মূল্যস্ফীতির চাপে মার্কিন ভোক্তারা
মহামারীর শুরু থেকেই চলছে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় বাধা। পণ্য সরবরাহে হিমশিম খাচ্ছেন উৎপাদন থেকে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান। কভিডজনিত বিধিনিষেধ শেষে তুমুল ভোক্তা চাহিদা এ অবস্থাকে আরো জটিল করেছে। চাহিদা অনুযায়ী পণ্য পাচ্ছেন না ভোক্তারা। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য ও সেবার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। গত ১২ মাসে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। মূল্যস্ফীতির এ হার ১৯৮২ সালের পর সর্বোচ্চ। গ্যাস, খাদ্য ও আবাসনের ক্রমবর্ধমান দাম মূল্যস্ফীতিকে রেকর্ড উচ্চতায় ঠেলে দিয়েছে। ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার এ হার আরো বাড়বে বলে সতর্ক করেছেন বিশ্লেষকরা। খবর এপি।
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বিভাগের এ তথ্যে ফেব্রুয়ারিতে শেষ হওয়া গত ১২ মাসের হিসাব অন্তর্ভুক্ত আছে। যদিও এ তথ্যে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পর জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দামের ঊর্ধ্বগতি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। গত তিন সপ্তাহে দেশটিতে গ্যাসের দাম প্রায় ৬২ সেন্ট বেড়ে গ্যালনপ্রতি ৪ ডলার ৩২ সেন্টে উন্নীত হয়েছে।
এমনকি ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার আগে ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতেও মার্কিন মূল্যস্ফীতি চার দশকের সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছিল। শক্তিশালী ভোক্তা ব্যয়, বেতন বৃদ্ধি ও ক্রমাগত সরবরাহ ঘাটতি এমন মূল্যস্ফীতিতে সহায়তা করেছিল। ডিসেম্বরে ও জানুয়ারিতে বার্ষিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল যথাক্রমে ৭ ও ৭ দশমিক ৫।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, ফেব্রুয়ারিতে জানুয়ারির তুলনায় ভোক্তা পণ্যের দাম দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। যেখানে জানুয়ারিতে আগের মাসের তুলনায় দাম বাড়ার হার দশমিক ৬ শতাংশ ছিল। বাজারে দামের ক্ষেত্রে অস্থিরতার মধ্যে থাকা খাদ্য ও জ্বালানি পণ্যগুলো বাদ দিয়ে গত মাসে মূল্য দশমিক ৫ শতাংশ এবং গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে।
বেশির ভাগ মার্কিন নাগরিক মনে করেন, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি গত বছর তাদের বেতনের চেয়ে দ্রুতগতিতে বাড়ছে। তাদের জন্য এ মূল্যস্ফীতি খাদ্য, গ্যাস ও বাড়ি ভাড়ার মতো প্রয়োজনীয় ব্যয়গুলো বহন করা কঠিন করে তুলেছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও কংগ্রেসনাল ডেমোক্র্যাটদের জন্য মূল্যস্ফীতি বৃহত্তম রাজনৈতিক হুমকি হয়ে উঠেছে। ছোট ব্যবসাগুলোর প্রাথমিক অর্থনৈতিক উদ্বেগও এ মূল্যস্ফীতি।
মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে ফেডারেল রিজার্ভ চলতি বছর কয়েকবার সুদের হার বাড়াতে চলেছে। আগামী সপ্তাহে এক-চতুর্থাংশ পয়েন্ট বাড়ানোর মাধ্যমে এ পদক্ষেপের শুরু হচ্ছে। উচ্চ সুদের হার ভোক্তা ব্যয় কমিয়ে মূল্যস্ফীতিকে শীতল করবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও এটি অর্থনৈতিক মন্দা তৈরি করতে পারে।
ফেব্রুয়ারিতে আগের মাসের তুলনায় প্রায় প্রতিটি পণ্য ও পরিষেবার দাম বেড়েছে। মুদি ব্যয় ১ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। ফল ও সবজির সামষ্টিক মূল্য ২ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। যেখানে গ্যাস ও পোশাকের দাম বাড়ার হার যথাক্রমে ৬ দশমিক ৬ এবং দশমিক ৭ শতাংশ।
এছাড়া ফেব্রুয়ারিতে শেষ হওয়া ১২ মাসে মুদির দাম বেড়েছে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ। মুদি পণ্যে বার্ষিক দাম বাড়ার এ হার ১৯৮১ সালের পর সর্বোচ্চ। গত ১২ মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় গ্যাসের দাম ৩৮ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া আবাসন ব্যয় বেড়েছে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ, যা ১৯৯১ সালের পর সবচেয়ে বড় বৃদ্ধি।
অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের অর্থনীতিবিদ লিডিয়া বাউসর বলেন, যদি বছরের বাকি সময়ে জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১২০ ডলারেও থাকে, তাহলে এটি মার্কিন পরিবারের জন্য গড়ে ১ হাজার ৫০০ ডলার অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণ হবে। এ পরিস্থিতি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে দুর্বল করে দেবে বলেও মনে করেন তিনি।
অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম অ্যালায়েন্স বার্নস্টেইনের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ এরিক উইনোগ্রাড বলেন, সংখ্যাগুলো চোখে পানি এনে দেয়ার মতো। চলমান ভূরাজনৈতিক অস্থিরতায় আগামীতে মূল্যস্ফীতি আরো বাড়তে চলেছে। মূল্যস্ফীতির চূড়াটি আগের ধারণার চেয়েও অনেক বেশি হবে এবং প্রত্যাশিত সময়ের চেয়ে আরো দেরিতে আসবে।