রাশিয়া থেকে চীনের কয়লা আমদানি ৫ বছরের সর্বোচ্চে
চলতি বছরের জুলাইয়ে রাশিয়া থেকে চীনের কয়লা আমদানি ১৪ শতাংশ বেড়ে পাঁচ বছরের সর্বোচ্চে দাঁড়িয়েছে। ইউক্রেনে আগ্রাসনের জেরে পশ্চিমা দেশগুলো যখন রাশিয়াকে বয়কট করছে তখন ছাড়কৃত মূল্যে রুশ জ্বালানি ক্রয় করছে চীন ও ভারতের মতো দেশ।
গতকাল প্রকাশিত চীনের শুল্ক বিভাগের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, গত মাসে রাশিয়া থেকে ৭৪ লাখ ২০ হাজার টন কয়লা আমদানি করেছে চীন। ২০২১ সালের একই মাসে যেখানে আমদানি হয়েছে ৬৪ লাখ ৯০ হাজার টন। ২০১৭ সালে তুলনামূলক উপাত্ত রাখা শুরুর পর দেশটির সর্বোচ্চ মাসিক কয়লা আমদানি হয়েছে জুলাইয়ে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও গত জুনে ৬১ লাখ ২০ হাজার টন কয়লা আমদানি করেছে চীন।
রাশিয়ার কয়লায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে শুধু চীন ও ভারতের মতো দেশগুলো সাশ্রয়ী মূল্যে রাশিয়ার পণ্য আমদানি সুবিধা গ্রহণ করেছে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখে কয়লা ও অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে বিক্রি করছে মস্কো। জুলাইয়ের শেষের দিকে রাশিয়ার তাপ কয়লা টনপ্রতি বিক্রি হয়েছে ১৫০ ডলারে। একই সময়ে অস্ট্রেলিয়ার নিউক্যাসল পোর্টে তাপ কয়লা বিক্রি হয়েছে প্রতি টন ২১০ ডলারে। শীত মৌসুমের মজুদ সামনে রেখে চতুর্থ প্রান্তিকে রাশিয়া কয়লা আমদানি বাড়াতে চায়।
জুলাইয়ে ইন্দোনেশিয়ার সাশ্রয়ী তাপ কয়লা রফতানি হয়েছে ১ কোটি ১৭ লাখ টন। গত জুনের তুলনায় যা ২২ শতাংশ বেড়েছে এবং গত বছরের একই মাসের তুলনায় বেড়েছে ৪০ শতাংশ। এদিকে দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কয়লা আমদানি কমিয়েছে চীন।
চলতি মাসে দক্ষিণাঞ্চলীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য ইন্দোনেশিয়ার কয়লার ক্রয়াদেশ বাড়িয়েছে চীন। দেশীয় কয়লার চেয়ে ইন্দোনেশিয়ায় কয়লা অনেক সাশ্রয়ী হওয়ায় এ কৌশল গ্রহণ করেছে এশিয়ার শীর্ষ অর্থনীতিটি। সাম্প্রতি খরা পরিস্থিতির কারণে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বড় আকারে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এতে বাধ্য হয়েই কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে চাপ বাড়ছে। চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো একেবারে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ঘরবাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহে এখন কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
সিচুয়ান প্রদেশের ৮০ শতাংশ বিদ্যুৎ আসত জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে। ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর তাপমাত্রায় ইয়াংশি নদীর অনেকাংশ শুকিয়ে গিয়েছে। ইয়াংশি উপত্যকায় খরার কারণে খাবার পানির সংকটও চরম হিসেবে দেখা দিয়েছে।
গত সপ্তাহে ইন্দোনেশিয়ার তাপ কয়লা টনপ্রতি ৭৮ ডলারে বিক্রি হয়েছে। চীনের শুল্ক বিভাগের উপাত্তে দেখা গিয়েছে, গত জুলাইয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে কোনো কয়লা আমদানি করা হয়নি।
বিশ্বের শীর্ষ কয়লা ব্যবহারকারী দেশ চীন। জুনে দেশটি রাশিয়ার কাছ থেকে ৬১ লাখ ২০ হাজার টন কয়লা আমদানি করে। মে মাসে আমদানি করা হয়েছিল ৫০ লাখ ১০ হাজার টন। এছাড়া গত বছরের জুনে আমদানির পরিমাণ ছিল ৫২ লাখ ৪০ হাজার টন।
শুল্ক বিভাগ বলছে, এ বছরের মার্চ থেকেই রাশিয়ার কয়লা আমদানি বাড়াচ্ছে চীন। বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম ব্যাপক বাড়লেও রাশিয়ান কার্গো বিক্রি হচ্ছে ব্যাপক মূল্যছাড়ে। পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করা থেকে সরে আসার ঘোষণা দেয়ার পরই মূল্যছাড় দেয় দেশটি।
ছয় হাজার কিলোক্যালোরি তাপমান সমৃদ্ধ রাশিয়ান কয়লা টনপ্রতি ১৭৩-১৭৬ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। অথচ একই তাপমান সমৃদ্ধ নিউক্যাসল বাজার আদর্শ কয়লার বর্তমান দাম টনপ্রতি ৪০০ ডলার।
এদিকে চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জানুয়ারি-মে) দেশটি ১৮১ কোটি টন কয়লা উত্তোলন করেছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় উত্তোলন ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ বেড়েছে। স্থানীয় বাজারে উত্তোলন বাড়ায় মোট আমদানি কমেছে। তাছাড়া কভিডজনিত বিধিনিষেধের কারণে স্থানীয় বাজারে চাহিদাও কম।