মা দিবসে কিছু কথা

স্টাফ রিপোর্ট

‘মা’-ছোট্ট একটি কথা। বাংলা ভাষার এক বর্ণের এক শব্দ। ছোট এই আবেগময় শব্দটির সাথে পরিচিত নয় -এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। মা হচ্ছেন একজন পূর্ণাঙ্গ নারী, যিনি গর্ভধারণ, সন্তানের জন্ম তথা সন্তানকে বড় করে তোলেন – তিনিই অভিভাবকের ভূমিকা পালনে সক্ষম ও মা হিসেবে সর্বত্র পরিচিত। প্রকৃতিগতভাবে একজন নারী বা মহিলাই সন্তানকে জন্ম দেয়ার অধিকারিণি।

গর্ভধারণের ন্যায় জটিল এবং মায়ের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় অবস্থানে থেকে এ সংজ্ঞাটি বিশ্বজনীন গৃহীত হয়েছে। সারা পৃথিবীতে সবার মা একই রকম। সে ধনী -গরীব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, সাদা-কালো; যারই মা হোক কিনা। মাকে নিয়ে প্রতিটি ভাষায় লেখা গান, কবিতা, গল্প, কাহিনীর শেষ নেই। বাংলা ভাষাও এর ব্যতিক্রম নয়। আল কোরআনে বলা হয়েছে, “আমি মানুষকে তাদের পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছু শরীক করার জোর প্রচেষ্টা চালায়, যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো না।

আমারই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি তোমাদেরকে বলে দেব যা কিছু তোমরা করতে পারো।” একটি হাদীসে ইসলামের সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সা. বলেছেন, “মাতার পদতলে সন্তানের বেহেশত।” তাছাড়া অন্য একটি হাদীসে আছে তা হলো, “মাকে তিন বার সেবা করার পর বাবাকে এক বার সেবা করার কথা।”-এটা কম বেশী আমরা সবাই জানি। সনাতন ধর্মে উল্লেখ আছে- “আবার সন্তান লাভের পর নারী তাঁর রমণীমূর্তি পরিত্যাগ করে মহীয়সী মাতৃরূপে সংসারের অধ্যক্ষতা করবেন।” তাই মনু সন্তান প্রসবিনী মাকে গৃহলক্ষ্মী সম্মানে অভিহিত করেছেন।

তিনি মাতৃ গৌরবের কথা বিশ্ববাসীকে জানিয়েছেন এভাবে- “দশজন উপাধ্যায় (ব্রাহ্মণ) অপেক্ষা একজন আচার্য্যর গৌরব অধিক, একশত আচার্য্যর গৌরব অপেক্ষা পিতার গৌরব অধিকতর; সর্বোপরি, সহস্র পিতা অপেক্ষা মাতা সম্মানার্হ।” আর সেই মায়ের সম্মানার্থে- সারা বিশ্বে মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বিশ্ব মা দিবস হিসেবে পালিত হয়। সে হিসেবে আজ মা দিবস। সারা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। মাকে যথাযথ সম্মান ও ভালোবাসা দেয়াই দিবসটির মূল উদ্দেশ্য।

যদিও মায়েদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো দিন হয় নাকি? বা বিশেষ একটা দিনই শুধু মায়েদের জন্য? এ নিয়ে আমরা তর্কে যাবো না। মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে “মা দিবস” হিসেবে উদযাপনের ঘোষণা দেয়া হয় ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেসে। আর তখন থেকেই এই দিনে সারা বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে মা দিবস। বিশ্বের প্রায় শতাধিক দেশে প্রতিবছর দিবসটি পালিত হয়। কথিত আছে,ব্রিটেনেই প্রথম শুরু হয় মা দিবস পালনের রেওয়াজ, কেননা সেখানে প্রতিবছর মে মাসের চতুর্থ রোববারকে মাদারিং সানডে হিসাবে পালন করা হতো। তবে সতের শতকে মা দিবস উদযাপনের সূত্রপাত ঘটান মার্কিন সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্টস।

মায়ের সঙ্গে সময় দেয়া আর মায়ের জন্য উপহার কেনা ছিল তার দিনটির কর্মসূচিতে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ভার্জিনিয়াতে প্রথম মা দিবস পালন করা হয় ১৮৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ২ জুন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উহলসন সর্বপ্রথম মা দিবসকে সরকারি ছুটির দিন হিসাবে ঘোষণা করেন। মা দিবসের উপহার সাদা কার্নেশন ফুল খুব জনপ্রিয়। আর বাণিজ্যিকভাবে, “মা দিবস” বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম কার্ড আদান-প্রদানকারী দিবস। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে “মা দিবস”-এ অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি ফোন করা হয়। বাংলাদেশে মা দিবস? পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুন আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত।

মা দিবস আমাদের দেশে এসে কিছু কার্ড আর ফুল বিক্রি বাড়িয়েছে। মা সারাজীবনই মা। বিশেষ একটা দিনে ভালোবাসার কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না। মা সন্তানকে, সন্তান মাকে প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে ভালোবাসবে। আমরা কার্ড দেই বা না দেই, ফুল দেই বা না দেই- নিয়মিত মায়ের খোঁজ খবর নেব। অন্তত আমরা যেন মায়ের কষ্টের কারণ না হই। আমার আজকের এই লেখা একজন মাকে উৎসর্গীকৃত। মিসেস হাসনা হেনা। মা -তুমি যেখানেই থাকো -ভালো থেকো।।

আশিক ইস্কাটন, ঢাকা।

One thought on “মা দিবসে কিছু কথা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *