লোকসান পুষতে মরিচের প্রতি ঝুঁকেছেন বগুড়ার চাষীরা

ধান ও আলু চাষ করে এবার বগুড়ার চাষীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বাজারে দাম না পাওয়ায় পণ্য দুটি আবাদের প্রতি আগ্রহ কমেছে তাদের। এ পরিস্থিতিতে লোকসান পুষিয়ে নিতে মরিচের প্রতি ঝুঁকেছেন বগুড়ার চাষীরা।

জেলার ১২ উপজেলায় এবার লক্ষ্যের তুলনায় অতিরিক্ত জমিতে মরিচ আবাদ হয়েছে। ফলে চলতি মৌসুমে বগুড়ায় আগের লক্ষ্য সংশোধন করে সব মিলিয়ে ১৫ হাজার টন শুকনা মরিচ উৎপাদনের লক্ষ্য পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে এবারের মৌসুমে বগুড়ায় মরিচের ব্যবসা হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে জানান খাতসংশ্লিষ্টরা।

মান ও স্বাদের কারণে দেশজুড়ে বগুড়ায় উৎপাদিত মরিচের বিশেষ খ্যাতি রয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বগুড়া জেলায় সারিয়াকান্দি, শাজাহানপুর, সোনাতলা, ধুনট, শেরপুর, নন্দীগ্রাম ও শিবগঞ্জ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি মরিচ চাষ হয়। এর পাশাপাশি সদর, কাহালু, দুপচাঁচিয়া ও আদমদীঘিতেও মরিচের চাষ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।

এবার ধান ও আলুর দাম না পাওয়ায় এসব এলাকার কৃষকরা মরিচের আবাদ বাড়িয়ে দিয়েছেন। চলতি মৌসুমের শুরুতে বগুড়ায় সব মিলিয়ে ৬ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। তবে এবার জেলায় মোট ৭ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে।

বাড়তি আবাদের ফলে এবার বগুড়ায় মরিচের উৎপাদনও লক্ষ্যের তুলনায় বাড়বে। প্রাথমিক অবস্থায় এবারের মৌসুমে বগুড়ায় মোট ১৩ হাজার ৮০০ টন মরিচ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। আবাদ বৃদ্ধির ফলে এ লক্ষ্য বাড়িয়ে ১৫ হাজার টনে উন্নীত করা হয়েছে।

বগুড়ার পাইকারি বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি শুকনা মরিচ মানভেদে ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ২২০-২৬০ টাকায়। এ বিষয়ে সারিয়াকান্দি উপজেলার চাষী খাইরুল ইসলাম বলেন, আমন ধান মণপ্রতি ৬০০-৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

আলু বিক্রি হয়েছে ৪০০ টাকা মণ। এ দামে ধান ও আলুর উৎপাদন ব্যয় তুলে আনা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। সে তুলনায় বাজারে শুকনা মরিচের দাম বাড়তি রয়েছে। লোকসান এড়াতে চাষীরাও বেশি বেশি মরিচ আবাদ করছেন।

একই উপজেলার রেজাউল করিম বাদশা জানান, প্রতি বিঘা জমি থেকে প্রায় ১৪ মণ কাঁচামরিচ উৎপাদন হয়। শুকানোর পর তা আট-নয় মণ থাকে। দাম পাওয়া যায় বেশি। এর ফলে শুকনা মরিচ বিক্রি করলে ধান কিংবা আলুর থেকে বেশি লাভ করা সম্ভব।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নিখিল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, বগুড়াজুড়ে চাষীদের মধ্যে মরিচ আবাদে বাড়তি আগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে। এর জের ধরে এবারের মৌসুমে জেলায় পণ্যটির আবাদ বেড়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যও বাড়ানো হয়েছে। সব মিলিয়ে এবার বগুড়ায় শুকনা মরিচের বাজার চাঙ্গা থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বগুড়ার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বছর ভাদ্র-আশ্বিন মাসে মরিচের আবাদ করা হয়। ফাল্গুন-চৈত্রে শুকনা মরিচ বাজারে আসতে শুরু করে। সেই হিসাবে আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যেই বগুড়ার বাজারে নতুন মৌসুমে উৎপাদিত শুকনা মরিচ আসতে শুরু করবে।

ধান ও আলুতে লোকসানের পর জেলার চরাঞ্চলে মরিচের আবাদ বেশি বেড়েছে। চাষীরা বর্তমানে ক্ষেত থেকে মরিচ সংগ্রহে ব্যস্ত রয়েছেন। কাঁচামরিচের তুলনায় বগুড়ার শুকনা মরিচের জনপ্রিয়তা ও দাম বেশি হওয়ায় চাষীরা যমুনার চরে মরিচ শুকিয়ে তবেই বাজারে বিক্রি করবেন।

বাজারে পণ্যটির দামও বাড়তির দিকে রয়েছে। ফলে এবারের মৌসুমে শুকনা মরিচ বিক্রি করে আগের লোকসান পুষিয়ে নেয়ার আশা করছেন তারা।

সোনাতলা উপজেলার খাবুলিয়া এলাকায় জাহিদুল ইসলাম জানান, এবার তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। খরচ হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এরই মধ্যে তিনি দেড় লক্ষাধিক টাকার কাঁচামরিচ বিক্রি করেছেন। শুকনা মরিচ বিক্রি করে তিনি আরো বেশি আয়ের আশা করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *