সুদহার হার এক অংকে নামাতে হবে

সব ব্যাংকের ঋণের সুদহার এক অংকে নামিয়ে আনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা দুই মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। জাতীয় সংসদ ভবনে গতকাল অনুষ্ঠিত কমিটির এক বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংককে বিষয়টি তদারক করে সংসদীয় কমিটিকে জানানোর জন্য বলা হয়।

সরকারি প্রতিষ্ঠান-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, মাহবুব-উল আলম হানিফ, মির্জা আজম ও মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম অংশ নেন। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির চেয়ারম্যান ও বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএবির চেয়ারম্যানকেও বৈঠকে অংশ নেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু তারা অংশ না নেয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সংসদীয় কমিটির সদস্যরা।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ২০ জুন সরকারের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে বিএবি ঘোষণা দিয়েছিল, ওই বছরের ১ জুলাই থেকে আমানত ও ঋণের সুদহার হবে যথাক্রমে ৬ ও ৯ শতাংশ। এর পরের দিনই সরকারি ব্যাংকগুলো একযোগে বিজ্ঞাপন দিয়ে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ঘোষণা দেয়। যদিও সব বেসরকারি ব্যাংক এখনো এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেনি।

সরকারি প্রতিষ্ঠান-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজ এ বিষয়ে বলেন, বেসরকারি ব্যাংকগুলো বলেছিল, সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ পেলে তারা ঋণের সুদহার এক অংকে নামিয়ে আনতে পারবে। তারা সে সুবিধা গ্রহণ করলেও দুঃখের বিষয় এখনো সুদের হার এক অংকে আনতে পারেনি। ব্যাংকঋণের সুদহার এক অংকে নামিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তবে সেটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বিলম্ব হচ্ছে। কমিটি দুই মাস সময় বেঁধে দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে বলেছে, এ সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে, এজন্য যাতে আবার তাদের ডাকতে না হয়। আ স ম ফিরোজ বলেন, কমিটি সুপারিশ করেছে, আগামী এক বা দুই মাসের মধ্যে সব ব্যাংককে ৯ শতাংশ হারে সুদ নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়া সুদহার নগরের চেয়ে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমানো যায় কিনা, সেটাও দেখতে বলা হয়েছে।

বৈঠকে বিএবি প্রতিনিধির অংশ না নেয়ার বিষয়ে আ স ম ফিরোজ বলেন, সংগঠনটির কোনো প্রতিনিধি বৈঠকে আসেননি। তারা জানিয়েছিল তারা ‘অন দ্য ওয়ে’। বেলা ১১টা থেকে প্রায় ২টা পর্যন্ত বৈঠক হয়েছে, কিন্তু তাদের কেউ বৈঠকে যোগ দেননি। হয়তো কেউ রওনা হয়েছিলেন, মাঝপথে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে।

সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বৈঠকে জানানো হয়, এ পর্যন্ত পোশাক শিল্পের ২৭৯টি ও পোশাক বহির্ভূত শিল্প খাতের ৪১১টি প্রতিষ্ঠানকে রুগ্ণ শিল্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৪২৬টি রুগ্ণ শিল্পের (পোশাক বহির্ভূত) জন্য সুদ ও ভর্তুকিসহ নমনীয় পরিশোধসূচিতে ঋণ হিসাব অবসায়নে বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে।

এ প্যাকেজের আওতায় অধিকাংশ ঋণ হিসাব নিষ্পত্তি করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে সরকার নীতিমালা জারি করেছে। এর ফলে অনেক রুগ্ণ শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং বন্ধ ও অচল মিল-কারখানা সুদ মওকুফ সুবিধা পেয়েছে। এতে এসব প্রতিষ্ঠানের অবশিষ্ট অনাদায়ী-শ্রেণীকৃত ঋণ আদায় সহজ হয়েছে।

বৈঠকে আরো উল্লেখ করা হয়, ব্যাংকগুলো ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) মাধ্যমে খেলাপি গ্রাহকের তথ্য নিজেদের মধ্যে আদান-প্রদান করতে পারছে। ফলে এক ব্যাংকের খেলাপি গ্রাহক অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করতে পারছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *