যে সব পণ্যে ভ্যাট ৫ শতাংশ হচ্ছে

ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভ্যাটের বহুস্তর রেখেই মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আইন সংশোধন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর মধ্যে তিনটি স্তরে পণ্য ও সেবার তালিকা চূড়ান্তও করেছে সংস্থাটি। এতে অধিকাংশ পণ্যেই ৫ শতাংশ হচ্ছে ভ্যাটের হার।

উচ্চভ্যাটের হার কমিয়েও আনা হয়েছে কিছু পণ্য ও সেবায়। ইন্টারনেট সংস্থা, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও ইনডেন্টিং সংস্থার বিদ্যমান ভ্যাটের হার কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে।

এনবিআর সূত্র জানায়, ৫ শতাংশ ভ্যাটের আওতায় মোট পণ্য ও সেবা রয়েছে ৯১টি। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে তরল দুধ থেকে গুঁড়ো দুধ উৎপাদন, গুঁড়ো মরিচ, ধনিয়া, হলুদ, আদা বা এসব মসলার মিশ্রণ, র্যাপসিডস অয়েল, ক্যানোলা অয়েল ও সরিষার তেল। মেশিনে প্রস্তুত বিস্কুট, হাতে তৈরি বিস্কুট (প্রতি কেজি ১৫০ টাকা মূল্যমানের ঊর্ধ্বে), হাতে তৈরি কেক (প্রতি কেজি ১৫০ টাকা মূল্যমানের ঊর্ধ্বে), আচার (বোতলজাত ও প্যাকেটজাত), চাটনি ও টমেটো পেস্ট/কেচাপ/সসের (বোতলজাত ও প্যাকেটজাত) ভ্যাটও ৫ শতাংশ প্রস্তাব করেছে এনবিআর। একই হারে ভ্যাট প্রযোজ্য হবে আমসত্ত্ব (ম্যাংগো বার), আমের জুস, আনারসের জুস, পেয়ারার জুস ও তেঁতুলের জুস। বড়পুকুরিয়ায় উৎপাদিত কয়লা, পোড়া বা ব্যবহারের অযোগ্য ট্রান্সফরমার অয়েল (পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে), লুবব্লেন্ডিং অয়েল বা রাবার প্রসেসিং অয়েল, এলপি গ্যাস, বাল্ক ইম্পোর্টেড পেট্রোলিয়াম বিটুমিন, বিআরটিএকে সরবরাহ করা লেমিনেটেড ড্রাইভিং লাইসেন্স ও প্লাস্টিকের তৈরি সব ধরনের টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, গৃহস্থালি সামগ্রী, হাইজেনিক ও টয়লেট সামগ্রীর মতো যেকোনো পণ্যে (টিফিন বক্স ও পানির বোতল ব্যতীত) ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রযোজ্য হবে। সব ধরনের পেপার মিলে উৎপাদিত ক্রিম লেইড বা হোয়াইট রাইটিং পেপার, হোয়াইট রোল্ড পেপার, হোয়াইট প্রিন্টিং পেপার, লাইনার পেপার, হোয়াইট লাইনার পেপার, ক্রাফট লাইনার পেপার, মিডিয়াম পেপার, কিচেন টাওয়েল (২৪-২৬ জিএসএম), টয়লেট টিস্যু (১৮-২৪ জিএসএম), ন্যাপকিন টিস্যু (২০-২৪ জিএসএম), ফেসিয়াল টিস্যু বা পকেট টিস্যু (১২-১৬ জিএসএম) ও এক্সারসাইজ বুক/স্পাইরাল নোট বুক/খাতার (৪৫ থেকে তদূর্ধ্ব জিএসএম) ক্ষেত্রেও ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য হবে। একই হারে ভ্যাট দিতে হবে কটন ইয়ার্ন বর্জ্য, যা হার্ডওয়েস্ট নামে পরিচিত ও কাপড় তৈরিতে ব্যবহার হয় না এমন কটন ইয়ার্ন টুইস্ট ও থ্রেড, ওয়েস্ট গ্রে-ডেনিম, কৃত্রিম আঁশ (ম্যান মেড ফাইবার) এবং অন্যান্য আঁশের সংমিশ্রণে তৈরি ইয়ার্ন, যার মধ্যে কৃত্রিম আঁশের আধিক্য রয়েছে। কৃত্রিম আঁশ দ্বারা তৈরি ফ্যাব্রিকস, কঠিন শিলা, ফেরো-ম্যাঙ্গানিজ ও ফেরো-সিলিকো-ম্যাঙ্গানিজ অ্যালয়, ফেরো-সিলিকন অ্যালয়, স্ক্র্যাপ বা শিপ স্ক্র্যাপ, এইচআর কয়েল থেকে সিআর কয়েল, সিআর কয়েল থেকে জিপি শিট, সিআর কয়েল থেকে জিপি শিট বা কয়েল (রঙিন), সিআর কয়েল থেকে সিআই শিট, সিআর কয়েল থেকে সিআই শিট (রঙিন), এইচআর কয়েল থেকে জিপি শিট, এইচআর কয়েল থেকে জিপি শিট বা কয়েল (রঙিন), এইচআর কয়েল থেকে সিআই শিট, এইচআর কয়েল থেকে সিআই শিট (রঙিন), জিআই ওয়্যার, তারকাঁটা, টোপ তারকাঁটা, বিভিন্ন সাইজের ও প্রকারের স্ক্রু, জয়েন্ট (কানেক্টর), নাট, বোল্ট, ইলেকট্রিক লাইন হার্ডওয়্যার ও পোল ফিটিংস, যা এমএস ও স্টিল দ্বারা তৈরি, অ্যালুমিনিয়াম ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি কিচেন বা অন্যান্য গৃহস্থালি তৈজসপত্রেও একই হারে ভ্যাট প্রস্তাব করেছে এনবিআর।

৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রযোজ্য হবে এমন অন্য পণ্যগুলোর মধ্যে আছে স্টেইনলেস স্টিলের স্ট্রিপ থেকে প্রস্তুত ব্লেড ও কার্বন স্টিলের স্ট্রিপ থেকে প্রস্তুত ব্লেড, বাংলাদেশ ডিজেল প্লান্ট লি. থেকে তৈরি ডিজেল ইঞ্জিন, ৫ থেকে ২০০০ কেভিএ বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার, ১ থেকে ৫০ ওয়াটের অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বাল্ব, টিউব লাইট (১৮ ও ৩৬ ওয়াট), বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লিমিটেডের উৎপাদন পর্যায়ে রেট্রো রিফ্লেক্টিভ ভেহিকল নাম্বার প্লেট, বিআরটিএর সরবরাহ পর্যায়ে ভেহিকল নাম্বার প্লেট ও ভেহিকল ওনারশিপ কার্ড, বাস (সাধারণ ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত), মিনিবাস, ট্রাক, ট্রাক ভ্যান, পিক-আপ, ২০ ধরনের ল্যান্ডিং ক্রাফট, পণ্য ও যাত্রীবাহী যান্ত্রিক নৌযান, চশমার প্লাস্টিক ও মেটাল ফ্রেম, প্লাস্টিক ও মেটাল ফ্রেমযুক্ত সানগ্লাস, প্লাস্টিক ও মেটাল ফ্রেমযুক্ত রিডিংগ্লাস, নারকেলের ছোবড়া থেকে তৈরি ম্যাট্রেস। এসব পণ্যের অধিকাংশেই এখনো ৫ শতাংশ ভ্যাট ধার্য আছে।

ইন্টারনেট ও ইনডেন্টিং সংস্থায় বর্তমানে ভ্যাট ধার্য আছে ১৫ শতাংশ। এছাড়া ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ৮ এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস ও লঞ্চে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হয়। আগামী বাজেটে এসব সেবার ভ্যাটও ৫ শতাংশ প্রস্তাব করেছে এনবিআর। এছাড়া আসবাবের বিপণন কেন্দ্র, স্বর্ণকার ও রৌপ্যকার এবং স্বর্ণ ও রৌপ্যের দোকানদার এবং স্বর্ণ পাকাকারী, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লঞ্চ সার্ভিস, পরিবহন ঠিকাদার (পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য), বিদ্যুৎ বিতরণকারী ও তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবার ভ্যাটও ৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে।

ভ্যাটের এ হারে দেশে দ্রব্যমূল্য বাড়বে না বলে মনে করছে এনবিআর। সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভোক্তাদের ওপরও করের বাড়তি চাপ পড়বে না। আইনে করযোগ্য সরবরাহ ও করযোগ্য আমদানির ক্ষেত্রে ভ্যাটের হার হবে ১৫ শতাংশ। এর বাইরে সরকার জনস্বার্থে তৃতীয় তফসিলের মাধ্যমে ভ্যাটের হার কমানো বা করের পরিমাণ নির্ধারণ করার সুযোগ রাখা হয়েছে আইনে। এর পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর আইনটির সংশোধনীতে তৃতীয় তফসিলের মাধ্যমে তিন স্তরে ৫, সাড়ে ৭ ও ১০ শতাংশ ভ্যাট আরোপযোগ্য পণ্যের চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করেছে। এছাড়া জনস্বার্থে পর্যালোচনা করে পণ্যে বা সেবায় ভ্যাটের হার নির্ধারণ করে এসআরও জারি করবে এনবিআর।

সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য এমন ১২টি পণ্য ও সেবার তালিকা করেছে এনবিআর। এগুলো হলো সেলফ কপি পেপার, ডুপ্লেক্স বোর্ড বা কোটেড পেপার, সিগারেট বা বিড়ি পেপার, সিমপ্লেক্স পেপার, প্যাকিং পেপার ও কালারড পেপার। এ হারে ভ্যাট প্রযোজ্য হবে নন-এসি হোটেল ও রেস্তোরাঁ, নির্মাণসামগ্রী, আসবাবের উৎপাদক, জোগানদার, নিলামকৃত পণ্যের ক্রেতা, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও থিম পার্ক, নিজস্ব ব্র্যান্ডসংবলিত তৈরি পোশাক বিপণন এবং নিজস্ব ব্র্যান্ড ব্যতীত তৈরি পোশাক বিপণন, সোস্যাল মিডিয়া ও ভার্চুয়াল বিজনেসেও।

এর আগে নন-এসি রেস্তোরাঁয় ভ্যাট ছিল ৭ শতাংশ এবং নন-এসি হোটেল ও রেস্তোরাঁ একসঙ্গে থাকলে ভ্যাট ছিল ১৫ শতাংশ। এছাড়া অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও থিম পার্কে ভ্যাট ছিল ১৫ শতাংশ, আসবাবের উৎপাদন পর্যায়ে ৭ শতাংশ ও নিজস্ব ব্র্যান্ডসংবলিত তৈরি পোশাক বিপণন এবং নিজস্ব ব্র্যান্ড ব্যতীত তৈরি পোশাক বিপণন ও সোস্যাল মিডিয়া ও ভার্চুয়াল বিজনেসে ৫ শতাংশ করে ভ্যাট ছিল।

২০টি পণ্য ও সেবায় ১০ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রস্তাব করেছে এনবিআর। ১০ শতাংশ ভ্যাট আরোপযোগ্য পণ্যগুলো বৈদ্যুতিক খুঁটি ও ইলেকট্রিক পোল (স্টিল প্লেট দ্বারা উৎপাদিত)। একই হারে ভ্যাট আরোপ হতে যাচ্ছে মোটরগাড়ির গ্যারেজ ও ওয়ার্কশপ, ডকইয়ার্ড, ছাপাখানা, নিলামকারী সংস্থা, যান্ত্রিক লন্ড্রি, চলচ্চিত্র স্টুডিও, চলচ্চিত্র প্রদর্শক (প্রেক্ষাগৃহ), চলচ্চিত্র পরিবেশক, মেরামত ও সার্ভিসিং, সিকিউরিটি সার্ভিস, স্বয়ংক্রিয় বা যন্ত্রচালিত করাতকল, খেলাধুলা আয়োজক, পরিবহন ঠিকাদার (পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য ব্যতীত), বোর্ডসভায় যোগদানকারী, টেইলারিং শপ ও টেইলার্স, ভবনের মেঝে ও অঙ্গন পরিষ্কার বা রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থা, লটারির টিকিট বিক্রয়কারী এবং সামাজিক ও খেলাধুলাবিষয়ক ক্লাব।

