শামুকও বড় বড় মাছ শিকার করে (ভিডিও)

পৃথিবীতে প্রায় পাঁচশ’ প্রজাতির খুনে শামুক আছে। এর মধ্যে দুই প্রজাতির শামুক খুব ভয়ঙ্কর যার কামড়ে মানুষ মারা যায়। তবে এই শামুকগুলোর ভয়ানক বিষ থেকে তৈরি ওষুধের মাধ্যমে মানুষ বেঁচেও যায়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ রাজ্য। সল্ট লেক সিটির ইউনিভার্সিটি অব উটাহ-তে অলিভেরার ল্যাবটরির বিরাটাকার ট্যাঙ্কের মাঝে ‘কোন শেল’ নামের এই শামুকগুলোর বাস। সাধারণত ফিলিপাইন, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশের সাগরের প্রবাল দ্বীপে এ ধরনের শামুকগুলো ওঁৎপেতে থাকে শিকারের সন্ধানে। পাঁচশ’ প্রজাতির খুনে শামুকগুলোর মধ্যে দুইটি প্রজাতি আবার খুব ভয়ঙ্কর। এদের কামড়ে মানুষও মারা যায়। এই শামুকরা কিছু পোকামাকড় খেয়ে বেঁচে থাকে। তবে এদের জাত ভাইদেরও খেতে ছাড়ে না। অন্তত ৭০ প্রজাতির শামুক আছে যাদের প্রধান খাদ্য হলো মাছ।

এই শামুকগুলো লম্বা টিউবের মতো একটা বিষাক্ত নল বের করে দেয় মুখ থেকে আর মাছেরা এগুলোকে খাবার মনে করে খেতে যায় আর তখনই নিজেরাই খাবার হয়ে যায় শামুকদের। শামুকের ভয়ানক বিষে সঙ্গে সঙ্গে মারা যায় মাছ। আবার অনেক সময় শামুকের চেয়ে মাছের আয়তন অনেক বড় হয় তাতেও কোনো পরোয়া করে না খুনে শামুক। কয়েক ঘণ্টা পর মাছের হাড় আর কঙ্কাল বের করে দেয় মুখ থেকে।

এই দৃশ্যগুলো দেখতে অবশ্য অলিভেরা শামুক পোষেনি। পুষেছে এই খুনে শামুকের বিষ দিয়ে ওষুধ তৈরির জন্য। তবে ১৭৯৬ সালে নিলামে ভারমিরের ছবির চেয়ে শামুকের বিচিত্র রঙা একটি খোলসের দাম বেশি উঠেছিল। অনেক সময় মাছের জন্য যেটা ক্ষতিকর সেটা মানুষের জন্য ভালো। বেশিরভাগ বিষাক্ত প্রাণীর শরীরে টক্সিন বা জৈব বিষের মাত্রা থাকে খুবই কম।

কিন্তু এই খুনে শামুকদের শরীরে এই বিষ বা টক্সিনের পরিমাণ প্রচুর থাকে। একটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, শামুকের এই বিষ ব্যবহারে যন্ত্রণাদায়ক ব্যথা, মস্তিষ্কের ভয়ানক ক্ষত, ব্রেন স্টোক ইত্যাদি ঠেকানো এবং উপশম করা সম্ভব।

এছাড়াও কুষ্ঠরোগ, ডিপ্রেশন এবং সিজোফ্রেনিয়া রোগের ওষুধ এই বিষ থেকে বানানো যায়। খুনে শামুকের এত গুণের কারণে একে অনেকে ডাক্তার শামুকও বলে থাকে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি তো রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু করে দিয়েছে কে, কত নতুন ওষুধ আবিষ্কার করতে পারে এই বিষ ব্যবহার করে।

পাশাপাশি সবাই লাইন দিয়ে বসে আছে অলিভেরার ল্যাবের মতো অন্যান্য গবেষণাগারের দুয়ারে। কে, কখন কোন টক্সিন আবিষ্কার করে ফেলেন আর তার স্বত্ব কিনে নেবে ওষুধ কোম্পানিগুলো। সত্তর দশকের প্রথম দিকে আমেরিকার বায়োকেমিস্ট হিসেবে অলিভেরার যাত্রা শুরু। ওখানে প্রায় একটা দশক কাটিয়ে যখন ফিলিপাইনে গবেষণার জন্য তিনি আসেন তখন তার ছিল না কোনো ল্যাব বা কোনো অর্থ। ছোটবেলা থেকে অলিভেরার নেশা ছিল শামুকের খোলশ সংগ্রহ।

তিনি জানতেন কিছু শামুকের বিষ ব্যবহার করে মাছ শিকারের সময়। আর ‘কোনাস জিওগ্রাফাস’ জাতের শামুকের বিষ এতই ভয়ঙ্কর যে তার বিষ লেগে মানুষও মারা যেতে পারে। তারপর এই খুনে শামুক নিয়ে গবেষণা শুরু করে দেন অলিভেরা। গবেষণায় দেখা যায়, গোখরা সাপের বিষের মতোই এই শামুকের বিষ শক্তিশালী।

এই বিষ শরীরে ঢুকলে পেশি একেবারেই অসাড় হয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় রক্ত চলাচল। ফল হয় মৃত্যু আর কিছু শামুক আছে যাদের বিষ জাপানি ফুগু পাফার মাছের মতো। এর বিষে শিকারের শরীরে সোডিয়াম আয়নের প্রবাহটুকু বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু বিষের কারণে প্রাণীর শরীর অসাড় হওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়।

বিষাক্ত খুনে শামুকদের টক্সিন ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করে সুফল পাওয়া যাচ্ছে প্রচুর। যেমন আমেরিকার ড্রাগ কোম্পানি ওয়ার্নার ল্যামবার্ট জানিয়েছে, এই টক্সিন ব্যবহারের ফলে রোগীর স্ট্রোক বা সিরিয়াস হেড ইনজুরির মাত্রা অনেক কমে গেছে।

অলিভেরা মনে করেন, খুনে শামুকের বিষ ব্যবহারে কুষ্ঠরোগ একদিন পুরোপুরি ভালো হয়ে যাবে। এমনকি এইডস এবং ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধি দূর করার ক্ষেত্রে খুনে শামুক খুব উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। এখন এ বিষয়ে আরো দরকার এর ব্যাপক গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা।

দেখুন ভিডিও

https://www.youtube.com/watch?v=_kHZXl8czOc

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *