লাদাখে শক্তি বাড়াচ্ছে চীন
লাদাখ সীমান্তে চলমান ভারত-চীন সামরিক উত্তেজনা ও সংঘাতের বিষয়ে সমাধান আনতে বুধবারের পর বৃহস্পতিবারও (১৮ জুন) দুই দেশের মেজর জেনারেল পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে দ্বিতীয় দিনের এই বৈঠকও ব্যর্থ হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ৬ ঘণ্টা বৈঠক করেন দুই দেশের সেনা কর্মকর্তারা। তারপরও পূর্ব লাদাখে ভারতের জমি ছেড়ে যাওয়ার ব্যাপারে চীনা সেনারা কোনো লক্ষণ দেখায়নি। উল্টো দখল করা ভূখণ্ডে নিজেদের শক্তি আরও বাড়িয়েছে পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)।
এদিকে পাল্টা শক্তি দেখাতে শুক্রবার ১২টি সুখোই ও ২১টি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান চেয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাব জমা দিয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা। গত দুই দশক ধরেই ভারতীয় বায়ুসেনার অন্যতম ভরসা সুখোই। কয়েক স্কোয়াড্রন সুখোই এখন সীমান্ত সংলগ্ন ফরওয়ার্ড বেসগুলোতে এনে রাখা হয়েছে। আগামী মাস থেকে অত্যাধুনিক রাফাল বিমানও আসতে শুরু করবে।
সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশীয় রাজনীতির স্বার্থে নরেন্দ্র মোদির সরকার পেশিশক্তি প্রদর্শনের পথ নিলেও পূর্ব লাদাখে ভারতের পক্ষে এই মুহূর্তে রণকৌশলগতভাবে কোনো বড় পদক্ষেপ নেয়া কঠিন হবে। কারণ, যেভাবে ভারতীয় ভূখণ্ডের কয়েক কিলোমিটার ভেতরে ঢুকে চীনা সেনা ঘাঁটি গেড়ে বসে আছে, তাতে তাদের সরাতে গেলে বিশেষ বাহিনী নামাতে হবে।
গত সোমবার লাদাখ সীমান্তের গালওয়ান উপত্যকায় চীনা সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন ২০ ভারতীয় সেনা। এ ঘটনার পর সেখানে সামরিক শক্তি আরও বাড়াচ্ছে চীন। অভিযোগ উঠেছে নিজেদের স্বার্থে গালওয়ান নদীর ধারাও পাল্টে দিতে শুরু করেছে তারা। এই পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় বিকল্প বিমান হামলা। কিন্তু পাহাড়ি এলাকায় বিমান হামলার সীমাবদ্ধতা কার্গিল যুদ্ধের সময়েই স্পষ্ট হয়েছিল। ওই ধরনের হামলায় নিজেদের সেনার হতাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর বিশেষ বাহিনী নামানো বা বিমান হামলার অর্থই হলো পুরোদস্তুর যুদ্ধ শুরু, যা চায় না দিল্লি। ফলে ভারতের হাতে আলোচনা ছাড়া সেই অর্থে অন্য কোনো উপায় নেই। যদি গত দুই দিনের আলোচনায় একটু অগ্রগতি হয়নি।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ন বলেছেন, গালওয়ান উপত্যকায় যে গভীর উদ্বেগজনক সংঘাত ঘটেছে, সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে দুই দেশই রাজি আছে। শান্তি সুরক্ষিত রাখা ও উত্তেজনা প্রশমনের লক্ষ্যে আলোচনা চলছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীল ও নিয়ন্ত্রণে।
কিন্তু চীন যেভাবে গালওয়ান উপত্যকাকে নিজেদের বলে দাবি তুলে সুর চড়াচ্ছে, তাতে তারা যে ভারতীয় ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করেছে সেটা প্রমাণ করাই ভারতের কাছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, চীন তার প্রতিবেশী অধিকাংশ দেশ যেমন- কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, রাশিয়া, মঙ্গোলিয়া, মায়ানমার সবার সঙ্গেই সীমান্ত সমস্যা জিইয়ে রাখে, যা তাদের সীমান্ত বিস্তারের দীর্ঘমেয়াদি নীতির অংশ। ফলে লাদাখের মাটিতে পরিকাঠামো গড়ে জাঁকিয়ে বসা চীনা সেনাদের ফিরে যাওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। চীনের এই মনোভাবের নিরিখে আলোচনায় কতটা কাজ হবে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
গত সোমবারের ঘটনার পরেই হতাহতের পাশাপাশি কতজন ভারতীয় সেনা নিখোঁজ, তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। সেনাবাহিনী সূত্রে শুক্রবার দাবি করা হয়, কোনো সেনা নিখোঁজ নেই। কিন্তু এত দেরি করে কেন মুখ খোলা হলো, সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সেনা সূত্রে আরও বলা হয়েছে, ৭৬ জন জওয়ান এখনও হাসপাতালে ভর্তি। তবে তাদের সবার অবস্থাই স্থিতিশীল। অন্তত ৫৮ জন আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কাজে যোগ দিতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
গত সোমবার রাতের সংঘর্ষে গুলি না চললেও, চীনা সেনা সদস্যরা পেরেক লাগানো লাঠি দিয়ে ভারতীয় সেনাদের ওপর হামলা চালায় বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। নিহত ভারতীয় সেনাদের দেহে তীক্ষ্ণ গভীর ক্ষত লক্ষ্য করা গেছে। পরে পেরেক লাগানো লাঠি উদ্ধারও করে ভারতীয় সেনা।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা