পন্ন খাবারের ব্যবস্থা নেই। পরিবহন ব্যবস্থার অপ্রতুলতা। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে- বাংলাদেশের পর্যটন খাত নিয়ে প্রচারের অভাব রয়েছে। তার উপর নিরাপত্তাজনিত সমস্যা তো আছেই।
Taufiq Rahman Chief Executive 0f Journey plus (জার্নি প্লাসের নির্বাহী পরিচালক তৌফিক রহমান) ডেইলী অবজারভারকে বলেন, দেশের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণ করার মত প্রচার করা হয় না। বিদেশী পর্যটক দেশে আসলেও নানা ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়। বিশেষ করে নিরাপত্তাজনিত সমস্যা, ভিসা প্রদান ও কাষ্টমস ডিউটি প্রদানে সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়। তিনি বলেন, সুন্দরবন ও কক্সবাজার নিয়ে সরকারিভাবে প্রচার করা হলে বিদেশী পর্যটক আকর্ষণ করা সম্ভব। এ খাত থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।
M Nazmul Azom David, Managing Director 0f Rupantar Eco tourism Ltd এবং সাধারণ সম্পাদক ট্যুর আপারেটর অসোসিয়েশন আব সুন্দরবন’র বলেন, বাংলাদেশে ভ্রমনের ব্যাপারে বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশী এ্যাম্বাসীগুলোতে রেড এলার্ট দিয়ে রেখেছে। যেকারণে বিদেশী পর্যটক আসে না। তিনি বলেন, দুই চারজন বিদেশী পর্যটক যাও আসে- তাদের পরিচালনা করার মত ভালো গাইড নেই। বিদেশীদের খাবার উপযোগী করে রান্না করার ব্যবস্থা নেই। তারা যেমানের খাবার খায়- সেই মানের খাবার তৈরি করার মত রাধুনী নেই। কারণ দেশের রাধুনীরা অধিক মসলা ও তৈল ব্যবহার করে। যা বিদেশীরা পছন্দ করে না।
তিনি আরো বলেন, বিদেশী পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সরকারি-বেসরকারি উভয় দিকে থেকে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। এ্যাম্বাসী থেকে রেড এলার্ট তুলতে হবে। পাশাপাশি ইতিবাচক প্রচারের ব্যবস্থা করা সহ নিরাপত্তা দিতে পারলে- এক সময় না এক সময় পর্যটক আসবেই।