বর্তমানে যান্ত্রিক লন্ড্রি, বোর্ডসভায় যোগদানকারী, নিলামকারী সংস্থা, মেঝে ও অঙ্গন পরিষ্কার বা রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থা, ছাপাখানা, চলচ্চিত্র স্টুডিও, চলচ্চিত্র প্রদর্শক, চলচ্চিত্র পরিবেশক, সিকিউরিটি সার্ভিস, স্বয়ংক্রিয় বা যন্ত্রচালিত করাতকল, খেলাধুলা আয়োজক, লটারির টিকিট বিক্রিকারী এবং সামাজিক ও খেলাধুলাবিষয়ক ক্লাবের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য রয়েছে।

এছাড়া এনবিআরের প্রস্তাবনায় টাকায় সুনির্দিষ্ট ভ্যাট আরোপযোগ্য পণ্যের মধ্যে রয়েছে নিউজপ্রিন্ট প্রতি টনে করের পরিমাণ ১ হাজার ৬০০ টাকা, যন্ত্রের সাহায্য ব্যতীত সাধারণ ইট প্রতি হাজারে ৪৫০, যান্ত্রিক পদ্ধতিতে তৈরি সাধারণ ইট প্রতি হাজারে ৫০০, যন্ত্রের সাহায্যে তৈরি প্রথম গ্রেডের তিন থেকে ১৭ ছিদ্রবিশিষ্ট ইট প্রতি হাজারে ৭০০, দ্বিতীয় গ্রেডে প্রতি হাজারে ৭০০, ব্রিকস চিপস প্রতি হাজারে ৭০০ ও মিকাড ব্যাটস প্রতি হাজারে ৫০০ টাকা। স্টিল খাতে এমএস প্রডাক্ট প্রতি টনে ২ হাজার টাকা, বিলেট ও ইনগট প্রতি টনে ২ হাজার, বিলেট থেকে প্রস্তুত করা এমএস পণ্য প্রতি টন ২ হাজার, গর্দা বা মেলটেবল স্ক্র্যাপ থেকে তৈরি ইনগট বা বিলেট এবং এ ইনগট বা বিলেট থেকে প্রস্তুত এমএস পণ্য প্রতি টনে ২ হাজার টাকা।

কৃষিজাত পণ্যে ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া জীবন্ত গবাদিপশু, পাখি, মাংস, লবণ পানিতে সংরক্ষিত মাছ, শামুক বা কাঁকড়াজাতীয় ব্যতীত অন্যান্য অমেরুদণ্ডী প্রাণী, দুধ ও ননি, খোলকসহ পাখির ডিম, প্রাকৃতিক মধু, অপ্রক্রিয়াজাত মানুষের চুল, হাতির দাঁত, পাখির ঠোঁট প্রভৃতি পণ্যেও ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হতে পারে।

এছাড়া নতুন ভ্যাট আইনে বার্ষিক টার্নওভারের সীমা ৮০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩ কোটি টাকা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে টার্নওভার ট্যাক্স হারও বাড়ানো হচ্ছে। আগামী বাজেটে এ হার ১ শতাংশ বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করা হতে পারে। বর্তমানে এ হার ৩ শতাংশ। ফলে ৩ কোটি টাকার বেশি যাদের টার্নওভার রয়েছে, তাদের ১ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি হারে ভ্যাট দিতে হবে। ভ্যাট অব্যাহতির সীমা ৩০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৫০ লাখ টাকা করা হচ্ছে। অর্থাৎ বছরে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হলে ওই প্রতিষ্ঠানকে কোনো ভ্যাট দিতে হবে না।

নতুন ভ্যাট আইন সম্পর্কে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, নতুন ভ্যাট আইন সংশোধন ও বাস্তবায়ন নিয়ে সরকারের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। সরকার আমাদের আশ্বস্ত করেছে, নতুন আইনে এমন কিছু থাকবে না, যাতে ব্যবসায়িক পরিবেশে কোনো সমস্যা হয়। তার পরও যদি অসংগতি থাকে, আমরা সরকারের সঙ্গে আবারো আলোচনায় বসব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *