মেনাপের ডিজিটাল অর্থনীতি ১০ হাজার কোটি ডলার ছাড়াবে

স্টাফ রিপোর্টার

চলতি বছর মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা ও পাকিস্তানের (মেনাপ) ডিজিটাল অর্থনীতি ১০ হাজার কোটি ডলারের সীমা অতিক্রম করবে বলে আশা করা হচ্ছে। পর্যাপ্ত বিনিয়োগ হলে ২০৩০ সালের মধ্যে এ অঞ্চলের ডিজিটাল অর্থনীতি ৭০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছতে পারে। ব্যবস্থাপনা পরামর্শক সংস্থা রেডসিয়ার এ তথ্য জানিয়েছে। খবর দ্য ন্যাশনাল।

মূলত মেনাপ অঞ্চল বলতে বোঝায় জিসিসিভুক্ত দেশগুলো, লেবানন, জর্ডান, ইরাক, মিসর, মরক্কো ও পাকিস্তান। ডিজিটাল অর্থনীতির মধ্যে রয়েছে অনলাইন রিটেইল, ফুডটেক, অনলাইন ভ্রমণ (টিকিট ও হোটেল বুকিং), শিক্ষা, প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যগত প্রযুক্তি ও ফিনটেক।

এক প্রতিবেদনে রেডসিয়ার জানায়, গত বছর মেনাপ অঞ্চলে ডিজিটাল অর্থনীতিতে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি ছিল। এ বছর ডিজিটাল অর্থনীতির আকার ৪২ শতাংশ বেড়ে ১০ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে পৌঁছতে পারে। কভিড-১৯ মহামারী শুরুর পর থেকেই ডিজিটাল অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির গতি ত্বরান্বিত হয়েছে। ঘরবন্দি সময়ে লোকজন অনলাইনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। তবে কভিডজনিত বিধিনিষেধ শেষেও এ ধারা অব্যাহত রয়েছে।

যদিও ডিজিটাল অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি আগামী দু-তিন বছরে অর্থসংস্থানের ওপর নির্ভর করবে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংস্থাটি। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, মহামারীর কারণে বর্তমানে ডিজিটাল অর্থনীতিতে অনুকূল হাওয়া বইছে। প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠে ভবিষ্যতে আরো শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

স্মার্টফোন ও ডিজিটাল পরিষেবার মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের আর্থিক লেনদেনে আগ্রহ বাড়ার কারণে মেনাপ অঞ্চলের ডিজিটাল অর্থনীতি বেড়েছে। স্ট্যাটিসটা জানায়, ২০১৯ সালে মেনাপ অঞ্চলে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সংখ্যা ছিল ২৬ কোটি ৪০ লাখ। পূর্বাভাস বলছে, ২০২৫ সালের মধ্যে এ সংখ্যা বেড়ে ৩৫ কোটি ৭০ লাখে পৌঁছতে পারে। ওই সময় মোট জনসংখ্যার ৫৩ শতাংশ মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যবহার করবে।

এদিকে গ্লোবাল মিডিয়া ইনসাইট জানিয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) প্রায় ৯৯ লাখ সক্রিয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে। সে হিসেবে দেশটিতে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর হার মোট জনসংখ্যার ৯৯ শতাংশ। গবেষক সংস্থা ডাটা রিপোর্টালের তথ্যে দেখা গেছে, চলতি বছর জানুয়ারি পর্যন্ত পাকিস্তানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৮ কোটি ২৯ লাখ। গত বছর দেশটিতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের হার বেড়েছে ৩৬ শতাংশ।

তবে রেডসিয়ার জানিয়েছে, মেনাপ অঞ্চলভুক্ত দেশগুলোয় ডিজিটাল পরিষেবা বাড়লেও তা ভারতসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশের ডিজিটাল অর্থনীতিতে বিনিয়োগ থেকে পিছিয়ে আছে। সংস্থাটি জানায়, ভারতে ডিজিটাল অর্থনীতিতে ব্যাপক হারে বিনিয়োগ হয়েছে। গত পাঁচ বছরে দেশটির ডিজিটাল অর্থনীতিতে মোট ১০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হয়। এর মধ্যে শুধু গত বছরেই দেশটিতে বিনিয়োগ হয় ৪ হাজার ২০০ কোটি ডলার।

বিদায়ী বছর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ইন্টারনেট অর্থনীতিতে রেকর্ড পরিমাণ বিনিয়োগ হয়। মহামারীর প্রকোপ সত্ত্বেও বিনিয়োগ চুক্তির জন্য ব্যস্ততম সময় ছিল ২০২১ সাল। গত বছরের নভেম্বরে গুগল, টেমাসেক ও বেইন অ্যান্ড কোম্পানির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫ সালের মধ্যে ইন্টারনেট অর্থনীতিতে বিনিয়োগ দ্বিগুণ বেড়ে ৩৬ হাজার ৩০০ কোটি ডলারে পৌঁছতে পারে।

সে তুলনায় মেনাপ অঞ্চলে বিনিয়োগ কম ছিল। অর্থায়নের একটি বড় অংশ ছিল প্রতিষ্ঠানগুলোর ও ব্যক্তিগত ইকুইটির। যদিও ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ডিংয়ের পরিমাণ কম ছিল। তবে আগামী পাঁচ থেকে দশ বছরে মেনাপ অঞ্চলে বিনিয়োগকারীরা মোটা অংকের লাভের আশা করতে পারেন বলে জানিয়েছে রেডসিয়ার। এদিকে পাকিস্তান বাদে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় (মেনা) অঞ্চলে ২০২৩ সালের মধ্যে ডিজিটাল অর্থনীতি ১০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *