রেকর্ড মূল্যস্ফীতির চাপে ইউরো অঞ্চল

স্টাফ রিপোর্টার

ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পর থেকেই অস্থিরতা চলছে জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের বাজারে। বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাঘাতও অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থায় ক্রমবর্ধমান রয়েছে ইউরো অঞ্চলের মূল্যস্ফীতি। চলতি মাসেও লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে পণ্য ও সেবার দাম। নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোকে বিপর্যস্ত অবস্থায় ঠেলে দেয়া মূল্যস্ফীতির চাপ আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। যদিও দ্বিতীয় প্রান্তিকে অঞ্চলটির অর্থনীতি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি গতিতে বেড়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাট জানিয়েছে, ইউরো মুদ্রা ব্যবহার করা ১৯ দেশে বার্ষিক মূল্যস্ফীতি জুলাইয়ে ৮ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। জুনেও এ বাড়ার হার ৮ দশমিক ৬ শতাংশ ছিল।

এপির খবর অনুসারে, কয়েক মাস ধরে ইউরো অঞ্চলের মূল্যস্ফীতি রেকর্ড ভেঙে চলেছে। এ হার ১৯৯৭ সালে ইউরো অঞ্চলে রেকর্ড শুরু হওয়ার পর থেকে সর্বোচ্চ উচ্চতায় রয়েছে। ক্রমবর্ধমান এ প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত সপ্তাহে ১১ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো সুদের হার বাড়ায়।

এদিকে দ্বিতীয় প্রান্তিকে ইউরো অঞ্চলের অর্থনীতি আগের প্রান্তিকের তুলনায় দশমিক ৭ শতাংশ প্রসারিত হয়েছে। যেখানে একই সময়ে মার্কিন অর্থনীতি সংকোচনের মুখোমুখি হয়েছে। পাশাপাশি বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিতে মন্দার ঝুঁকিও বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো ইউরো অঞ্চলের পূর্বাভাসও ঠিক তেমনই অন্ধকার। বিশ্লেষকরা বলছেন, পর্যটন খাত পুনরুদ্ধারের হাত ধরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আশাবাদী সংবাদের শেষ ঝলক হতে পারে। উচ্চমূল্যস্ফীতি, ক্রমবর্ধমান সুদের হার এবং যুদ্ধের কারণে তীব্র জ্বালানি সংকট চলতি বছরের শেষ দিকে ইউরো অঞ্চলকে মন্দার দিকে ঠেলে দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ইউরোপের ঐতিহ্যবাহী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চালক জার্মানি এরই মধ্যে স্থবির হয়ে পড়েছে। রুশ প্রাকৃতিক গ্যাসের ধারাবাহিক ঘাটতির কারণে ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির শিল্প খাত অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। ফ্রান্স দ্বিতীয় প্রান্তিকে পরিমিত দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়ে মন্দার ঝুঁকি এড়িয়েছে। যখন ইতালি ও স্পেনের অর্থনীতি যথাক্রমে ১ এবং ১ দশমিক ১ শতাংশ প্রসারিত হয়ে প্রত্যাশাকে ছাড়িয়েছে।

চলতি মাসে ইউরো অঞ্চলে জ্বালানির মূল্য গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৯ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। যদিও গত মাসে জ্বালানির দাম বাড়ার হার ছিল ৪১ দশমিক ৯ শতাংশ। আবার খাদ্য, অ্যালকোহল ও তামাকপণ্যের দাম ৯ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। এ হার গত মাসের চেয়ে বেশি। উচ্চ পরিবহন ব্যয়, পণ্য ঘাটতি এবং ইউক্রেনীয় পণ্য সরবরাহের অনিশ্চয়তার কারণে দাম আরো বেশি হারে বেড়েছে।

আইএনজি ব্যাংকের ইউরো অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ বার্ট কলিন বলেন, জুলাইয়ে আরেকটি মূল্যস্ফীতির চাপ দেখছি আমরা। এক্ষেত্রে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেও স্বস্তির কোনো লক্ষণ নেই।

যুক্তরাষ্ট্র চার দশকের সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে। বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি পরপর দুই প্রান্তিকে সংকুচিত হলেও ইউরোপে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। যদিও কর্মসংস্থানসহ কিছু সূচক ঊর্ধ্বমুখী থাকায় অর্থনীতিবিদরা বলছেন মার্কিন অর্থনীতি মন্দার মধ্যে নেই। ইউরোপের ঝুঁকি মূলত রুশ জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতার সঙ্গে যুক্ত। মস্কো ধীরে ধীরে প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ কমিয়ে দেয়ায় ওই অঞ্চলের কারখানা কার্যক্রম, শীতকালীন বিদ্যুৎ ও বাড়ি উষ্ণ রাখার মতো বিষয়গুলো অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।

ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের সহকারী অর্থনীতিবিদ মাইকেল ট্রান বলেন, গ্যাস সরবরাহে পতন এবং কয়েক মাস ধরে মূল্যস্ফীতি রেকর্ড উচ্চতায় রয়েছে। সব মিলিয়ে ইউরো অঞ্চল মন্দায় পড়তে যাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *