যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রেকর্ড বাণিজ্য উদ্বৃত্তে চীন
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বিশাল বাণিজ্য উদ্বৃত্ত নিয়ে ওয়াশিংটনের আপত্তি দীর্ঘদিনের। এর পরও তা কমছে না, বরং দিনে দিনে ফুলেফেঁপে উঠছে। নভেম্বরে দাঁড়িয়েছে রেকর্ড ৩ হাজার ৫৬০ কোটি ডলার।
যদিও এ সময় চীনের আমদানি ও রফতানি দুটিতেই শ্লথগতি ছিল। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির বাণিজ্যে এ পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ চাহিদা হ্রাসের বিষয়টিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ অবস্থায় ধারণা করা হচ্ছে, প্রবৃদ্ধি হারে আরো পতন ঠেকাতে চীনা কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। খবর এএফপি, রয়টার্স ও ব্লুমবার্গ।
দুই পক্ষের বাণিজ্য বিবাদ সাময়িকভাবে স্থগিত রাখতে গত সপ্তাহে একমত হন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির সম্পর্কে টানাপোড়েন অব্যাহত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চীন খুব দ্রুত তাদের থেকে পণ্য কেনা শুরু করবে, কিন্তু বেইজিং এখনো এ বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা দেয়নি।
চীনের বাণিজ্য অনুশীলন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের যেসব বিষয়ে আপত্তি রয়েছে, তার মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি একটি। তাই চীনের কাছে পণ্য বিক্রি বাড়ানোর মাধ্যমে এ ঘাটতি কমিয়ে আনতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু চীনের শুল্ক বিভাগের প্রকাশিত নভেম্বরের উপাত্তে দেখা গেছে, এ সময় বার্ষিক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রফতানি বেড়েছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ, বিপরীতে আমদানি কমেছে ২৫ শতাংশ।
বাণিজ্য বিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টুইটে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকদের থেকে চীনকে ‘শিগগিরই’ পণ্য ক্রয় শুরু করতে হবে। সাধারণত বছরের শেষের মাসগুলোয় যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন ক্রয় বাড়িয়ে দেয় চীনের ক্রেতারা। কারণ এ সময় প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের আবাদের মৌসুম শেষ হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয়।
কিন্তু এ বছর তা বার্ষিক হিসেবে ৩৮ শতাংশ কমে গেছে। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্কারোপের পাল্টা জবাবে সয়াবিন আমদানিতে চীনের শুল্কারোপের কারণেই এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দেখা গেছে, জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত বেড়ে ২৯ হাজার ৩৫০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ২৫ হাজার ১৩০ কোটি ডলার।
তবে নভেম্বরে সার্বিকভাবে চীনের আমদানি-রফতানি দুটিতেই শ্লথগতি লক্ষ করা গেছে। এক বছর আগের তুলনায় এ সময় রফতানি বেড়েছে মাত্র ৫ দশমিক ৪ শতাংশ, গত মার্চে রফতানিতে ৩ শতাংশ সংকোচনের পর এটি সবচেয়ে বাজে পারফরম্যান্স। যেখানে রয়টার্সের অর্থনীতিবিদরা রফতানি ১০ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পিত আরো শুল্ক বৃদ্ধির সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোও রফতানি বাড়াতে তাড়াহুড়ো করেনি। এরই প্রভাব দেখা যাচ্ছে রফতানি উপাত্তে। তবে চাহিদা কম থাকায় রফতানি আরো কমে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ সময় আমদানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৩ শতাংশ, যা ২০১৬ সালের অক্টোবরের পর সবচেয়ে শ্লথ। এছাড়া রয়টার্সের জরিপে পূর্বাভাসকৃত ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির তুলনায় এটি যথেষ্ট কম। এ সময় দ্বিতীয় দফায় আকরিক লোহার আমদানি কমেছে, যা প্রবৃদ্ধি সংকুচিত হয়ে আসায় ইস্পাত কারখানাগুলোর হ্রাসপ্রাপ্ত চাহিদাকেই প্রতিফলিত করছে।
বেইজিংয়ে ঝংইউয়ান ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ওয়াং জুন বলেন, ‘আমদানি ও রফতানিতে পুরোদমে মন্থরতা চলছে।’ তিনি আরো বলেন, আমদানিতে শিথিলভাব ‘অভ্যন্তরীণ চাহিদা তুলনামূলক কমে আসাকেই নির্দেশ করছে।’
এর আগে কয়েক মাস ধরেই চীনের রফতানিতে দুর্দান্ত গতি দেখা গেছে। এর কারণ হিসেবে অর্থনীতিবিদরা বলেছিলেন, চীন থেকে আমদানিকৃত আরো ২০ হাজার কোটি ডলার পণ্যে বর্ধিত শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগেই ব্যবসায়ীরা রফতানি সম্পন্ন করার কারণেই এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং ট্রাম্প ৯০ দিনের বাণিজ্যযুদ্ধ বিরতিতে সম্মত হওয়ার পর এ শুল্কারোপ স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে হুয়াওয়ে টেকনোলজিসের প্রতিষ্ঠাতার কন্যা এবং কোম্পানিটির শীর্ষ নির্বাহীকে কানাডায় গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্ক আবারো তিক্ত হয়ে উঠতে পারে। ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার অভিযোগে গ্রেফতার মেং ওয়াঝৌকে যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তর করা হতে পারে।