যেসব শর্তের বিনিময়ে সম্পন্ন গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তি
গাজায় ৪৬০ দিনেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের পর একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছেছে ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস। কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান বিন জাসিম আল থানি বুধবার (১৫ জানুয়ারি) জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি রোববার (১৯ জানুয়ারি) কার্যকর হবে। তবে ইসরায়েল ও হামাসের সঙ্গে বাস্তবায়নের বিষয়গুলো নিয়ে কাজ অব্যাহত রয়েছে। ইসরায়েল জানিয়েছে, কিছু বিষয় এখনো চূড়ান্ত হয়নি এবং বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি সরকারের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। খবর রয়টার্স।
চুক্তির মধ্যে রয়েছে একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি, যা আপাতত গাজার ওপর চলমান ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করবে। একই সঙ্গে গাজা এবং ইসরায়েলে বন্দি থাকা অনেক ব্যক্তির মুক্তির শর্তও রয়েছে। এই চুক্তির ফলে অবশেষে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা তাদের ঘরে ফিরে যেতে পারবে। তবে ইসরায়েলের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ধ্বংসযজ্ঞের কারণে অনেক ঘর আর অবশিষ্ট নেই।
প্রথম ধাপটি ছয় সপ্তাহ স্থায়ী হবে, যার মধ্যে থাকবে একটি সীমিত বন্দি বিনিময়, গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের আংশিক প্রত্যাহার এবং এলাকায় ত্রাণ সহায়তা বৃদ্ধি।
এ ধাপে ৩৩ জন ইসরায়েলি বন্দি মুক্তি পাবে। এদের মধ্যে রয়েছে নারী, শিশু এবং ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে বয়স্ক বেসামরিক ব্যক্তিরা। এর বিনিময়ে, ইসরায়েল প্রথম ধাপে অধিক সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেবে, যার মধ্যে আজীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিরাও অন্তর্ভুক্ত। মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে প্রায় ১,০০০ জন রয়েছে, যারা ৭ অক্টোবরের পরে গ্রেফতার হয়েছিল।
বন্দি বিনিময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইসরায়েল তাদের বাহিনীকে গাজার জনবহুল কেন্দ্র থেকে ৭০০ মিটারের বেশি ভেতরে না গিয়ে সীমান্ত বরাবর অবস্থানে সরিয়ে নেবে। নেটজারিম থেকে ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহার ধাপে ধাপে সম্পন্ন হবে।
ইসরায়েল গাজার উত্তরে অবরুদ্ধ এলাকায় বসবাসরত নাগরিকদের তাদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেবে, যেখানে সাহায্য সংস্থাগুলি দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। এছাড়া, গাজায় প্রতিদিন ৬০০ ট্রাক পর্যন্ত ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে।
ইসরায়েল গাজা থেকে আহত ফিলিস্তিনিদের চিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেবে এবং প্রথম ধাপ শুরু হওয়ার সাত দিন পর মিশরের সঙ্গে রাফাহ সীমান্ত খুলে দেবে।
ইসরায়েলি বাহিনী মিশর এবং গাজার সীমান্ত এলাকা ফিলাডেলফি করিডোরে তাদের উপস্থিতি হ্রাস করবে এবং চুক্তি কার্যকর হওয়ার ৫০ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করবে।
চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ কার্যকরের বিষয়ে আলোচনাগুলো প্রথম ধাপের ১৬তম দিনের মধ্যে শুরু হবে। সেখানে অবশিষ্ট সব ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
এখানে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, প্রথম ধাপ শেষ হওয়া এবং তাদের বেসামরিক বন্দিদের ফেরত পাওয়ার পরে আবার হামলা শুরু হবে না— এমন কোনো লিখিত নিশ্চয়তা দেবে না ইসরায়েল।
তৃতীয় ধাপের বিস্তারিত তথ্য এখনো অস্পষ্ট। যদি দ্বিতীয় ধাপের শর্তগুলো পূরণ হয়েছে বলে বিবেচিত হয় তবে তৃতীয় ধাপে অবশিষ্ট বন্দিদের মরদেহ ফেরত দেয়া হবে। বিনিময়ে আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে তিন থেকে পাঁচ বছরব্যাপী পুনর্গঠন পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে।
যুদ্ধবিরতির পরে গাজার প্রশাসন কে পরিচালনা করবে, তা নিয়ে এখনো কোনো চুক্তি হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের একটি সংস্কারিত রূপকে এই দায়িত্ব দেয়ার জন্য চাপ দিয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন মঙ্গলবার বলেছেন, যুদ্ধ পরবর্তী পুনর্গঠন এবং শাসন ব্যবস্থার পরিকল্পনা অনুসারে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের আমন্ত্রণ জানিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন গঠন করবে, যা গুরুত্বপূর্ণ সেবা পরিচালনা করবে এবং অঞ্চলটি তদারকি করবে।
অন্য অংশীদাররা, বিশেষ করে আরব রাষ্ট্রগুলো, স্বল্প মেয়াদে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাহিনী সরবরাহ করবে।
ইসরায়েল এখনো গাজার জন্য বিকল্প শাসন ব্যবস্থা প্রস্তাব করেনি।