সিঙ্গাপুরে ঝুঁকছে চীনা ধনীরা

স্টাফ রিপোর্টার

করবান্ধব ও রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল হওয়ায় অতিধনীদের সবচেয়ে পছন্দের গন্তব্য সিঙ্গাপুর। ২০২১ সালের পর থেকে দেশটিতে সম্পদের অন্তঃপ্রবাহ বেড়েছে। সে সময় সিঙ্গাপুরই প্রথম এশিয়ান শহর হিসেবে কভিড-১৯ মহামারীর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিল। এছাড়া দেশটিতে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে যে কঠোর বিধিনিষেধ ছিল তা দেশটির অনেক অতিধনী বাসিন্দাদের মোহ ভেঙে দেয়। এর পরই পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। খবর রয়টার্স।

ঠিক যেমনটা ঘটেছিল চীনের গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী জাইন ঝ্যাংয়ের সঙ্গে। অন্য অনেক ধনী চীনাদের মতো তিনিও ভেবেছিলেন সিঙ্গাপুরই হতে পারে পারিবারিক সম্পদ রাখার সবচেয়ে আদর্শ জায়গা। এশিয়ার এ অর্থনৈতিক কেন্দ্রের কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে পারলেই সেখানে তিনি স্থায়ীভাবে বাসিন্দা হতে পারবেন। ফলে ২৬ বছর বয়সী এ তরুণের লেখা বই যখন পরিচিতি পেল, দেখা গেল তার স্ত্রী ৫০-৭০ লাখ সিঙ্গাপুর ডলারে একটি পেন্টহাউজ খুঁজছেন।

গত বছরের শেষে আয়োজিত বিজনেস অ্যান্ড ফিলানথ্রপি ফোরামে উপস্থিত হয়ে ঝ্যাং বলেন, ‘‌সত্যি বলতে সিঙ্গাপুর খুব দারুণ। দেশটি খুবই স্থিতিশীল এবং এখানে বিনিয়োগের অনেক সুযোগ সুবিধা রয়েছে।’ তার পরিবার ভবিষ্যতে তাদের সম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য সিঙ্গাপুরে একটি পারিবারিক অফিস স্থাপন করতে পারে বলেও মন্তব্য তার।

সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে পারিবারিক সম্পদ ও টেকসই বিনিয়োগ নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনায় উপস্থিত হয়েও অনেক চীনা নাগরিক জানান, তারা সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে স্থানান্তরিত হয়েছেন বা হওয়ার কথা ভাবছেন। ২০২১ সালে হংকংয়ের নাগরিকত্ব পান ঝ্যাং, চীনের প্রতি বিতৃষ্ণ হয়েই এখন সিঙ্গাপুরের কথা ভাবছেন তিনি। হংকং ও চীনের মূলভূমির মধ্যে যাতায়াতের সময় দীর্ঘদীন ধরে চলা কোয়ারেন্টিনে আমরা ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছি। হংকংয়ের রাজনৈতিক অস্থিরতাও মন ভেঙে দিচ্ছে।

ঝ্যাংয়ের মতো করে সিঙ্গাপুরে পারিবারিক কেন্দ্র তৈরির বিষয়টি আগের তুলনায় বেড়েছে। এসব পারিবারিক অফিস থেকেই অতিধনীদের বিনিয়োগ, কর প্রদান, সম্পদ হস্তান্তর ও অন্যান্য অর্থনৈতিক বিষয়াদি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ২০২১ সালে যেখানে এমন অফিসের সংখ্যা ৪০০ ছিল, ২০২১ সালে তা বেড়ে ৭০০ তে দাঁড়িয়েছে। সিঙ্গাপুরে এখন যেসব পারিবারিক অফিস রয়েছে, তাদের মধ্যে উল্লেখ করা যায় ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের জন্য বিখ্যাত ব্রিটিশ জেমস ডাইসন, হেজ ফান্ডের ম্যানেজার রে ডালিও ও চীনের হাইডিলাও হটপট রেস্টুরেন্ট চেইনের প্রতিষ্ঠাতা ঝ্যাং ইয়ংয়ের নাম।

যদিও এ বিষয়ে সাম্প্রতিক কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। তবে এ খাতসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০২২ সালে পারিবারিক অফিসের প্রতি সবার আগ্রহ আরো বেড়েছে। চলতি বছরও তা বাড়তির দিকেই থাকবে। এমনকি চীন এখন তাদের শূন্য কভিড নীতি তুলে নিলেও সে ধারায় কোনো পরিবর্তন আসবে না। তিনি জানান, ২০২২ সালের শেষদিকে প্রতি সপ্তাহে অন্তত একজনের কাছ থেকে তিনি কোনো না কোনো প্রশ্ন পেয়েছেন, যারা সিঙ্গাপুরে অন্তত ২ কোটি ডলার রাখতে চেয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাওয়ার সংখ্যাটা ২০২১ সালের তুলনায় অনেক বেশি। আর চলতি বছরের জানুয়ারিতে তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়ার সংখ্যা বেড়ে সপ্তাহে অন্তত দুজনে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্বব্যাপী অতিধনী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য সিঙ্গাপুরের সরকার নতুন প্রোগ্রাম ঘোষণা করেছে। এর অধীনে ২৫ লাখ সিঙ্গাপুর ডলার বিনিয়োগ করলেই স্থায়ী নাগরিকত্বের আবেদন করার সুযোগ মিলবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *