সিলেটে এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের বাজারে অস্থিরতা
ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ২০০-২৫০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত নিচ্ছেন বিক্রেতারা। সিলেটে রীতিমতো নৈরাজ্য চলছে। ১২ কেজি গ্যাসের একটি সিলিন্ডার ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সম্প্রতি ১২ কেজির সিলিন্ডারের দর ৭৬ টাকা কমিয়েছে সরকার। কিন্তু আগের দামের চেয়েও অতিরিক্ত মূল্যে এলপিজি কিনতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ।
গতকাল নগরীর বিভিন্ন এলাকার গ্যাসবিক্রেতা ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। সরেজমিনে, প্রতি মাসে এলপিজির দাম নির্ধারণ করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। মার্চে ১২ কেজির সিলিন্ডারের দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪২২ টাকা, যা ফেব্রুয়ারিতে ছিল ১ হাজার ৪৯৮ টাকা। ঘোষিত নতুন দর গত বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) সন্ধ্যা থেকে কার্যকর হয়েছে। এর আগে ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম গত মাসে এক লাফে ২৬৬ টাকা বাড়ানো হয়েছিল।
বিভিন্ন এলাকার গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান ঘুরে দেখা যায়, সরকার দাম কমালেও বিক্রেতারা সেটি মানছেন না। তারা পূর্ব নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি দামে সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি করছেন। আবার কিছু বিক্রেতা দাম কমানোর নোটিস জারির পর থেকে সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। তাদের দাবি সিলিন্ডার গ্যাস বেশি দামে কেনা।
নগরীর আম্বরখানা সেবা চুলা ঘরের স্বত্বাধিকারী এ এইচ এম আরিফ বলেন, ‘পাইকারি কিনতেই সিলিন্ডারের দাম পড়ে ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। খুচরা বিক্রেতারা ১ হাজার ৫৫০ টাকায় বিক্রি করেন। এর নিচে সিলিন্ডার বিক্রি করলে খুচরা ব্যবসায়ীদের কোনো লাভ হবে না।’
তিনি বলেন, ‘একজন খুচরা বিক্রেতা দিনে ৪-৫টি সিলিন্ডার বিক্রি করেন। ১ হাজার ৫০০ টাকা বিনিয়োগ করে একজন খুচরা বিক্রেতা একটা সিলিন্ডার বিক্রি করেন ৫০ টাকা লাভ করবেন এটা স্বাভাবিক। অন্যথায় খুচরা বিক্রেতাদের সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি করা বন্ধ করা ছাড়া উপায় নেই।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মদিনা মার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী বলেন, ‘১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডার ১ হাজার ৬০০ টাকায় এবং প্লাস্টিকের তৈরি সিলিন্ডার ১ হাজার ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৩৫ কেজি ওজনের সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া হোম সার্ভিস চালু রাখা হয়েছে। এজন্য অতিরিক্ত ৫০ থেকে ১০০ টাকা নেয়া হয়।’
নগরীর কুমারগাঁও এলাকার বাসিন্দা সাইদুর রহমান বলেন, ‘ছয়জনের পরিবারে মাসে ১২ কেজি সিলিন্ডার লাগে দেড়টা। গত মাসেও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে সিলিন্ডার কিনতে হয়েছে। বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সব দোকানে কার্যকর। আবার সরকার যখন দাম কমিয়েছে তখন দোকানদাররা বলছেন আগের দামে কেনা। তাই বেশি দামে বিক্রি করছি।’ তিনি বলেন, ‘সাধারণ জনগণই যেন তাদের কাছে জিম্মি।’
সিলেটের সিলিন্ডার গ্যাসের অন্যতম বড় ডিলার মেসার্স কামাল এন্টারপ্রাইজের পরিচালক কামাল আহমদ বলেন, ‘দাম কমার পর থেকে আমরা ১২ কেজির সিলিন্ডার গ্যাস ১ হাজার ৪১০ থেকে ১ হাজার ৪২০ টাকায় বিক্রি করছি। কেউ আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে নিলে ১ হাজার ৪০০ টাকা আর আমরা পৌঁছে দিলে ১ হাজার ৪২০ টাকা রাখছি। তবে বেক্সিমকো ও বসুন্ধরার ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম পাইকারি বাজারেও বেশি রাখা হচ্ছে। ফলে প্রতি সিলিন্ডার আমাদের ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘খুচরা বাজারে মনিটরিং প্রয়োজন।’
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, ‘নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয়। গ্যাস সিলিন্ডারের দাম কমেছে। বাজারে সেই দামে বিক্রি হচ্ছে না বলে অভিযোগ এসেছে।’ শিগগিরই অভিযান শুরু হবে বলে জানান তিনি।