লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি মেরামতের হিড়িক ঈদযাত্রায়

স্টাফ রিপোর্টার

উৎসব এলেই বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটাতে ছুটে যায় গ্রামের বাড়িতে। এতে যানবাহনের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। আর এই সুযোগে মহাসড়কগুলোতে বেড়ে যায় ফিটনেসবিহীন গাড়ির দৌরাত্ম্য। পুরোনো লক্কড়-ঝক্কড় গাড়িতে রং মাখিয়ে নামানো হয় সড়কে। ফিটনেসবিহীন এসব গাড়ি রাস্তায় বিকল হয়ে তৈরি হয় যানজট। এতে ঘরমুখো মানুষ পড়েন ভোগান্তিতে।

এবারও আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে পুরোনো ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির মেরামতের হিড়িক পড়েছে। পুরাতন এসব গাড়িগুলোকে নতুন রূপ দিতে মেকানিক ও ওয়ার্কশপে চলছে সাজসজ্জার কাজ। বাস চালকরাও স্বীকার করলেন ঈদ উপলক্ষে গাড়িগুলো মেরামত করা হচ্ছে।

গত এক মাস ধরে টাঙ্গাইলে গাড়ি মেরামতের ওয়ার্কশপগুলো ব্যস্ত সময় পার করছে। সকাল থেকে মাঝরাত পর্যন্ত চলছে গাড়ি মেরামতের কাজ। প্রকাশ্যে এসব গাড়ি মেরামতের কাজ চললেও যেন দেখার কেউ নেই। পুরোনো ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির কারণে মহাসড়কে যানজটের আশঙ্কাও করা হচ্ছে। তবে পুলিশ বলছে এ বছর ফিটনেসবিহীন গাড়ি মহাসড়কে চলতে দেওয়া হবে না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টাঙ্গাইলের পলিটেকনিক থেকে শুরু করে এলজিইডির মোড় পর্যন্ত অবস্থিত একাধিক গাড়ি মেরামতকারী প্রতিষ্ঠানে চলছে এমন কর্মযজ্ঞ। কেউ দুর্ঘটনায় বেঁকে যাওয়া গাড়ি ঝালাই দিয়ে মেরামত করছেন। আবার কেউ কেউ বহু বছরের পুরোনো গাড়ির গায়ে রং লাগিয়ে নতুন রূপে সাজাচ্ছেন। গাড়ির ইঞ্জিনেও কাজ করছেন অনেকেই। পুরো গাড়িই অনেককে মেরামত করতে দেখা গেছে। মূলত ঈদে যাত্রীদের দৃষ্টি কাড়তে এই আয়োজন।

ওয়ার্কশপের কর্মীরা বলছেন, প্রতিবছরই ঈদের এক-দেড় মাস আগে থেকে এমন শত শত গাড়ি গ্যারেজে আসে। তখন দিনরাত এক করে এসব গাড়ি মেরামত করা হয়। কোনো কোনোটা আবার রং করে নতুনের মতো করে দেওয়া হয়।

পরিবহন চালকরা বলেন, প্রতি বছরই তারা ঈদের আগে গাড়ি মেরামতসহ রঙের কাজ করান। আর গাড়ি নতুনের মতো না দেখালে যাত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায় না। তাই পুরাতন গাড়ি রঙিন করা হচ্ছে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ধলেশ্বরী গাড়ির চালক মঞ্জু খান বলেন, ঈদ উপলক্ষে পুরোনো গাড়ি মেরামত করাচ্ছি। পুরো গাড়ি মেরামত করতে ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা লাগবে। গাড়ির অনেক কিছুই নষ্ট হয়ে গেছে। তাই ১৫ দিন ধরে মেরামত করছি। আশা করছি ঈদযাত্রার আগেই গাড়ির মেরামতের কাজ শেষ হবে।

আর এস ট্রাভেলসের বাসচালক আইয়ুব আলী বলেন, ঈদ উপলক্ষে গাড়ি মেরামতের কাজ করছি। যাতে ঈদে গাড়ি চকচকে দেখা যায়। প্রতি রমজান মাসের আগেই গাড়ি মেরামতের কাজ করে থাকি। আমাদের গাড়িগুলোর ফিটনেস রয়েছে।

টাঙ্গাইল-গাজীপুর সড়কের লোকাল বাসের চালক খন্দকার মোস্তফা বলেন, ২১ দিন ধরে গাড়ি মেরামতের কাজ করছি। গাড়ির দুই সাইড ভেঙে গেছে। গাড়ির সিট, ভেতরের অংশ, টিনগুলো নতুন করে দেওয়া হচ্ছে। এতে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা খরচ হবে।

ওয়ার্কশপের কর্মচারী মিন্টু মিয়া বলেন, ঈদ উপলক্ষে আমরা গাড়ি রং করছি। এখন দিনরাত সমানতালে ব্যস্ত সময় পার করছি। বর্তমানে গাড়ি মেরামতের কাজের খুব চাপ রয়েছে। সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা একটানা কাজ করতে হচ্ছে।

সোহেল নামের এক কর্মচারী বলেন, ৪ থেকে ৫ জন মিলে একটি গাড়ি মেরামত করছি, যাতে করে ঈদযাত্রায় সড়কে গাড়ি চলতে পারে। এ কাজে আমরা বাড়তি টাকাও পাচ্ছি। অনেক সময় মধ্যরাত পর্যন্তও আমাদের কাজ করতে হয়।

তবে ফিটনেসবিহীন এসব গাড়ির ব্যাপারে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, স্বস্তিতে কীভাবে মানুষ বাড়ি যেতে পারে, সে লক্ষ্যে কাজ করছি। ঈদযাত্রার সময় কিছু ত্রুটিপূর্ণ ও লক্কড় ঝক্কড় গাড়ি মহাসড়কে দেখা যায়। এসব গাড়িগুলো অনেক সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে মহাসড়কে অনেক সময় যানজটের সৃষ্টি হয়। ফিটনেসবিহীন এসব গাড়ি যাতে মহাসড়কে যান চলাচল ব্যাহত করতে না পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *