লাভ বার্ড পাখি পালন করবেন যেভাবে
লাভ বার্ড পাখি বিদেশি উন্নত জাতের পাখি। এই পাখি অনেক দামি হলেও গ্রামে বা শহরে শখের বসে বাড়িতে খাঁচায় পুষে থাকে। এই পাখি শান্তি প্রিয়, চঞ্চল, আনন্দ পূর্ণ ও দেখতে খুব সুন্দর।
লাভ বার্ড টিয়া প্রজাতির পাখি । এই পাখিটির মূল আবাস স্থল আফ্রিকার উষ্ণ অঞ্চল । এই পাখি বাংলাদেশের আবহায়াওয়ার সাথে খুব ভাল মানিয়ে চলতে পারে । খুব সহজেই এবং অল্প পরিসরে এর লালন পালন করা যায় । এই পাখি লালন পালন খরচ অনেক কম ।
এই পাখিটি মাত্র ৫ থেকে ৭ ইঞ্চি বা ১৩ থেকে ১৭ সেন্টিমিটার লম্বা হয় । এরা ১০ থেকে ১২ বৎসর বাঁচে ।
লাভ বার্ডের খাদ্য
লাভ বার্ড এর খাবার তালিকায় রয়েছে- কাউন, চিনা, বারজা, তিসি, সূর্যমুখী ফুলের বিচি, কুসুম ফুলের বিচি, সরিষা, ধান, বিভিন্ন ধরনের ফল, কচি ঘাসের পাতা ও সবজি। একটি পাখি দিনে প্রায় ৪০ থেকে ৬০ গ্রাম খাবার গ্রহন করতে পারে।
এরা প্রতিদিন প্রচুর পানি পান করে থাকে । তাই সারাক্ষণ পানি ব্যবস্থা করতে হবে । এরা প্রতিদিন গোসল করতে পছন্দ করে । লাভ বার্ড অলস প্রকৃতির ও শান্তি প্রিয় পাখি , তাই এদের খুব নিরিবিলি পরিবেশে রাখতে হয় ।
লাভ বার্ডের পালনে সর্তকতা
১. পাখির খাচায় যেন পলিথিন বা প্লাস্টিক জাতীয় পাত্র না থাকে । কারন এরা ওদের ধারাল দাত দিয়ে সারাক্ষণ কামড়ায় । কোন কারনে প্লাস্টিক কেটে খেয়ে ফেললে, অসুস্থ বা মারা যেতে পারে ।
২. খাচায় এই পাখি পালন করতে হলে ৩২ x ২০ x ২০ ইঞ্চি একটি খাচায় এক জোড়া পাখি পালন করতে হবে ।
৩. একটি খাচায় তিন জোড়া পাখি থাকলে সবগুলি বাক্স বা কলসি একই উচ্চতায় দিতে হবে । নইলে বাসা নিয়ে মারামারি করে সকলেই আহত হতে পারে হবে ।
৪. লাভ বার্ড এর পরিপূর্ণ বয়স হতে প্রায় ১০ মাস সময় লাগে, কখনও কখনও ১২/১৩ মাস সময় লাগে ।
৫. এরা সাধারনত ১০/১১ মাস বয়সেই ডিম দেয় । লাভ বার্ডের ডিম দেওয়ার সময় হলে প্রতি জোড়া পাখির জন্য ৮ x ৮ x ৮ মাপের কাঠের বাক্স বা মাঝারি সাইজের পাখির জন্য তৈরি কলসি দিতে হবে।
৬. লাভ বার্ড প্রতিবারে ৫টি থেকে ৮ টি ডিম দিয়ে থাকে । এর মধ্যে সাধারনত ৪ টি বাচ্চা পাওয়া যায়।
৭. ডিম দেওয়ার ২২ – ২৫ দিনের মধ্যে ডিম থেকে বাচ্চা বের হয়। ডিম পারার দিন থেকে ৪০ থেকে ৫০ দিন লাগে এদের বাচ্চাদের মুক্ত করে দিতে । এর পরেই এরা আবার ডিম দেওয়ার জন্য তৈরি হয় । মানে বাচ্চা ২০ থেকে ২৫ দিন পাখির বাসার ভিতর থাকে ।
৮. আবহাওয়া অনকূলে থাকলে ও পর্যাপ্ত পরিমান যত্ন নিলে লাভ বার্ড প্রতি ৩ মাস অন্তর অন্তর বৎসরে সাধারনত ৪ বার ডিম দেয় ।
খাচায় যখন পাখি পালন করা হয় তখন পাখি অনেক ভিটামিন- মিনারেল গ্রহন করতে পারে না । এজন্য পাখি চিকিৎসাকের পরামর্শে ভিটামিন ও মিনারেল অন্যান্য খাবারের সঙ্গে দিতে হবে ।
লাভ বার্ডের রোগ প্রতিরোধ
১। পাখি উঠানোর আগে খামারসহ ব্যবহার্য্য সকল যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। প্রথমে পানি দিয়ে পানির সাথে কার্যকরী জীবানুনাশক মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
২। সুস্থ্য সবল পাখি সংগ্রহ করতে হবে। প্রয়োজনে বাহ্যিক পরজীবি নিধনের জন্য ০.৫% ম্যালাথিয়ন দ্রবণে পাখিকে গোসল করিয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে পাখির মুখ এই দ্রবণে ডুবানো যাবে না। হাত দিয়ে মাথায় লাগিয়ে দিতে হবে। অন্তঃপরজীবি প্রতিরোধের জন্য কৃমিনাশক ঔষধ সেবন করাতে হবে।
৩। পাখির খোপ, দানাদার খাদ্য ও খনিজ মিশ্রণ সরবরাহের পাত্র, পানির পাত্র ও গোসল করার পাত্র এবং পাখির বসার স্ট্যান্ড নিয়মিত পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে। জীবাণুমুক্ত খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে।
লাভ বার্ড পাখি শখের বসে পুষলেও বর্তমানে অনেকে বাণিজ্যিকভাবে এই পাখি পালন শুরু করেছে। লাভ বার্ড পালন করে বাড়তি আয় করা সম্ভব। এমন কি বেকারত্ব দূর করাও সম্ভব।