শীর্ষ ধনীদের সম্পদ বেড়েছে এক লাখ কোটি ডলার

স্টাফ রিপোর্টার

মহামারীতে বিশ্বজুড়ে আরো প্রকট হয়েছে সম্পদের ব্যবধান। কভিডজনিত বিধিনিষেধে আয়ের পথ বন্ধ হয়ে দরিদ্র হয়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ। যদিও ফুলেফেঁপে উঠেছে অতিধনীদের সম্পদের পরিমাণ। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে শীর্ষ ধনীদের সম্পদও। সম্প্রতি প্রকাশিত ব্লুমবার্গ বিলিয়নেয়ারস ইনডেক্স অনুসারে, ২০২১ সালে বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের সম্পদে সম্মিলিতভাবে ১ লাখ কোটি ডলার যুক্ত হয়েছে। খবর সিএনএন বিজনেস।

গত ১২ মাসে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলোন মাস্ক একাই প্রায় ১১ হাজার ৮০০ কোটি ডলার আয় করেছেন। এদিকে জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, একই বছর ১৫ কোটি মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে পড়েছে।

গত বছর সম্পদে উল্লম্ফন দেখা দেয়া অন্য বিলিয়নেয়ারদের মধ্যে বিলাসী পণ্যের ব্র্যান্ড এলভিএমএইচের প্রধান নির্বাহী বার্নাল্ড আর্নল্টের সম্পদ বেড়েছে ৬ হাজার ২৭০ কোটি ডলার। গুগলের দুই প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিনের সম্পদ বেড়েছে যথাক্রমে ৪ হাজার ৭০০ কোটি ও ৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। মেটার প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গের জন্য বছরটি দুঃস্বপ্নের মতো ছিল। যদিও গত বছর তার সম্পদে ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলার যুক্ত হয়েছে।

বিশ্লেষকদের ভাষ্য, ২০২১কে শ্রমিকের বছর হিসেবে স্মরণ করা যেতে পারে। কারণ শ্রম সংকটে পড়ে প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মী ধরে রাখতে ও নতুন কর্মী আকৃষ্ট করতে বেতন বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে শ্রমিক ও নির্বাহীদের মধ্যে সম্পদের ব্যবধান কিছুটা হলেও সংকুচিত হয়েছে।

২০২১ ধনী হওয়ার জন্যও একটি ভালো বছর ছিল। মূল্যস্ফীতি, সরবরাহ ব্যবস্থার বাধা ও কভিডের নতুন ধরন উদ্বেগ তৈরি করলেও পুঁজিবাজারের শেয়ারদরের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা অব্যাহত ছিল। ২০২০ সালে মহামারীর ধাক্কার পর বিশ্বজুড়ে সরকারগুলোর দেয়া প্রণোদনা বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায়তা করে। পাশাপাশি রেকর্ড নিম্ন সুদহারের মতো সহজ মুদ্রানীতি বিশ্বজুড়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে কভিডের বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। ফলে গত বছর রেকর্ড পরিমাণ মুনাফার দেখা পায় প্রতিষ্ঠানগুলো।

গত বছর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত শীর্ষ ৫০০ মার্কিন প্রতিষ্ঠানের এসঅ্যান্ডপি-৫০০ সূচক ২৭ শতাংশ বেড়েছে। পাশাপাশি শীর্ষ ৩০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদরের সূচক ডাও প্রায় ১৯ শতাংশ বেড়েছে। গত বছর ক্রিপ্টোকারেন্সি, পণ্য ও সম্পত্তির মতো অন্যান্য সম্পদের মূল্যও বেড়েছে। এটি শীর্ষ ধনীদের সম্পদের আকারকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে।

ব্লুমবার্গের বিলিয়নেয়ার ইনডেক্স অনুসারে, শীর্ষ ৫০০ ধনীর সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ এখন ৮ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন ছাড়া বিশ্বের যেকোনো একক দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) চেয়ে বেশি।

কয়েক বছর ধরেই মার্কিন আইনপ্রণেতারা বিলিয়নেয়ারদের কর ফাঁকি কিংবা কম কর দেয়া নিয়ে সমালোচনা করে আসছেন। যেমন টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলোন মাস্ক কয়েক বছর ধরে খুব কম বা কোনো আয়কর দেননি বলেও অভিযোগ উঠেছে। যদিও তার লাখ কোটি ডলারের প্রতিষ্ঠানটি আংশিকভাবে সরকারি সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আমেরিকান ফর ট্যাক্স ফেয়ারনেস অ্যান্ড দি ইনস্টিটিউট ফর পলিসি স্টাডিজ প্রোগ্রাম অন ইনইকুয়ালিটির প্রতিবেদন অনুসারে, মহামারী শুরুর পর থেকে মার্কিন বিলিয়নেয়ারদের সম্মিলিত সম্পদ ৭০ শতাংশ বেড়ে ৫ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *