সর্বোচ্চ অবস্থানে ব্রেন্টের দাম

ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের সময় ঘনিয়ে আসায় ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছে জ্বালানি তেলের বাজার। গতকাল ব্রেন্টের দাম বেড়ে প্রায় চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছে যায়। এদিকে জাতীয় আয় বাড়াতে জ্বালানি তেলের রফতানি বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে ইরাক। দেশটি ২০১৯ সালের মধ্যে লাইট ক্রুড নামের নতুন ধরনের জ্বালানি তেলের রফতানি দৈনিক ১০ লাখ ব্যারেলে উন্নীত করতে চায়। খবর রয়টার্স।

ভবিষ্যৎ চুক্তির বাজারে ব্রেন্টের দাম বেড়েছে দশমিক ৬ শতাংশ। এদিন পণ্যটির দাম ব্যারেলপ্রতি ৪৮ সেন্ট বেড়ে ৮৩ দশমিক ২১ ডলারে লেনদেন হয়। লেনদেনের একপর্যায়ে পণ্যটির দাম ৮৩ দশমিক ২৭ ডলারে পৌঁছে যায়, যা চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দামের রেকর্ড। ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম বেড়েছে দশমিক ৪ শতাংশ। এদিন পণ্যটির দাম ব্যারেলপ্রতি ৩২ সেন্ট বেড়ে ৭৩ দশমিক ৫৭ ডলারে লেনদেন হয়।

যুক্তরাষ্ট্রে সক্রিয় তেলকূপের সংখ্যা না বাড়ার খবরে মূলত ডব্লিউটিআইয়ের দাম বেড়েছে। সক্রিয় তেলকূপের সংখ্যা না বাড়ার মানে হলো, দেশটিতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উৎপাদন শ্লথ হয়ে আসছে। জ্বালানি তেলের বাজার দখলে দেশটিকে অন্যতম শীর্ষ দুই উৎপাদক সৌদি আরব ও রাশিয়ার মোকাবেলা করতে হচ্ছে।

আগামী ৪ নভেম্বর ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। ইরান ওপেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় শীর্ষ জ্বালানি তেল উৎপাদক। এরই মধ্যে জ্বালানি তেলের বাজারে এ নিষেধাজ্ঞার আগাম প্রভাব স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সৌদি বাদশাহ সালমানের সঙ্গে আলোচনায় নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের পর জ্বালানি তেলের পর্যাপ্ত সরবরাহ অক্ষুণ্ন রাখার বিষয়ে আলোচনা করেন।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান সিনোপেক জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি চলতি মাসে ইরানি তেল সংগ্রহ কমিয়ে আনবে। চীন ইরানি জ্বালানি তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা।

এমিরেটস এনবিডি ব্যাংকের পণ্যবাজার বিশেষজ্ঞ এডওয়ার্ড বেল বলেন, যদি চীনা পরিশোধনকারীরা মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মেনে চলে, তবে বাজারের ভারসাম্য আরো আগ্রাসীভাবে আঁটসাঁট হয়ে উঠবে।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান ওয়ান্ডার এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ট্রেডিং বিভাগের প্রধান স্টিফেন ইনেস বলেন, ওপেকের পক্ষ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সরবরাহের প্রস্তাব দেয়ার আগ পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা দামের সীমা আরো বাড়ানোর চেষ্টা করে যাবেন। তিনি বলেন, ট্রাম্পের ইচ্ছা অনুযায়ী সৌদি আরব সরবরাহ বাড়াতে চাইলেও তাদের কতটুকু সক্ষমতা অবশিষ্ট আছে?

তিনি আরো বলেন, ৪ নভেম্বর থেকে বাজারে দৈনিক প্রায় ১৫ লাখ ব্যারেল ইরানি তেলের সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়লেই তা আমাদের কাছে ধরা পড়বে। বাজারে যদি এমন ধারণা তৈরি হয় যে, সৌদি আরবের সক্ষমতা দৈনিক ১ কোটি ৫ লাখ ব্যারেলে সীমাবদ্ধ, তাহলে জ্বালানি তেলের দাম আরো দ্রুতগতিতে বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলারে পৌঁছে যাবে।

এদিকে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় ইরানের প্রতিবেশী ইরাক জ্বালানি তেলের সরবরাহ বাড়িয়ে দিয়েছে। গত রোববার দেশটির তেলমন্ত্রী জাবের আল লুয়াইবি জানান, তার দেশ ২০১৯ সালের মধ্যে লাইট ক্রুডের রফতানি দৈনিক ১০ লাখ ব্যারেলে উন্নীত করতে চায়। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, লাইট, মিডিয়াম ও হেভি— এ তিন গ্রেডের জ্বালানি তেল উৎপাদনের মাধ্যমে বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের বাজারে ইরাকের অবস্থান শক্তিশালী হবে।

মান নিয়ে ঝামেলা নিরসনে ইরাক ২০১৫ সালে দেশটিতে উৎপাদিত জ্বালানি তেলকে দুভাবে ভাগ করে। এগুলো হলো বসরা হেভি ও বসরা লাইট। তবে নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বসরা লাইটকে বসরা মিডিয়াম নাম দেয়া হয়েছে।

ইরাক ওপেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় শীর্ষ জ্বালানি তেল উৎপাদক। দেশটি দৈনিক ৪৬ লাখ ব্যারেল হারে জ্বালানি তেল উত্তোলন করে। এর বড় অংশই এশিয়ার দেশগুলোতে রফতানি হয়। ইরাকের বেশির ভাগ জ্বালানি তেল দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত টার্মিনালের মাধ্যমে রফতানি হয়। গত আগস্টে দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দরগুলোর মাধ্যমে ইরাক দৈনিক ৩৫ লাখ ৮৩ হাজার ব্যারেল জ্বালানি তেল রফতানি করেছে। ২০২২ সালের মধ্যে দেশটি জ্বালানি তেল উৎপাদনের সক্ষমতা দৈনিক ৭০ লাখ ব্যারেলে উন্নীত করতে চায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *