রাজস্বের ১৮ শতাংশ যাচ্ছে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে: গবেষণা

স্টাফ রিপোর্টার

দেশের মোট রাজস্ব আয়ের ১৮ শতাংশই যাচ্ছে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে। ফলে সরকার স্বাস্থ্য, শিক্ষার মতো সেবামূলক খাতে নজর দিতে পারছে না। তবে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ জিডিপির ৪২ শতাংশ, যা এখনও ঝুঁকিপূর্ণ নয়। ২০২১-২২ অথবছরে দেশি-বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ১৪৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার, যা জিডিপির ৪১ দশমিক ৪ শতাংশ।

বুধবার (২৯ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) কার্যালয়ে ‘ফিসক্যাল স্ট্যান্স অ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট: হয়ার ইজ বাংলাদেশ হেডেড’ শীর্ষক গবেষণা প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য উঠে আসে। গবেষণাটি প্রকাশ করেন কানাডার কনকর্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মাইনুল আহসান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন।

গবেষণায় উঠে এসেছে, বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা বিদেশি ঋণ নিয়ে সবচেয়ে বিপদে আছেন। স্বল্পমেয়াদি ঋণ আমাদের জন্য খুবই বিপজ্জনক। অন্যদিকে বাংলাদেশে এত বেশি ব্যাংক, এটি অর্থনীতির স্বাস্থ্যের জন্য খুবই খারাপ।

গবেষণায় বলা হয়, ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারের গ্যারান্টি ঋণের স্থিতি ছিল ৬২ বিলিয়ন ডলার। যা ছিল ওই সময় জিডিপির ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ। একই সময়ে দেশের অর্থ মন্ত্রণায় ও বিবিএসের তথ্যানুযায়ী, বিদেশি ঋণের পরিমাণ ৫১ বিলিয়ন ডলার।

অধ্যাপক সৈয়দ মাইনুল আহসান বলেন, বাংলাদেশে দীর্ঘদিন মূল্যস্ফীতি গড়ে ছিল ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে বলে এসেছে দেশে বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন করতে। কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানোর কথাও বলেছে তারা। কিন্তু সরকার বৈদেশিক ঋণের ব্যাপারেই সতর্ক ছিল বেশি। ফলে ঋণ ও বিদেশি সংস্থাগুলোর শর্ত মানতে গিয়ে ঋণের সুদহার বাড়াতে হয়েছে, কমেছে সঞ্চয়পত্র বিক্রির হার।

তিনি বলেন, আইএমএফের গবেষণায় উঠে এসেছে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ দেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছিল অথবা স্বল্পমেয়াদি ঋণ বন্ধ করেছিল। প্রথম কথা হলো সরকারের ব্যয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থায়ন করা উচিত নয়। তবে মুদ্রানীতির উদ্দেশ্যে সেকেন্ডারি মার্কেট থেকে সরকারি সিকিউরিটিজ ক্রয় করতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাছাড়া সরকারের কাছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিনিয়োগ নিয়মিত প্রকাশ করতে হবে।

এই অধ্যাপক মনে করেন, আমাদের অভ্যন্তরীণ দেনার হার অনেক বেশি। যার কারণে সঞ্চয়পত্রও তেমন একটা বিক্রি হয়নি। বিদেশি ঋণের সুদের হার কম। আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে এখনও এটি ঠিক আছে।

গবেষণায় বলা হয়, দুই ধরনের ঋণ আছে। একটি বাৎসরিক ঋণ, অন্যটি জনকল্যাণমূলক ঋণ। তবে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বাংলাদেশ জিডিপির তুলনায় ৫৫ শতাংশ ঋণ নিতে পারবে।

অনুষ্ঠানে ড. বিনায়ক সেন বলেন, আমরা স্থিতিশীল ঋণের মধ্যে আছি। যুদ্ধ আমাদের দেশে কিছুটা শঙ্কা সৃষ্টি করেছে। তবে সেটা কাটিয়ে উঠেছি। কিন্তু যুদ্ধের পরিস্থিতি আরও বেশি হলে আমাদের জন্য বিপজ্জনক হবে। আমরা শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তান হবো না এটা সত্য, কিন্তু সুদ পরিশোধে আমাদের অনেক রাজস্ব চলে যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *