সিটির ঘরে চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা
রবিন গোজেন্সের হেডটা ঠেকিয়ে ম্যানচেস্টার সিটির গোল রক্ষক এডারসন শুধুমাত্র নিজের জাল অক্ষত রাখেননি বরং দলের বহু বছরের অধরা স্বপ্ন জিইয়ে রেখেছিলেন।
ইস্তাম্বুল স্টেডিয়ামে ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ের খেলা চলছিল। রেফারি শেষ বাঁশি দেওয়ার অপেক্ষায়। ওই সময়ে কর্ণার কিক থেকে পাওয়া বল ঠিকঠাক জালের নিশানা করেছিলেন ইন্টার মিলানের গোজেন্স। কিন্তু প্রহরী এডারসন বল ঠেকিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে ম্যানচেস্টার সিটির ১-০ গোলে জয় নিশ্চিত করেন।
ইতিহাসের অক্ষয় কালিতে লিখা হয়ে যায় তার নাম। কেননা ঐতিহ্যবাহী ইংলিশ ক্লাবটির প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা এনে দেওয়ার অন্যতম কৃতিত্ব তো তারও। আর এই শিরোপায় তাদের জেতা হয়ে যায় ট্রেবল।
চলতি মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপের পর তারা জিতলো চ্যাম্পিয়নস লিগ। তাতে ১৯৯৯ সালে ম্যানইউর পর প্রথম ইংলিশ ক্লাব হিসেবে ট্রেবল জয়ের কীর্তি গড়লো পেপ গার্দিওলার শিষ্যরা।
ম্যাড়ম্যাড়ে গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধে রদ্রির গোলে এগিয়ে যায় ম্যানচেস্টার সিটি। তার দূরপাল্লার শটে ভেঙে যায় ইন্টার মিলানের নিশ্চিদ্র রক্ষণ। ৬৮ মিনিটে রদ্রির করা একমাত্র গোলের ব্যবধানেই প্রথমবারের মতো ইউরোপ সেরার মুকুট মাথায় তুলল ম্যানচেস্টারের ক্লাবটি।
ম্যাচের প্রথমার্ধে দুই দলের খেলোয়াড়রা বল দখলের লড়াইয়ে ব্যস্ত ছিল। সিটি দুয়েকটি আক্রমণের সুযোগ তৈরি করলেও ফিনিশিং করতে পারেননি। আর ইন্টার ঢুকতে পারেননি ডি বক্সের ভেতরেও। ফলে শুরুর ৪৫ মিনিটের লড়াইয়ে তেমন উত্তেজনা তৈরি হয়নি। প্লেসিং ফুটবলে সিটির নিয়ন্ত্রণ থাকলেও ইন্টার ছিল এলোমেলো। ভুল পাস, লক্ষ্যভ্রষ্ট সব শটে বারবার বল হারাচ্ছিলেন তারা।
প্রথমার্ধে ডি ব্রুইনাকে হারিয়ে ম্যানসিটি বড় ধাক্কা খায়। চোট নিয়ে ৩০ মিনিটে মাঠ ছাড়েন। ২০২১ সালে চেলসির বিপক্ষে ফাইনালেও ডি ব্রুইনা মাঠ থেকে উঠে যান। সেবার ১-০ হেরেছিল ম্যানসিটি। এবার অবশ্য সেই কষ্ট পেতে হয়নি বেলজিয়ামের সুপারস্টারকে।
বিরতির পর ইন্টার এগিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় সুযোগটি পেয়েছিল। কিন্তু ফাঁকায় গোলরক্ষক এডারসনকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি ইন্টারের ফরোয়ার্ড লাউতারো মার্তিনেজ। উল্টো দশ মিনিটের ব্যবধানে সিটি গোল করে এগিয়ে যায়। ডি বক্সের বাইরে থেকে রদ্রি দৌড়ে এসে জোরালো শটে ইন্টারের দুই ডিফেন্ডারের পাশ দিয়ে বল জালে পাঠান।
গোল হজমের পর ইন্টারের খেলার গতি বেড়ে যায়। পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে দুইটি সুযোগ তৈরি করে তারা। কিন্তু রোমেলু লুকাকো দুটি সুযোগ হাতছাড়া করেন। ৮৮ মিনিটে তার হেড ফিরিয়ে দেন সিটির রক্ষণ বাঁচান এডারসন। এবং শেষ মুহূর্তে আরেকটি সেভে এডারসন হয়ে উঠেন সিটির জয়ের অন্যতম নায়ক। তার দুর্দান্ত গোল কিপিংয়ে শেষ হাসি নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারে সিটি।
শেষ বাঁশি বাজতেই ইস্তাম্বুলের স্টেডিয়ামে আকাশি নীল উৎসব। আনন্দের কেন্দ্র বিন্দুতে ছিলেন কোচ গার্দিওলা। তার অধীনে শেষ ছয় বছরে ইংলিশ ফুটবলে একক আধিপত্য বিস্তার করেছে সিটি। পাঁচবার লিগ শিরোপা জয়ের পর এবার অধরা চ্যাম্পিয়নস লিগও জিতল তারা। এছাড়া প্রথম কোচ হিসেবে দুটি ক্লাবে ট্রেবল জিতলেন তিনি। ২০০৯ সালে বার্সেলোনার হয়ে এই কীর্তি গড়েছিলেন।