সিঙ্গাপুরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এক দশকের সর্বোচ্চে

স্টাফ রিপোর্টার

সদ্যবিদায়ী বছরের শেষ প্রান্তিকটি (অক্টোবর-ডিসেম্বর) সিঙ্গাপুরের জন্য বেশ আশাপ্রদ ছিল। কভিড-১৯ মহামারীর নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বজুড়ে শঙ্কা বাড়লেও বিধিনিষেধ শিথিল করে সিঙ্গাপুর সরকার। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, টিকাদান কার্যক্রমের হার বাড়ায় বিধিনিষেধ শিথিল করা হয় দেশটিতে। ফলে চতুর্থ প্রান্তিকে গতি ফেরে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে। এতে গত বছর এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধির দেখা পায় দেশটি। খবর ব্যাংকক পোস্ট।

সিঙ্গাপুরের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০২১ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের তুলনায় শেষ প্রান্তিকে মৌসুমভিত্তিক জিডিপি ২ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। মন্ত্রণালয়ের এ তথ্য অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাসকেও ছাড়িয়ে গেছে। সমীক্ষায় ২ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল।

তথ্যানুযায়ী, বিদায়ী বছরে সিঙ্গাপুরের জিডিপি ৭ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। অর্থনীতিবিদরা ৭ দশমিক ১ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। এ প্রবৃদ্ধির গতি ২০১০ সালের পর সর্বোচ্চ। কভিডজনিত কারণে ২০২০ সালে দেশটির অর্থনীতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশ সংকুচিত হয়েছিল। গত নভেম্বরে সিঙ্গাপুরের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শেষ প্রান্তিকে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ঊর্ধ্বগতির কারণেই দেশটির জিডিপি রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে।

এ বিষয়ে সিঙ্গাপুরভিত্তিক ডিবিএস ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ইরভিন সিয়াহ বলেন, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের বিষয়ে সিঙ্গাপুর শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে বিশেষভাবে অবদান রেখেছে উৎপাদন ও পরিষেবা খাত। তিনি আরো বলেন, টিকাদান কার্যক্রমের হার বাড়ায় বিধিনিষেধ শিথিল করে সিঙ্গাপুর সরকার। ফলে দেশটির অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত হয়।

এদিকে বিদায়ী বছরে ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাবের কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমেছে চীনে। বাণিজ্যিক লেনদেনে সিঙ্গাপুরের সবচেয়ে নিবিড় সম্পর্ক চীনের সঙ্গে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চীনের প্রবৃদ্ধি কমলেও সিঙ্গাপুরের অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার।

গত শুক্রবার নতুন বছরের শুভেচ্ছা ভাষণে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং বলেন, ওমিক্রনের প্রকোপ প্রতিরোধের বিষয়ে সরকার আশাবাদী। বিধিনিষেধ শিথিল করার বিষয়ে তাই বদ্ধপরিকর দেশটি। তিনি জানান, চলতি বছরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৩ থেকে ৫ শতাংশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ সময় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পূর্বাভাসের কথা জানান লি সিয়েন।

এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক আর্থিক পরিষেবা সংস্থা বার্কলে পিএলসির অর্থনীতিবিদ ব্রায়ান ট্যান এক গবেষণায় উল্লেখ করেন, মহামারীর নতুন ঢেউ এলেও তার জন্য প্রস্তুত সিঙ্গাপুর। টিকাদানের হার বাড়লে কঠোর বিধিনিষেধের প্রয়োজন হবে না। পূর্বাভাস বলছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশকে ছাড়িয়ে যাবে সিঙ্গাপুর। যদিও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে পিছিয়ে আছে উত্তর এশিয়া।

বার্কলে পিএলসি ও গোল্ডম্যান স্যাকস গ্রুপের বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, সিঙ্গাপুরে ভোক্তা মূল্যসূচক বেড়েছে। এ কারণে শক্তিশালী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা দেখছে দেশটি। এ অবস্থায় পূর্বাভাস বাড়াতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনিটারি অথরিটি অব সিঙ্গাপুর। চলতি বছর এপ্রিলে মুদ্রানীতি কঠোর করার সম্ভাবনা রয়েছে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।

এদিকে সিঙ্গাপুরের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত বছর চতুর্থ প্রান্তিকে ২০২০ সালে একই সময়ের তুলনায় অর্থনীতি ৫ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে। অর্থনীতিবিদরা ৫ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *