লাগামছাড়া পেঁয়াজের দাম
পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি না মেলায় দিনাজপুরের হিলিতে আবারো বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। একদিনের ব্যবধানে নিত্য এ পণ্যের দাম কেজিতে ২ টাকা বেড়েছে। একদিন আগে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭০ টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা বেড়ে ৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বাড়ায় তা সাধারণ মানুষের ওপর চাপ তৈরি করছে।
সরজমিনে হিলির বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে জানা যায়, বাজারের প্রত্যেকটি দোকানেই দেশীয় পেয়াজের যথেষ্ট সরবরাহ রয়েছে। কিন্তু তার পরও দাম বেড়েই চলেছে। আশরাফুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসের দাম বেড়েই চলেছে। যে পেঁয়াজ ২৫-৩০ টাকার মধ্যে ছিল, ঈদের পর থেকে তার দাম বাড়ছেই। বর্তমানে দাম ৭২ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। এখনই যে হারে দাম বাড়ছে কোরবানির ঈদে কী হবে তা বোঝা যাচ্ছে না।’
আরেক ক্রেতা নারগিস সুলতানা বলেন, ‘বাজারে যেভাবে দাম বাড়ছে, তাতে করে আমাদের পেঁয়াজ খাওয়াই ছেড়ে দিতে হবে। বাড়তি দামের কারণে আগে যেখানে এক কেজি কিনতাম, সেখানে এখন আধা কেজি কিনছি। আরো দাম বাড়লে পেঁয়াজ ছাড়াই তরকারি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।’
ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, সরবরাহ কম থাকার কারণে দাম বাড়ছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, ভারত থেকে যখন পেঁয়াজ আমদানির কথা হচ্ছে, তখন পেঁয়াজের দাম রাতারাতি কমে যাচ্ছে। তাহলে কি রাতারাতি পেঁয়াজের সররবাহ বেড়ে যাচ্ছে? এটি ব্যবসায়ীদের কারসাজি বলেও অভিযোগ করেন তারা।
হিলি বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী শাকিল খান বলেন, ‘ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় বেশ কিছুদিন ধরেই দেশীয় পেঁয়াজ দিয়েই চাহিদা মিটছিল। সরবরাহ ভালো থাকায় দাম কমতির দিকেই ছিল। সম্প্রতি দেশীয় পেঁয়াজের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠলে বাজার নিয়ন্ত্রণে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতির কথা জানিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রী। এ খবরে দেশের বিভিন্ন মোকামে মজুদ করা পেঁয়াজগুলো বাজারে ছাড়তে শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। এতে করে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় দাম কমতে শুরু করেছিল। কিন্তু কয়েকদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি না দেয়ায় মোকামগুলোয় আবারো পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।’
হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের পর থেকে দেশে পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। এমন অবস্থায় পেঁয়াজের সররবাহ স্বাভাবিক ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অনুরোধ জানিয়ে আসছি।’
হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপসহকারী সংগনিরোধ কর্মকর্তা ইউসুফ আলী বলেন, ‘গত ১৫ মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি আইপি দেয়া বন্ধ রেখেছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। এখন পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানিতে কোনো ধরনের অনুমতিপত্র বা আইপি ইস্যু করা হয়নি। আমদানির অনুমতি দিলেই বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হতে পারে।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর দিনাজপুরের সহকারী পরিচালক মমতাজ বেগম বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রুখতে ও দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আমাদের পক্ষ থেকে নিয়মিতভাবে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। কেউ যদি পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে আর্থিক জরিমানাসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’