সর্বোচ্চে জ্বালানি তেল আমদানি ভারতের
ভারতের অর্থনীতির পরিধি দ্রুত বাড়ছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশটিতে বাড়তে শুরু করেছে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা। অভ্যন্তরীণ চাহিদার সিংহভাগই আমদানি করা জ্বালানি তেল দিয়ে পূরণ করে দেশটি। এ কারণে যত দিন যাচ্ছে, ভারতের পরিশোধন কেন্দ্রগুলোয় জ্বালানি তেল আমদানি ততই বাড়ছে।
চাঙ্গাভাবের ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের অক্টোবরে দেশটিতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি আগের তুলনায় বেড়ে গত সাত বছরের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। খবর রয়টার্স ও বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
দেশের বাজারে জ্বালানি পণ্যের আমদানি-রফতানি নিয়ে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পেট্রোলিয়াম প্ল্যানিং অ্যান্ড অ্যানালাইসিস সেল (পিপিএসি)।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের অক্টোবরে ভারতের পরিশোধন কেন্দ্রগুলো আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সবমিলিয়ে ২ কোটি ১০ লাখ ২০ হাজার টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।
২০১১ সালের এপ্রিলের পর এটাই ভারতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির সর্বোচ্চ মাসভিত্তিক পরিমাণ। এ সময় আফ্রিকার দেশগুলো থেকে ভারতের বাজারে জ্বালানি পণ্যটির আমদানি তিন বছরের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। বিশেষত নাইজেরিয়া ও অ্যাঙ্গোলা থেকে জ্বালানি পণ্যটির আমদানি সবচেয়ে বেশি বাড়িয়েছে ভারত।
অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ভোক্তা দেশগুলোর তালিকায় ভারতের অবস্থান বিশ্বে তৃতীয়। জ্বালানি পণ্যটির আমদানিকারকদের বৈশ্বিক তালিকায় ভারত চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক আমদানি বাণিজ্যের ৬ দশমিক ৯ শতাংশ ভারতের দখলে।
প্রতি বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে উৎসবের মৌসুম চলায় ভারতে জ্বালানি তেলের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়ে যায়। উৎসব সামনে রেখে বাড়তি চাহিদার বিষয়টি মাথায় নিয়ে ভারতীয় আমদানিকারকরা অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি বাড়িয়ে দেন। মূলত এ কারণে চলতি বছরের অক্টোবরে ভারতে জ্বালানি পণ্যটির আমদানি সাত বছরের সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে।
ইরান থেকেও ভারতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি হয়। গত নভেম্বরে ইরানের ওপর নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ায় দেশটি থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিতে সমস্যায় পড়েন ভারতীয় আমদানিকারকরা।
গত অক্টোবরে ইরান থেকে ভারতীয় আমদানিকারকরা প্রতিদিন গড়ে ৪ লাখ ৬৬ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করেন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ শতাংশ কম।
ভারতে প্রতি বছর ১ এপ্রিল থেকে নতুন অর্থবছর শুরু হয়। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (এপ্র্রিল-অক্টোবর) ইরান থেকে ভারতে জ্বালানি পণ্যটির আমদানি ৩৪ শতাংশ বেড়েছে। নভেম্বরের শুরুতে ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা শুরুর পর ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে যে আটটি দেশ বিশেষ ছাড় পেয়েছে, তাতে ভারতের নাম রয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কয়েক মাসের স্থগিতাদেশ ছাপিয়ে জানুয়ারিতে ইরান থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি শুরুর ঘোষণা দিয়েছে ভারতের হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম করপোরেশন। এ কারণে আগামী দিনগুলোয় ভারতের পরিশোধন কেন্দ্রগুলোতে ইরানি জ্বালানি তেলের আমদানি আরো বাড়তে পারে।