যে কারণে ইন্দোনেশিয়ায় এত সুনামি হয়

ইন্দোনেশিয়ায় সুন্দা প্রণালীর উপকূলবর্তী শহরগুলোতে যে বিধ্বংসী সুনামি রাতের বেলা আঘাত হেনেছে কর্মকর্তারা বলছেন সম্ভবত আনাক ক্র্যাকাতোয়া আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের পর সমুদ্রের তলদেশের ভূমিধস থেকেই এই সুনামির উৎপত্তি।

এই সুন্দা প্রণালী জাভা আর সুমাত্রা দ্বীপের মাঝখানে এবং জাভা সাগর এই প্রণালীর মাধ্যমে যুক্ত ভারত মহাসাগরের সাথে। সুনামিতে প্রাণ হারিয়েছে বহু মানুষ, ধ্বংস হয়ে গেছে অনেক ঘরবাড়ি, উপড়ে গেছে গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি, ভেসে গেছে গাড়ি ও মানুষ।

কীভাবে এই সুনামির উৎপত্তি?

অগ্ন্যুৎপাত বিশেষজ্ঞ জেস ফিনিক্স বিবিসিকে বলেছেন, যখন আগ্নেয়গিরি থেকে উদ্গীরণ শুরু হয়, তখন উত্তপ্ত ম্যাগমা ভূগর্ভ থেকে ঠেলে ওপরে ওঠে। এর ফলে অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা পাথরগুলো ভাঙতে শুরু করে, যার ফলে ঘটতে পারে ভূমিধস।

আনাক ক্র্যাকাতোয়া আগ্নেয়গিরির কিছু অংশ রয়েছে সাগরের নিচে। তিনি বলছেন “সে কারণে এক্ষেত্রে ভূমিধস হয়েছে সমুদ্রের তলদেশে। এবং এর ফলে সাগরে তৈরি হয়েছে প্রবল জলোচ্ছ্বাস।” এর থেকেই সুন্দা প্রণালীতে সুনামি সৃষ্টি সম্ভব বরে তিনি মনে করছেন।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আনাক ক্র্যাকাতোয়া আগ্নেয়গিরিকে সক্রিয় হতে দেখা গেছে। ইন্দোনেশিয়ার জিওলজিক্যাল সংস্থা বলছে, শুক্রবার রাতে ওই আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাত হয়েছে দু মিনিট ১২ সেকেণ্ড ধরে। এর ফলে পাহাড়ের মাথায় ৪০০ মিটার উপর পর্যন্ত তৈরি হয়েছিল ছাইয়ের মেঘ।

ইন্দোনেশিয়া কি সুনামি-প্রবণ?

ইন্দোনেশিয়ায় সুনামির বড়ধরনের আশঙ্কা রয়েছে। কারণ দ্বীপটি রিং অফ ফায়ারের (অগ্নি-বলয়) মধ্যে অবস্থিত। গোটা প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকা যে বলয়ের মধ্যে তাতে ঘন ঘন ভূমিকম্প ও অগ্ন্যুৎপাত ঘটার আশঙ্কা যে বৃত্তের মধ্যে তাকে বলা হয় অগ্নি বলয় কিংবা রিং অফ ফায়ার।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়াসি দ্বীপে শক্তিশালী এক ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছিল দু হাজারের বেশি মানুষ। ওই ভূমিকম্পের কারণেও উপকূলীয় পালু শহরকে গ্রাস করেছিল এক বিধ্বংসী সুনামি।

এর আগে ২০০৪ সালে ২৬শে ডিসেম্বর, ভারত মহাসাগরে শক্তিশালী ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট একের পর এক প্রবল জলোচ্ছ্বাসে ১৪টি দেশে প্রাণ হারিয়েছিল প্রায় ২ লাখ ২৮ হাজার মানুষ। যার অধিকাংশই ইন্দোনেশিয়ার। তবে অগ্ন্যুৎপাতের কারণে এ ধরনের সুনামির নজির তুলনামূলক হিসাবে কম।

ক্র্যাকাতোয়া- কতটা বিপদজনক?

আনাক ক্র্যাকাতোয়া নতুন দ্বীপ। ক্র্যাকাতোয়া আগ্নেয়গিরির উদ্গীরণ থেকে এর জন্ম ১৯২৭ সালে। ১৮৮৩ সালের আগস্টে ক্র্যাকাতোয়ায় যে অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিল তা পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাত হিসাবে নথিভুক্ত হয়ে আছে। কী ঘটেছিল সেই অগ্ন্যুৎপাতের ফলে-

  • আঘাত হেনেছিল বিশাল সুনামি, যেখানে জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ছিল ১৩৫ ফুট (৪১ মিটার)। প্রাণ হারিয়েছিল ৩০ হাজার মানুষ।
  • তপ্ত ছাইয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন আরও হাজার হাজার মানুষ।
  • ওই উদ্গীরণের তেজ ছিল ২০০ মেগাটন ওজনের টিএনটি বিস্ফোরণের সমতুল্য- যা ১৯৪৫ সালে হিরোশিমায় ফেলা পারমাণবিক বোমার শক্তির তুলনায় ১৩,০০০ গুণ বেশি।
  • হাজার হাজার কিলোমিটার দূর থেকে ওই উদ্গীরণের শব্দ শোনা গিয়েছিল।
  • ওই অগ্ন্যুৎপাতের পরের বছর বিশ্বের তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি কমে গিয়েছিল।
  • আগ্নেয়গিরির দ্বীপটি পুরো নিশ্চিহ্ণ হয়ে গিয়েছিল।

সূত্র : বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *