যে কারণে প্রভাব পড়তে পারে বৈশ্বিক এলএনজি বাণিজ্যে

জ্বালানি পণ্য রফতানিকারকদের জোট অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপেক)। জোটের সঙ্গে অর্ধশতকের বেশি সময় ধরে চলমান সম্পর্কের ইতি টানার ঘোষণা দিয়েছে উপসাগরীয় দেশ কাতার।

এর প্রভাব পড়তে পারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) বৈশ্বিক বাণিজ্যে। বিশ্লেষকদের মতে, ওপেকভুক্ত দেশ হলেও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানিতে কাতারের ভূমিকা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।

তবে দেশটি বিশ্বের শীর্ষ এলএনজি রফতানিকারক হিসেবে পরিচিত। এ কারণে কাতারের ওপেক ছাড়ার কারণে বৈশ্বিক এলএনজি খাতে এর প্রভাব পড়ার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। এ সিদ্ধান্তের কারণে সৌদি আরব ও রিয়াদের মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে বিদ্যমান তিক্ততা বাড়লেও কাতার থেকে এলএনজি রফতানি বাড়তে পারে। সৌদি অবরোধের মুখে অর্থনৈতিক বিকাশ টিকিয়ে রাখতে এ সুযোগটিই কাজে লাগাতে চাইছে কাতার। খবর রয়টার্স, ব্লুমবার্গ ও অয়েলপ্রাইসডটকম।

ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ওপেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানিতে কাতারের অবস্থান ১১তম। এ জোটের আওতায় সৌদি আরব সবচেয়ে বেশি জ্বালানি তেল রফতানি করে। ২০১৭ সালে দেশটি থেকে প্রতিদিন গড়ে ১ কোটি ৭ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি হয়েছে।

বিপরীতে একই সময়ে কাতার থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানির দৈনিক গড় পরিমাণ ছিল সাকল্যে ৬ লাখ টন। অর্থাৎ জ্বালানি পণ্যটি রফতানিতে সৌদি আরবের তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে কাতার।

শীর্ষ রফতানিকারক হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই ওপেকে সৌদি আরবের কর্তৃত্ব বজায় রয়েছে। জোটের বৈঠক, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন সময় ওপেকে সৌদি আরবের কর্তৃত্ব ও প্রাধান্য প্রকাশ পেয়েছে।

বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ক্রমাগত দরপতনের লাগাম টানতে জ্বালানি পণ্যটির বৈশ্বিক উত্তোলন কমানোর পরিকল্পনা করছে ওপেক। এ পরিকল্পনাও এসেছে সৌদি আরবের নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকেই।

রাশিয়াসহ ওপেকভুক্ত ও বহির্ভূত দেশগুলো একমত হলে আগামী বছর নাগাদ অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক উত্তোলন বর্তমানের তুলনায় কমিয়ে আনা হতে পারে। এ পরিকল্পনার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য বৈঠক ডেকেছে ওপেক।

অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় এ বৈঠক হতে যাচ্ছে। তবে বৈঠকের আগেই কাতারের জ্বালানিমন্ত্রী সাদ আল-কাবি ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি কাতার ওপেক থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিতে পারে বলে ঘোষণা দেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভূমিকা উন্নত করার উপায় পর‌্যালোচনা এবং নিজস্ব গ্যাস শিল্পের দিকে মনোযোগসহ দীর্ঘমেয়াদী কৌশল পরিকল্পনা প্রণয়নের অংশ হিসেবে কাতার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ওপেক প্রতিষ্ঠা পায় ১৯৬১ সালে। ওই বছর থেকেই কাতার ওপেকের সদস্য। অর্ধশতকের বেশি সময় ধরে চলা এ সম্পর্কে ইতি টানার পরিকল্পনা মূলত রাজনৈতিক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। লন্ডনভিত্তিক এনার্জি আসপেক্টসের বিশ্লেষক অমৃতা সেন বলেন, ওপেকভুক্ত হলেও জ্বালানি তেল রফতানিতে কাতারের অবদান নগণ্য।

বরং দেশটি এলএনজি রফতানিতে নেতৃত্বের আসনে রয়েছে। তাই দোহা ওপেক ছাড়লেও জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক রফতানিতে বড় কোনো প্রভাব পড়বে না। এটাই প্রমাণ করে বাণিজ্যিক চিন্তা থেকে নয়, বরং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট থেকে কাতার ওপেক ছাড়ার পরিকল্পনা করেছে।

২০১৭ সালে কাতার থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে ১০ হাজার ৩৩৬ কোটি ঘনমিটার এলএনজি রফতানি হয়েছে। সৌদি আরব ও মিত্র দেশগুলোর অবরোধের জের ধরে দেশটির এলএনজি রফতানি খাত প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে শুরু করেছে।

এ পরিস্থিতি কাতারকে ওপেক ছাড়ার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেছে বলে মনে করছেন অমৃতা সেন। তিনি বলেন, রিয়াদ-দোহার সম্পর্ক সবচেয়ে তিক্ত অবস্থানে রয়েছে। এ কারণে ওপেক ছাড়লে কাতারকে সৌদি আরবের নেতৃত্ব মেনে চলতে হবে না। একই সঙ্গে ওপেকের সিদ্ধান্ত মেনে জ্বালানি তেল উত্তোলন কমানোর বাধ্যবাধকতাও থাকছে না।

তাই এ মুহূর্তে ওপেকের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ কাতারের অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য সবচেয়ে লাভজনক। বিপরীতে দেশটি এলএনজি উৎপাদন ও রফতানিতে বাড়তি মনোযোগ দিলে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি পণ্যটির সরবরাহ বাড়াবে। ফলে আগামী দিনগুলোয় এলএনজির দাম কমে আসতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *