শীর্ষ ধনীর সম্পদ বেড়েছে সাড়ে ৬ ট্রিলিয়ন ডলার
মহামারীতে আরো প্রকট হয়েছে সম্পদের ব্যবধান। কভিডজনিত বিধিনিষেধে আয়ের পথ বন্ধ হয়ে দরিদ্র হয়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ। অন্যদিকে ফুলেফেঁপে উঠেছে অতিধনীদের সম্পদের পরিমাণ। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে শীর্ষ ধনীদের সম্পদও। ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ইলোন মাস্ক, ওয়ারেন বাফেট ও জেফ বেজোসের মতো মার্কিন ধনীদের সম্পদে গত বছর ৬ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলার যুক্ত হয়েছে। শেয়ারদর ও আর্থিক বাজারের ঊর্ধ্বগতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ এ সম্পদ পেয়েছেন ধনকুবেররা। খবর সিএনবিসি।
সম্প্রতি প্রকাশিত পারিবারিক সম্পদ নিয়ে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সাল শেষে যুক্তরাষ্ট্রে শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর মোট সম্পদের পরিমাণ রেকর্ড ৪৫ লাখ ৯০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে। মহামারীর দুই বছরে তাদের সম্পদ ১২ লাখ কোটি ডলারের বেশি কিংবা এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি বেড়েছে।
নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির অর্থনীতির অধ্যাপক অ্যাডওয়ার্ড ওলফ বলেন, সংখ্যাগুলো বিস্ময়কর। মহামারীতে শীর্ষ ধনীদের সম্পদে উল্লম্ফন গত ৪০ বছরে বৃদ্ধি পাওয়া মোট সম্পদের কাছাকাছি পৌঁছেছে।
ফেডের প্রতিবেদন অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের মোট সম্পদের ৩২ দশমিক ৩ শতাংশই রয়েছে শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর হাতে। এ সম্পদের পরিমাণ দেশটির নিম্নআয়ের ৯০ শতাংশ নাগরিকের কাছে থাকা সম্পদের সমান। গত বছর মোট সম্পদে তাদের মালিকানার হার মহামারীর আগের পর্যায় থেকে কিছুটা কমে গেছে। নিম্নআয়ের মার্কিন নাগরিকদের হাতে এখন দেশটির মোট সম্পদের ৩০ দশমিক ২ শতাংশের মালিকানা রয়েছে। যেখানে মহামারীর আগে এ হার ৩০ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল।
তবে চলতি বছর পুঁজিবাজারে কিছুটা মন্দার কারণে শীর্ষ ধনীদের সম্পদের বৃদ্ধি থমকে গেছে কিংবা কিছুটা কমেছে। গত বছর ধনী মার্কিনদের সম্পদ বৃদ্ধির প্রধান চালক ছিল সিকিউরিটিজ ও ব্যক্তিগত ব্যবসা। ফেড ডাটা অনুসারে, ২০২১ সালে শীর্ষ ধনীদের বৃদ্ধি পাওয়া সম্পদের প্রায় ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার করপোরেট ইকুইটি এবং মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার থেকে এসেছে। শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর স্টক পোর্টফোলিওর মূল্য এখন ২৩ লাখ কোটি ডলার।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে মহামারীর আগের চেয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বেড়েছে। মার্কিন ব্যবস্থাপনা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গ্যালাপ অনুসারে, বর্তমানে ৫৬ শতাংশ মার্কিন নাগরিক পুঁজিবাজারের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। ২০১৯ ও ২০২০ সালে এ হার ৫৫ শতাংশ ছিল। যদিও এখনো এ হার ২০০৮ সালের আর্থিক সংকটের আগের পর্যায়ের নিচে রয়েছে। ওই মন্দার আগের ৬২ শতাংশ মার্কিন নাগরিকের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ছিল।
অধ্যাপক অ্যাডওয়ার্ড ওলফ বলেন, শেয়ারদরে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা সম্পদ ও অসমতার একটি চক্র তৈরি করেছে। শেয়ারের মালিকানা সম্পদের উল্লম্ফনে অবদান রাখছে। ফলে শেয়ারদর বাড়তে থাকলে আরো বেশি অর্থ ধনী মার্কিনদের কাছে স্থানান্তরিত হচ্ছে। যেহেতু ধনীরা তাদের অতিরিক্ত সম্পদের বড় একটি অংশ সঞ্চয় ও বিনিয়োগ করতে পারে, তাই দেশের সম্পদের বেশির ভাগই পুঁজিবাজারে প্রবাহিত হয়। আর এ প্রবণতা শেয়ারের দাম আরো বাড়িয়ে দেয়।
এছাড়া ব্যক্তিগত ব্যবসাগুলোও শীর্ষ ধনীদের সম্পদ বাড়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছে। ফেডারেল রিজার্ভ অনুসারে, শীর্ষ ১ শতাংশ ধনী যুক্তরাষ্ট্রের ৫৭ শতাংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিক। তাদের হাতে থাকা ব্যক্তিগত ব্যবসায়ের মূল্য গত বছর ৩৬ শতাংশ কিংবা ২ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলার বেড়েছে।
ধনকুবেররা রিয়েল এস্টেটের দাম বৃদ্ধি থেকেও উপকৃত হয়েছে। মহামারীতে তাদের হাতে থাকা আবাসন সম্পদ ১ লাখ কোটি ডলারেরও নিচ থেকে বেড়ে ৫ লাখ ২৭ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে। অন্যদিকে গত বছর রিয়েল এস্টেট খাতে নিম্ন আয়ের ৯০ শতাংশ মার্কিন নাগরিকের সম্পদ বেড়েছে ২ লাখ ৮৯ হাজার কোটি ডলার।