সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে
সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আশরাফ আহমেদ। বুধবার (১৭ জানুয়ারি) তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় এ কথা জানান তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জানুয়ারি-জুন মাসের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতি সম্পর্কে ঢাকা চেম্বার সভাপতি বলেন, এই মুদ্রানীতি দেশের আর্থিকখাতকে পুনর্জীবিত এবং প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে সহায়তা করবে।
বাজারভিত্তিক বিনিময় হার ব্যবস্থা নিশ্চিতে মুদ্রানীতিতে ‘ক্রগিং পেগ’ পদ্ধতি অনুসরণের উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে ডিসিসিআই। ঘোষিত মুদ্রানীতিতে নীতি সুদহার (রেপোরেট) ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৮ শতাংশ উন্নীত করে বাজারে মুদ্রা প্রবাহ হ্রাস করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার এ উদ্যোগ কার্যকর হবে।
ঢাকা চেম্বার সভাপতি বলেন, আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনয়নে এ নীতি সুনির্দিষ্ট প্রভাব রাখবে, এছাড়া অন্যান্য প্রি-ফাইন্যান্সিং ও রি-ফ্যাইন্যান্সিং স্কিমের মাধ্যমে সিএমএসএমই খাতকে সহায়তার উদ্যোগকে স্বাগত জানান।
তিনি আরও বলেন, সর্বশেষ ঘোষিত মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ‘স্মার্ট’’র ওপর ভিত্তি করে ঋণের সুদ হার নির্ধারণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। তবে সেটি খুব বেশি কার্যকর হয়েছে বলে পরিলক্ষিত হয়নি। কারণ গত ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৫ শতাংশ, যা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ৭.৫ শতাংশের চেয়ে বেশি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আনয়নে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে গৃহীত উদ্যোগের সুফল পাওয়া যাবে।
আশরাফ আহমেদ বলেন, জানুয়ারি-জুন ২০২৪ মেয়াদে সরকারিখাতে ঋণ প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭.৮ শতাংশ, যদিও জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৩ মেয়াদে ৩৭.৯ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও বাস্তবে অর্জিত হয়েছিল মাত্র ১৮ শতাংশ। অপরদিকে জানুয়ারি-জুন ২০২৪ মেয়াদে বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, সেখানে জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৩ মেয়াদে ১০.৯ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও বাস্তবে অর্জিত হয়েছিল মাত্র ১০.২ শতাংশ। এতে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারিখাতে ঋণপ্রবাহের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা, গত মেয়াদের অর্জিত মাত্রার চেয়ে কম নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে দেশের বেসরকারিখাত ঋণ প্রবাহের এর লক্ষ্যমাত্রা আরও বেশি প্রত্যাশা করেছিল।
ঢাকা চেম্বার সভাপতি আশা প্রকাশ করেন, যথাযথ আর্থিক ঋণ কৌশল গ্রহণের মাধ্যমে বেসরকারিখাতে অধিকহারে ঋণ প্রবাহ নিশ্চিতে বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোগ গ্রহণ করবে। সরকারিখাতে ঋণ হ্রাসের পাশাপাশি বেসরকারিখাতে ঋণ বৃদ্ধিকল্পে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষতা বৃদ্ধি, সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছতা সাধন এবং অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের উপর জোরারোপ করেন।
মুদ্রা বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আনয়নে ঢাকা চেম্বার সভাপতি মনে করেন যে, ‘ক্রগিং পেগ’ পদ্ধতি বাজারকে কিছুটা স্থিতিশীল রাখতে সক্ষম হবে, তবে এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করা অপরিহার্য। উপরন্তু বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ কমাতে রায়ার্স ক্রেডিট, ইউজেন্স এলসি, ডেফার্ড পেমেন্ট এবং এক্সপোর্ট ফ্যাক্টরিং প্রভৃতি বিষয়সমূহ বিকল্প উদ্যোগ হিসেবে বিবেচনার দাবি করছে ডিসিসিআই।