শীতকালীন মাছের রোগ দূর করার কিছু টিপস

আমাদের দেশে শীতকালে মাছের বিশেষ কিছু ‍কিছুরোগ দেখা যায়। এসময় সঠিকভাবে মাছের যত্ননা নিলে এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে মাছমরে যেতে পারে। চলতি মৌসুমে মাছের ক্ষতরোগ,লেজ ও পাখনা পচা রোগ, ফুলকা পচা রোগ এবং উদরফোলা রোগ দেখা দিতে পারে।

বিশেষ যত্ন ওপরিচর্যা করলে মাছের উৎপাদন স্বাভাবিকরাখা যায়। শীতকালে মাছের বিশেষ যত্ন নেয়া প্রয়োজন।কারণ এ সময়ে পুকুরের পানি কমে যায়, পানি দূষিতহয়, মাছের রোগবালাই হয়। ফলে মাছের বৃদ্ধি ওউৎপাদন ব্যাহত হয়। বিশেষ যত্ন ওপরিচর্যা করলে মাছের উৎপাদন স্বাভাবিকরাখা যায়।
মাছের ক্ষতরোগ:

এফানোমাইসেস ছত্রাকপড়ে ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়।বাংলাদেশে প্রায় ৩২ প্রজাতির স্বাদু পানিরমাছে এ রোগ হয়। যেমন- টাকি, শোল, পুঁটি, বাইন,কই, শিং, মৃগেল, কাতলসহ বিভিন্ন কার্পজাতীয়মাছে এ রোগ হয়।

লক্ষণ-

প্রথমে মাছের গায়ে ছোট ছোট লাল দাগ
দেখা যায়।
লাল দাগে ঘা ও ক্ষত হয়।
ক্ষতে চাপ দিলে দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ বের হয়।
লেজের অংশ খসে পড়ে।
মাছের চোখ নষ্ট হতে পারে।
মাছ ভারসাম্যহীনভাবে পানির
ওপরে ভেসে থাকে।
মাছ খাদ্য খায় না।
আক্রান্ত মাছ ১৫ থেকে ২০ দিনের
মধ্যে মারা যায়।
এ রোগ হলে করণীয় হচ্ছে-

শীতের শুরুতে ১৫ থেকে ২০ দিন অন্তর অন্তর
পুকুরে প্রতি শতাংশে এক কেজি ডলোচুন ও এক
কেজি লবণ মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
পুকুর আগাছামুক্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন
রাখতে হবে।
জৈবসার প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে।
জলাশয়ের পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখতে হবে।
মাছের ঘনত্ব কম রাখতে হবে। ক্ষতরোগ হওয়ার
আগে এসব ব্যবস্থা নিতে হবে।
মাছ ক্ষত রোগে আক্রান্তহলে প্রতি কেজি খাদ্যের সঙ্গে ৬০ থেকে ১০০মিলিগ্রাম টেরামাইসিন ওষুধ দিতে হবে।অথবা তুঁত দ্রবণে মাছডুবিয়ে রেখে পুকুরে ছাড়তে হবে। আক্রান্ত মাছপুকুর থেকে সরাতে হবে।
লেজ ও পাখনা পচা রোগ:

অ্যারোমোনাসে ওমিক্সো ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়ে এ রোগহয়। কার্প ও ক্যাটফিস জাতীয় মাছে বেশি হয়।তবে রুই, কাতলা, মৃগেলসহ প্রায় সব মাছেই এ রোগহতে পারে।

লক্ষণ-

মাছের পাখনা ও লেজের মাথায়
সাদা সাদা দাগ পড়ে।
লেজ ও পাখনা পচে খসে পড়ে।* দেহের
পিচ্ছিলতা কমে যায়।
দেহের ভারসাম্য হারায়
এবং ঝাঁকুনি দিয়ে পানিতে চলাচল করে।
মাছ ফ্যাকাশে হয়।* মাছ খাদ্য কম খায়।
আক্রান্ত বেশি হলে মাছ মারা যায়।
প্রতিরোধ-

ক্ষত রোগের পদ্ধতি অবলম্বন করে এ রোগ প্রতিরোধকরা যায়। রোগ হওয়ার আগেই ওইব্যবস্থাগুলো নিলে লেজ ও পাখনা পচা রোগ হয় না।

আক্রান্ত পাখনা কেটে মাছকে শতকরা ২.৫ ভাগ
লবণে ধুয়ে নিতে হবে।
*এক লিটার পানিতে ০.৫ গ্রাম তুঁত মিশিয়ে ওই
দ্রবণে আক্রান্ত মাছকে এক মিনিট
ডুবিয়ে পুকুরে ছাড়তে হবে।
মাছের পরিমাণ পুকুর থেকে কমাতে হবে।*
আক্রান্ত মাছ পুকুর থেকে সরাতে হবে।
ফুলকা পচা রোগ:

ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে অধিকাংশ বড় মাছে এরোগ হয়। তবে সব প্রজাতির পোনা মাছেই এ রোগহতে পারে।

লক্ষণ-

মাছের ফুলকা পচে যায় এবং আক্রান্ত অংশ
খসে পড়ে।
শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হয়।* মাছ পানির ওপর
ভেসে ওঠে।
মাছের ফুলকা ফুলে যায়।
ফুলকা থেকে রক্তক্ষরণ হয়।
আক্রান্ত মারাত্মক হলে মাছ মারা যায়।
এ রোগ হলে করণীয় হচ্ছে
শতকরা ২.৫ ভাগ লবণে আক্রান্ত
মাছকে ধুয়ে আবার পুকুরে ছাড়তে হবে।
এক লিটার পানিতে ০.৫ গ্রাম তুঁত মিশিয়ে ওই
দ্রবণে আক্রান্ত মাছকে এক মিনিট
ডুবিয়ে রেখে পুকুরে ছাড়তে হবে।
উদর ফোলা বা শোঁথ রোগ:

অ্যারোমোনাস নামক ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে কার্পও শিং জাতীয় মাছে ড্রপসি রোগ বেশি হয়। এ রোগসাধারণত বড় মাছে বেশি হয়।

লক্ষণ-

দেহের ভেতর হলুদ বা সবুজ তরল পদার্থ জমা হয়।
পেট খুব বেশি ফুলে।
দেহের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।
তরল পিচ্ছিল পদার্থ বের হয়।
মাছ উল্টা হয়ে পানিতে ভেসে ওঠে।
দেহে পিচ্ছিল পদার্থ কমে যায়।
খাদ্য গ্রহণে অনীহা হয়।
প্রতিকার-
আঙুল দিয়ে পেটে চাপ দিয়ে কিংবা সিরিঞ্জ
দিয়ে তরল পদার্থ বের করতে হবে।
প্রতি কেজি খাদ্যের সঙ্গে ১০০ মিলিগ্রাম
টেরামাইসিন বা স্ট্রেপটোমাইসিন পরপর ৭ দিন
খাওয়াতে হবে।
আরোও পড়ুন  সার্ক কৃষি উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর দশ প্রস্তাবনা
অন্যান্য পরিচর্যা

১. পানির অক্সিজেন বৃদ্ধির জন্য বাঁশ
দিয়ে অথবা সাঁতারকেটে অথবা পানি নাড়াচাড়া করতে হবে।
একরপ্রতি পাঁচ থেকে ১০ কেজি টিএসপি দিলেও
হবে।
২. পুকুরের পানিতে সরাসরি রোদ পড়ার
ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে পুকুরের পানি গরম হয়
এবং প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয়।
৩. শেওলা, আবর্জনা, কচুরিপানা, আগাছাসহ সব
ক্ষতিকর জলজ উদ্ভিদ পরিষ্কার করতে হবে।
৪. ১৫ দিন অন্তর অন্তর জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য
পরীক্ষা করতে হবে।
৫. পানিতে অ্যামোনিয়া গ্যাস হলে চুন প্রয়োগ
করতে হবে।
৬. পানি ঘোলা হলে ১ মিটার গভীরতায় ১ শতক
পুকুরে ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে।
৭. পুকুরের পানি কমে গেলে পানি সরবরাহ
করতে হবে।
৮. পুকুরের পানি বেশি দূষিত হলে পানি পরিবর্তন
করতে হবে।
৯. সুষম খাদ্য নিয়মিত সরবরাহ করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *