রুপির দর পতনে প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে
ডলারের বিপরিতে ভারতীয় রুপির দাম ব্যাপকভাবে কমে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে। ভারতের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। তাতে অসম প্রতিযোগিতায় পড়ছে এসব পণ্য। এতে বাংলাদেশী পণ্যের বিক্রি কমছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভারতে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি হোঁচট খেতে পারে। বেড়ে যেতে পারে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ।
কয়েক মাস ধরেই ভারতে ডলারের বিপরীতে রুপির দাম কমছে। চলতি বছরের শুরুতেও ৬৪ রুপিতে এক মার্কিন ডলার পাওয়া যেতো। বর্তমানে ১ মার্কিন ডলার কিনতে ৭৪ রুপির দরকার হয়। আগামী ৩ মাসে এটি বেড়ে ৭৬ রুপি হয়ে যেতে পারে বলে ভারতের ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা আশংকা করছেন।
রুপির বিপরীতে ডলারের দাম বাড়তে থাকায় ভারতে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যের দামও বাড়ছে।
এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ডলারের বিপরীতে রুপির দাম কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দুই ধরনের প্রভাব পড়বে। পার্শ্ববর্তী দেশে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যাদের সাথে প্রতিযোগিতা করে তারা তুলনামুলক সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে। এক্ষেত্রে আমাদের দেশ তাদের সাথে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাবে।
দ্বিতীয়ত, ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণে শিল্পের কাঁচামাল ও ভোগ্য পণ্য আমাদানি করে থাকে বাংলাদেশ। রুপির দাম কমায় এসব পণ্যের আমদানি ব্যয় কমবে। তবে ভোক্তারা কতটা সুফল পাবেন, তা নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট ব্যাবসায়ীদের উপর। এর পাশাপাশি বাংলাদেশী পর্যটক, চিকিৎসাসেবা গ্রহণকারী এবং ছাত্ররাও লাভবান হবে রুপির দর পতনের কারণে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত প্রতিবেশী দেশটিতে ১৯ কোটি ৫ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে রপ্তানি করছে ২০ কোটি ৭ লাখ ডলারের পণ্য।
এবিষয়ে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকশ্চারার এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমরা মনে করি ভারত পোশাক রপ্তানির জন্য বাংলাদেশের কাছে একটি বড় বাজার। কারণ সেখানে মধ্যবিত্ত লোকের সংখ্যা অনেক। কিন্তু হঠাৎ করে রুপির দাম কমে যাওয়ায় ভারত থেকে অর্ডারের পরিমাণ কমতে শুরু করেছে। আমরা ভাবতাম রপ্তানির দিক থেকে আমাদের পরবর্তী বৃহত্তম বাজার হবে ভারত। কিন্তু এই সমস্যা দীর্ঘমেয়াদী হলে সেই লক্ষ্য পূরণ হবে না।
ভারতে পণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রাণ আরএফএল এর মার্কেটিং ডিরেক্টর কামরুজ্জামান কামাল বলেন, রুপির দাম কমার কারণে ক্রমাগতভাবে ভারতের বাজারে আমাদের পণ্য চাহিদা কমেই চলেছে। কিন্তু বেশ কিছু দিন ধরে ভারতের বাজারে আমাদের পণ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে। ডলারের বিনিময়ে বাংলাদেশ থেকে পণ্য কিনে রুপিতে বিক্রি করতে হচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় পণ্যের তুলনায় এই দাম হয়ে যাচ্ছে অনেক বেশি। সে কারণেই মূলত টান পড়েছে রপ্তানিতে।