মুশফিকের একগুচ্ছ রেকর্ড

স্টাফ রিপোর্টার

সাদমান ইসলাম ও মুমিনুল হকের গড়ে দেয়া ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে লড়লেন মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস। পরে মুশফিকের সঙ্গে লড়াইয়ে যোগ দিলেন মেহেদী হাসান মিরাজও। ডাবল সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত মুশফিক খেলেছেন ১৯১ রানের রাজসিক ইনিংস। তাতে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের প্রথম ইনিংসেই ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ। ৫৬৫ রানের সৌধ গড়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। এটা টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ও বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ টেস্ট সংগ্রহ।

২০১৩ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে গল টেস্টে করা ৬৩৮ রান এখন পর্যন্ত টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। ওই টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন মুশফিক। ২০১৭ সালে ওয়েলিংটন টেস্টে সাকিব আল হাসানের ডাবল সেঞ্চুরিতে ৫৯৫ রানের সৌধ গড়েছিল বাংলাদেশ। তার পরই রাওয়ালপিন্ডির ইনিংসটি। এটি আবার পাকিস্তানের বিপক্ষেও সর্বোচ্চ। ২০১৫ সালে খুলনায় করা ৫৫৫ রান ছিল এতদিন পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বোচ্চ সংগ্রহ। পাকিস্তানের মাঠে বাংলাদেশের আগের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল ৩৬১, যা ২০০৩ সালে পেশোয়ার টেস্টে করেছিল টাইগাররা।

এই রানসৌধের মূল কারিগর পাঁচে নামা মুশফিক। তার কল্যাণে টেস্টে ২১ বছর পর পাকিস্তানের মাটিতে সেঞ্চুরি পেলেন কোনো বাংলাদেশী। এর আগে পাকিস্তানের মাঠে টেস্টে সেঞ্চুরি ছিল হাবিবুল বাশার ও জাভেদ ওমরের। ২০০৩ সালের পাকিস্তান সফরে করাচি টেস্টে হাবিবুল ও পেশোয়ার টেস্টে জাভেদ ছুঁয়েছিলেন তিন অংক। হাবিবুল ও জাভেদ সেঞ্চুরি পেলেও টেস্ট দুটি জিততে পারেনি বাংলাদেশ। করাচিতে ৭ উইকেটে, পেশোয়ারে ৯ উইেকটে হেরে যায় সফরকারীরা। পরে মুলতানে লড়লেও জুটেছিল ১ উইকেটের হার। এবার মুশফিকের দুইশ ছুঁই ছুঁই ইনিংস পাকিস্তানের মাঠে বাংলাদেশকে এনে দেবে কি অধরা জয়?

তামিমের সমান ১০টি সেঞ্চুরি নিয়ে রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট খেলতে নামেন মুশফিক। গতকাল তিন অংক ছুঁয়েই টপকে যান তামিমকে। ইনিংসের ১১৬তম ওভার করতে আসা আগা সালমানের তৃতীয় বলটি ফাইন লেগে খেলে ২ রান নিয়ে সেঞ্চুরি তুলে নেন ‘মি. ডিপেন্ডেবল’। ১১তম সেঞ্চুরি করে পেছনে ফেললেন তামিমকে (১০ টেস্ট সেঞ্চুরি)। ১২ সেঞ্চুরি নিয়ে মুশফিকের ওপরে এখন শুধুই মুমিনুল হক সৌরভ।

এই তিনজন ছাড়া মোহাম্মদ আশরাফুল ৬টি, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ ও নাজমুল হোসেন শান্ত ৫টি করে এবং লিটন দাস, ইমরুল কায়েস ও হাবিবুল বাশার তিনটি করে সেঞ্চুরি করেছেন।

ফিফটিতে অবশ্য এখনো শীর্ষস্থানটা ধরে রেখেছেন তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান। উভয়ের মোট ফিফটি ৩১টি, মুশফিকের ২৭টি।

তৃতীয় দিনই ৩২ রান তুলে নিয়ে তামিম ইকবালের (১৫,১৯২) পর দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ১৫ হাজার রানের ক্লাবে নাম লেখান মুশফিক। গতকাল আউট হওয়ার পর তার নামের পাশে ১৫,১৫৯ রান। আর ৩৪ রান করলেই তিনি টপকে যাবেন তামিমকে। হয়তো আজই কিংবা এই সিরিজে তিনি এক নম্বরে উঠে যাবেন। ১৪ হাজার ৬৪১ রান নিয়ে তিনে রয়েছেন সাকিব আল হাসান। দশ হাজারের বেশি রান আছে আর একজনের—মাহমুদউল্লাহ (১০,৬৯৪)।

গতকাল ধ্রুপদি ব্যাটিং করা মুশফিককে প্রশংসায় ভাসিয়ে পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও দেশটির ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) সাবেক চেয়ারম্যান রমিজ রাজা বলেছেন, ‘মুশফিক বাংলাদেশ দলের সব চাপ শুষে নিচ্ছে। সে এভাবে ব্যাটিং করে গেলে বাংলাদেশ এ টেস্টকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বানিয়ে ফেলতে পারে।’

২০০৫ সালে অভিষেক হওয়া মুশফিক ১৯ বছরের যাত্রায় বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলেছেন। রাওয়ালপিন্ডিতে তিনি খেলছেন ক্যারিয়ারের ৮৯তম টেস্ট। দুইয়ে থাকা তামিম খেলেছেন তার চেয়ে ১৯ টেস্ট কম (৭০টি)। এছাড়া সাকিব ৬৮টি, মুমিনুল ৬২ ও আশরাফুল ৬১ টেস্ট খেলেছেন।

দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্ট রানও মুশফিকের। গতকাল পর্যন্ত ৮৯ টেস্টে তার রান ৫,৮৬৭। তামিম ৫ হাজার ১৩৪ রান নিয়ে দুইয়ে ও সাকিব ৪ হাজার ৫২০ রান নিয়ে তিনে রয়েছেন। ৪ হাজারি ক্লাবের চতুর্থ সদস্য মুমিনুল (৪,১০৮)।

বাংলাদেশ টেস্ট দলকে নেতৃত্ব দেয়ায়ও শীর্ষে মুশফিক। তিনি ৩৪ ম্যাচে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এরপর সাকিব (১৯টি), হাবিবুল বাশার (১৮টি) ও মুমিনুল (১৭টি)।

টেস্টে এর আগে ১০টি সেঞ্চুরি করেন মুশফিক, যার মধ্যে তিনটিই ডাবল সেঞ্চুরি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০১৮ সালে ২১৯ ও একই মাঠে ২০২০ সালে ২০৩ রান করেন তিনি। ২০১৩ সালে গলে শ্রীলংকার বিপক্ষে খেলেছিলেন ২০০ রানের ইনিংস। গতকাল চতুর্থ ডাবলের সম্ভাবনা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত মোহাম্মদ আলীর বলে উইকেটকিপারকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেছেন মুশফিক। এটি তার চতুর্থ সেরা টেস্ট ইনিংস। আর ১৪ রান করলেই পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসও মুশফিকের নামে লেখা হয়ে যেত। তামিম খেলেছেন সর্বোচ্চ ২০৬ রানের ইনিংস। মুশফিকের এই সেঞ্চুরি বাংলাদেশের ইতিহাসে ৮০তম। এছাড়া পাকিস্তানের বিপক্ষে এটি বাংলাদেশীদের সপ্তম টেস্ট সেঞ্চুরি ও পাকিস্তানের মাঠে তৃতীয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *