লাফিয়ে বাড়ছে রুশ জ্বালানি তেলের পরিবহন ব্যয়

স্টাফ রিপোর্টার

রাশিয়ার জ্বালানি খাতে আজ থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) কর্তৃক আরোপিত নিষেধাজ্ঞা। এ পরিস্থিতিতে বেশির ভাগ জ্বালানি তেলের ট্যাংকার মালিকরা ব্যবসা-বাণিজ্য এড়িয়ে চলছেন। অন্যদিকে যারা ব্যবসা করছেন তারা নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি থাকায় অতিরিক্ত চার্জ দাবি করছেন। ফলে একদিকে যেমন ট্যাংকার পাওয়া যাচ্ছে না, অন্যদিকে জ্বালানি তেল পরিবহন ব্যয় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। খবর আরটি।

রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ সম্প্রসারণ করেছে ইইউ। ফলে রাশিয়া থেকে আগত জ্বালানি তেলবাহী জাহাজগুলোকে আর্থিক সহযোগিতা, ব্রোকারেজ ও বীমাসহ সব ধরনের পরিষেবা দেয়ার ক্ষেত্রে ইউরোপের কোম্পানিগুলোকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রাইস ক্যাপ (সর্বোচ্চ মূল্যসীমা বেঁধে দেয়া) ও অন্যান্য পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।

শিপব্রোকাররা জানান, বাল্টিক সমুদ্র দিয়ে ভারতে জ্বালানি তেল পরিবহনে প্রতি ১০ লাখ ব্যারেলে ৯-১১ ডলার পর্যন্ত চার্জ দিতে হতো। কিন্তু আজকের পর থেকে এটি বেড়ে ১৫ ডলারে উঠে আসতে পারে।

ট্যাংকার স্বল্পতার পাশাপাশি রুশ উৎপাদকদের প্রথাগত ক্রেতা ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিবর্তে এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে বাজার হিস্যা বাড়াতে হচ্ছে। এটি পরিবহন ব্যয় বাড়াতে বড় ভূমিকা পালন করছে। এদিকে অতিরিক্ত চার্জের কারণে উরাল ক্রডসহ নিজস্ব জ্বালানি তেল কম দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে রাশিয়াকে। কারণ বিকল্প বাজারগুলোয় অবস্থান ধরে রাখতে দেশটিতে প্রতিযোগিতামূলক দাম ধরে রাখতে হবে।

এদিকে রুশ জ্বালানি তেলের ওপর ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারের সর্বোচ্চ মূল্যসীমা (প্রাইস ক্যাপ) বেঁধে দিতে সম্মত হয়েছে অস্ট্রেলিয়া ও জি-৭ ভুক্ত দেশগুলো। শনিবার এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এক যৌথ বিবৃতিতে জি-৭ ও অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, আজ থেকে বেঁধে দেয়া মূল্য কার্যকর হবে।

পোল্যান্ডকে এ সিদ্ধান্তে রাজি করানোর পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) মূল্যসীমা নির্ধারণে সম্মত হয়। পরিকল্পনায় সব ইইউ দেশকে চুক্তির আওতায় নিয়ে আসার প্রয়োজন ছিল। যাতে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেল কেউ ৬০ ডলারের বেশি দামে ক্রয় না করে।

২ ডিসেম্বর পোল্যান্ড বাজার মূল্যের চেয়ে জ্বালানি তেলের প্রাইস ক্যাপ ৫ শতাংশ কম রাখার আশ্বাস পেয়ে এতে সমর্থন দেয়। গত সেপ্টেম্বরে জি-৭-এর দেশগুলো জ্বালানি তেল রফতানি থেকে রাশিয়ার আয় কমাতে প্রাইস ক্যাপ আরোপের কথা জানায়।

ইইউ চেয়েছিল, জ্বালানি তেলের প্রাইস ক্যাপ ব্যারেলপ্রতি ৬৫-৭০ ডলার নির্ধারণ করতে। কিন্তু পোল্যান্ড, লিথুনিয়া ও এস্তোনিয়া এতে রাজি ছিল না। তারা জানিয়েছিল, জ্বালানি তেলের এই প্রাইস ক্যাপের মাত্রা খুব বেশি। পোল্যান্ডের দাবি ছিল, বাজার মূল্যের চেয়ে প্রাইস ক্যাপের হার কম থাকবে।

নতুন প্রাইস ক্যাপের মাধ্যমে সমুদ্রপথে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারের বেশি মূল্যে রফতানি করতে পারবে না রাশিয়া। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো প্রাইস ক্যাপের ফলে উচ্চ জ্বালানি ও খাদ্যমূল্যের প্রভাব থেকে মুক্তি পাবে। এছাড়া এটি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের রাজস্ব কমাবে, যা তিনি ইউক্রেন আগ্রাসনে ব্যবহার করছেন।

রাশিয়া এরই মধ্যে ইউরোপে ৯০ শতাংশ জ্বালানি তেলের বাজার হিস্যা হারিয়েছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় অঞ্চলটিতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি দৈনিক এক লাখ ব্যারেলেরও নিচে নেমেছে। অথচ রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর আগে রফতানির পরিমাণ ছিল দৈনিক ১২ লাখ ব্যারেল।

এদিকে রুশ জ্বালানি তেলের ওপর ইউরোপের নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাজারে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করবে বলে মনে করছে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ)। মাসভিত্তিক জ্বালানি তেলের বাজারবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি।

আইইএ বলছে, অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা কমে যাওয়ার আশঙ্কা এরই মধ্যে প্রকট আকার ধারণ করেছে। তার ওপর রুশ জ্বালানি তেলের ওপর ইউরোপের নিষেধাজ্ঞা এবং মেরিটাইম পরিষেবায় নিষেধাজ্ঞা বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের জন্য ভারসাম্যহীন পরিস্থিতি তৈরি করবে। ডিজেলের বাজার আরো বেশি জটিলতার মধ্যে পড়বে। এরই মধ্যে জ্বালানিটির বাজারে তীব্র সংকট চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *