শেষ বলে ঝোড়ো সেঞ্চুরি মিরাজের, ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস

স্টাফ রিপোর্টার

ওভার বাকি আর একটা। মিরাজের রান তখন ৭৮ বলে ৮৫। সেঞ্চুরিটা করতে হলেও ১৫ রান দরকার। শেষ ওভার বল করতে আসলেন শার্দুল ঠাকুর। স্ট্রাইকে নাসুম আহমেদ। প্রথম বলেই লেগবাই রান নিয়ে মিরাজকে স্ট্রাইকে পাঠালেন নাসুম।

স্ট্রাইকে এসেই দ্বিতীয় বলে বলটিকে পাঠিয়ে দিলেন বাউন্ডারির ওপারে। পরের বল ডট। চতুর্থ বলটিকে আছড়ে ফেললেন সোজা গ্যালারিতে। ৯৭ রান হয়ে গেলো মিরাজের। পঞ্চম বলটিকে বাউন্ডারির জন্য খেললেন। বল বাউন্ডারির কাছে গিয়ে গতি কমিয়ে দেয়ার কারণে বাউন্ডারি হলো না। হলো ২ রান।

নার্ভাস নাইনটিজ। বল বাকি একটি। মিরাজের সেঞ্চুরির জন্য রান দরকার ১টি। কিন্তু মিরাজ যে মানসিকতার ক্রিকেটার, তাতে তাকে নাইনটিজের নার্ভাসনেস কাবু করতে পারার কথা নয়। পারেওনি। শেষ বলটিকে শার্দুল ঠাকুর দিয়েছিলেন অফসাইডে ফুলটস।

মিড অনে আলতো করে পুশ করলেন শুধু। নাসুম আহমেদ আগেই দৌড় দিয়েছিলেন। মিরাজও দৌড়ে ক্রিজ পার হয়ে গেলেন। ওভার শেষ, মিরাজের হয়ে গেলো ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। হেলমেট খুলে, ব্যাট উঁচিয়ে মিরাজ জবাব দিলেন দর্শক অভিভাদনের। ৮৩ বল খেলে ৮টি বাউন্ডারি এবং ৪টি ছক্কার মার মেরে ১০০ রান করে অপরাজিত থাকলেন তিনি।

দুই ম্যাচে ভারতীয় বোলাররা আউটই করতে পারলেন না মেহেদী হাসান মিরাজকে। প্রথম ম্যাচে ৩৯ বলে অতিমানবীয় ব্যাটিং করেছিলেন তিনি। অপরাজিত ৩৮ রান করে বাংলাদেশকে অবিশ্বাস্য জয় এনে দিয়েছিলেন তিনি।

বুধবার  দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ যখন ৬৯ রানে বাংলাদেশের ৬জন ব্যাটার সাজঘরে চলে গিয়েছিলো, তখন ১০০ রানও হয় কি না সে শঙ্কায় ভুগছিল বাংলাদেশের সমর্থকরা। কিন্তু সেই মেহেদী হাসান মিরাজই হলেন বাংলাদেশ দলের ত্রাণকর্তা। সঙ্গে পেয়েছিলেন অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে।

দু’জনের ১৪৮ রানের জুটি বাংলাদেশকে সম্মান বাঁচায়নি শুধু, জয়ের জন্য লড়াকু স্কোর এনে দিলেন তারা। মাহমুদউল্লাহ ৭৭ রানে আউট হয়ে গেলেও, মিরাজ ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে, শেষ বলে সেঞ্চুরিও পূরণ করে ফেলেছেন।

সেঞ্চুরির সঙ্গে রেকর্ডও গড়েছেন মিরাজ। ৮ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে বিশ্ব ক্রিকেটে যৌথভাবে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েছেন তিনি। ওয়ানডেতে ৮ নম্বর কিংবা তারও নিচে নেমে এর আগে সেঞ্চুরি করেছিলেন কেবল আয়ারল্যান্ডের সিমি সিং। ২০২১ সালে ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অপরাজিত ১০০ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। এবার সিমি সিংয়ের পাশে বসলেন মিরাজ।

বাংলাদেশের এই ব্যাটার রেকর্ড গড়েছেন আরও একটি। ইনিংসের একেবারে শেষ বলে গিয়ে এর আগে কেবলমাত্র একজনই সেঞ্চুরি করেছিলেন। পাকিস্তানের ইউসুফ ইউহানা (পরে মোহাম্মদ ইউসুফ)। ১৯৯৯ সালে শারজায় ছক্কা মেরে ভারতের বিপক্ষেই সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি।

এবার সেই ভারতের বিপক্ষেই শেষ তিন বলে ছক্কা, ডাবল এবং সিঙ্গেল নিয়ে একেবারে শেষ বলে এসে সেঞ্চুরি পূরণ করেন মিরাজ।

৬৯ রানে ৬ উইকেট পড়ার পর বাংলাদেশের আশা শেষ বলে যারা দেখে নিয়েছিলেন তাদেরকেই বরং হতাশ করলেন মিরাজ-মাহমুদউল্লাহ। ১৪৮ রানের জুটি গড়েছেন তারা দু’জন। ভারতের বিপক্ষে যে কোনো উইকেটে বাংলাদেশের এটা সেরা জুটি। সবচেয়ে বড় কথা, ৬ উইকেটে ৬৯ রান থেকে ৭ উইকেটে ২৭১ রান। ১ উইকেট হারিয়ে ২০২ রান যোগ করেছে বাংলাদেশ।

৭০ রানের কমে ৬ উইকেট পড়ার পর শুধু বাংলাদেশই নয়, যে কোনো দেশের জন্যই এই স্কোর সর্বোচ্চ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *