রমজানে ইফতারের পরিবর্তে নগদ অর্থ প্রদান করার আহবান- ক্যাব চট্টগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার

পবিত্র রমজান মাস এলেই দেশের কিছু ধনাঢ্য ব্যক্তি, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতা আকারে ইফতার সামগ্রী বিতরন করেন। কিন্তু পুরো রমজান মাস জুড়ে সাধারন দরিদ্র মানুষ যেন ইফতার ও সেহেরী স্বাশ্রয়ী মূল্যে খেতে পারেন তার জন্য কিছু না করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বা সুনাম অর্জনের জন্য এই আয়োজন করলেও তাতে সাধারন মানুষের একবেলা ইফতার জুটলেও পুরো রমজান মাসের ইফতার সামগ্রীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উর্ধ্বগতিতে জনজীবন অতিষ্ঠ, সেখানে তাঁরা কোন ভূমিকা রাখছেন না। তাই এ ধরনের ইফতার বিতরন সাধারন মানুষের জীবন যাত্রায় সহায়ক না হয়ে দুর্দশার কারন হয়ে দাড়িয়েছে।

অর্থ সরবরাহ করা হলে দরিদ্র মানুষ নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী কেনা-কাটা করতে পারতেন। অথচ দান-খয়রাত ও জাকাত দরিদ্র মানুষের প্রতি করুনা নয়, এটা তাদের অধিকার; ইফতার ও যাকাতের কাপড় বিতরণের সময় প্রতিবছর বিপুল পরিমান প্রাণহানি ঘটে। ইফতার সামগ্রী বিতরণকালে অনেক সময় অপচয় ও চুরি হয়। অন্যদিকে রাস্তায় প্রচন্ড খানা খন্দক, গর্তের কারনে রমজানে পুরো নগর জুড়ে অসহনীয় যানজট, গণপরিবহনে বিপুল ভাড়া হাঁকানো, রাস্তার উপর ময়লার স্তুপ, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসের প্রাপ্যতাসহ নানা নাগরিক ভোগান্তির জালে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পরেছে। এ জন্য দায়িত্বপ্রাপ্তরা নাগরিক ভোগান্তি নিরসনে কোন উদ্যোগ না নিয়ে সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য ইফতার সামগ্রী বিতরন করছেন। রমজানে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখা, যানজট ও জনগণের নিরাপদ যাতায়ত নিশ্চিত করতে রাস্তা দ্রুত সংস্কার, খানা খন্দক মেরামত, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির প্রাপ্যতাসহ জনভোগান্তি নিরসনে ভূমিকা রাখার আহবান জানিয়েছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষনকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও মহানগর কমিটি।

সোমবার (৪ এপ্রিল ২০২২) এক বিবৃতিতে ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, মহানগর সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু ও সাধারন সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, দক্ষিন জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান উপরোক্ত দাবি জানান।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, রমজানকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম মহানগরী ও বিভিন্ন উপজেলাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাটে বাজারে বিএসটিআই’র অনুমোদনহীন নকল পণ্যে সয়লাব, বিশেষ করে ঘি, মসলা, সেমাই, হোটেল রেস্তোরায় নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ভেজাল, পঁচা-বাসী খাবার পরিবেশন, ফরমালিন ও সার মিশ্রিত মাছ, ফলমুল-শাক সবজিতে ক্ষতিকর ক্যামিকেল মিশানো, ওজনে কম দেয়া, গরুর মাংশ বলে মহিষের মাংশ প্রদান, রাস্তার উপর খোলা ইফতারী বিক্রি, বিএসটিআইর সিল ছাড়া ওজন স্কেল, বাটখারা ব্যবহার করে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী সাধারন মানুষের জীবনকে মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। ফলে মাছে ফরমালিন, সার মিশ্রণ, ফল-শাকসবজিতে ফরমালিনসহ বিভিন্ন ক্যামিকেল মিশানোর কারনে বাজারের কোন কিছুই এখন মানুষ নিরাপদে-নির্ভয়ে খেয়ে বাঁচার সুযোগ নেই। ভেজালকারী ও ক্যামিকেল মিশ্রণকারীরা বর্তমানে সন্ত্রাসীদের থেকে ভয়ংকর সন্ত্রাসীতে পরিণত হয়েছে। তাদের মানববিধংসী তৎপরতার কারনে হাজার হাজার মানুষ অকালে মৃত্যবরণ করছে। অথচ এ সমস্ত ভেজাল ও অনিয়ম দেখার দায়িত্বে নিয়োজিত জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিএসটিআই, সিটিকর্পোরেশনের স্যানিটারী ইন্সপেক্টর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, কারখানা ও দোকান পরিদর্শন পরিদফতর, পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনের নিরবতার কারনে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এ ধরনের জঘন্য অপরাধে জড়িত হচ্ছে। একদিকে মুনাফাশিকারী কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে এবং সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে জনগণের পকেট কাটছে। অন্যদিকে সাধারণ ক্রেতারা ক্রমাগত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, আর নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করছে। তাই এখন সময় এসেছে অসাধু ব্যবসায়ী ও মজুতদারদের পণ্য বয়কট করা ও তাদেরকে স্থানীয় ভাবে প্রতিহত করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *