শ্রীলংকার পোশাক খাত ভারত-বাংলাদেশের হাতে চলে যাচ্ছে
শ্রীলংকার পোশাক খাতের ১০-২০ শতাংশ ক্রয়াদেশ বাগিয়ে নিচ্ছে ভারত ও বাংলাদেশ। ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্রটির চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ক্রেতারা শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। এ কারণে চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে দেশটির পোশাক রফতানি মারাত্মকভাবে সংকুচিত হতে পারে। সম্প্রতি দেশটির জয়েন্ট অ্যাপারেল অ্যাসোসিয়েশন ফোরামের (জেএএএফ) প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর নিউজ কাটার।
জেএএএফ ডেপুটি চেয়ারম্যান ফেলিক্স ফের্নান্দো গতকাল এক সংবাদ বিবৃতিতে জানায়, ২০২২ সালের জুন নাগাদ পোশাক খাতের ক্রয়াদেশ রয়েছে। ২০২১ সালের শেষের দিকে এ ক্রয়াদেশগুলো এসেছিল যখন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল। শ্রীলংকায় চলমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটের কারণে ক্রেতারা জুন-পরবর্তী পাঁচ-ছয় মাসে ক্রয়াদেশ দিতে ইতস্তত করছেন।
শ্রীলংকার চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উপাত্ত সংগ্রহ করছেন ক্রেতারা। গত কয়েক সপ্তাহে শীর্ষ পোশাক তৈরিকারক কোম্পানিগুলো তাদের ক্রেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছে। ক্রয়াদেশের ডেলিভারি যে সঠিক সময়ে দিতে সক্ষম, এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছে তারা।
ফের্নান্দো বলেন, সব ধরনের চেষ্টা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক দিনগুলোয় ক্রয়াদেশ লক্ষণীয় পরিমাণে কমছে। অন্তত ১০ থেকে ২০ শতাংশ ক্রয়াদেশ চলে যাচ্ছে ভারত ও বাংলাদেশে।
শ্রীলংকার রফতানি উন্নয়ন বোর্ডের (ইডিবি) বরাতে জানা গেছে, জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাত ১৯০ কোটি ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছে। করোনায় বিপর্যস্ত ২০২১ সালের একই সময়ের চেয়ে যা ১৩ শতাংশ বেড়েছে।
জেএএফের ডেপুটি চেয়ারম্যান বলেন, দেশটির তৈরি পোশাক খাত চলতি বছরের জুন নাগাদ বর্ধিত ক্রয়াদেশ পাচ্ছে। তারপর আয়প্রবাহ ধরে রাখা কঠিন ঠেকবে। ২০২২ সালে তৈরি পোশাক খাত যে ৬০০ কোটি ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছিল, তা অর্জন করা চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। সামনের মাসগুলোয় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ইতিবাচক খবর না এলে দৈনিক লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হবে না।
তিনি আরো বলেন, দেশের মানুষ যেহেতু অনেক চাপের মধ্যে আছে, আমরা এজন্য কাউকে দোষারোপ করতে পারছি না। শ্রমজীবী মানুষ জীবিকা নির্বাহে হিমশিম খাচ্ছে। কিন্তু তারা রাস্তায় নেমে যখন সড়ক অবরোধ করছে, যানবাহন ভাংচুর করছে তখন আমাদের কারখানা শ্রমিকদের কাজে যেতে কষ্ট হচ্ছে। এ মুহূর্তে শ্রীলংকার জন্য রফতানি খাতের গুরুত্ব স্বীকার করেছে শ্রমিক ইউনিয়নগুলো। এজন্য কোনো ধরনের হরতাল ও ধর্মঘট না ডেকে কাজ চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন তারা।
করোনা মহামারীর সঙ্গে সঙ্গে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে চলতি বছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে শ্লথগতির পূর্বাভাস দিয়েছেন অনেক অর্থনীতিবিদ। এমনটা হলে পোশাক খাতের ক্রেতারা ক্রয়াদেশ কমিয়ে দেবেন, যা শ্রীলংকার রফতানি খাতের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিতে পারে।
২০২২ সালের ২৯ মার্চ থেকে ১ এপ্রিলের মধ্যে পরিচালিত ব্লুমবার্গ মার্কেটস লাইভ জরিপে দেখা গেছে, ৪৮ শতাংশ বিনিয়োগকারী মনে করছেন আগামী বছর মন্দায় পড়বে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে ২১ শতাংশের শঙ্কা ২০২৪ সালেও মন্দায় থাকবে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতি। অন্যদিকে ১৫ শতাংশ মনে করেন, চলতি বছরেই মন্দায় পড়বে যুক্তরাষ্ট্র।
বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিটিতে মন্দার প্রভাব পড়বে পুরো বিশ্বে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীর মতো শ্রীলংকার তৈরি পোশাকের বড় অংশ রফতানি হয় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে।