মার্কিন শুল্ক বাধা এড়াতে মেক্সিকো হয়ে পণ্য পাঠাচ্ছে চীন
চীনের বাণিজ্য নীতিকে ‘অন্যায্য’ উল্লেখ করে ২০১৮ সালে দেশটির প্রায় ছয় হাজার পণ্যে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্কারোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে আগের ১৫ শতাংশের সঙ্গে অতিরিক্ত শুল্ক যোগ হয়ে দাঁড়ায় ২৫ শতাংশে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেনি বাইডেন প্রশাসনও। ফলে পণ্য রফতানিতে অতিরিক্ত শুল্ক এড়াতে কৌশল গ্রহণ করেছে বেইজিং। বর্তমানে মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য পাঠাচ্ছে দেশটির রফতানিকারকরা। খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালে তিন দফায় চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের ওই সিদ্ধান্তকে ‘আন্তঃদেশীয় অর্থনীতিতে সর্বকালের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যযুদ্ধ’ আখ্যা দিয়ে মার্কিন পণ্যের ওপরও শুল্ক আরোপ করে বেইজিং। তবে রফতানির তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানি কম করায় পাল্টা ব্যবস্থা খুব বেশি সুবিধা দেয়নি চীনকে।
কনটেইনার ট্রেডস স্ট্যাটিসটিকসের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের প্রথম তিন প্রান্তিকে চীন থেকে মেক্সিকোয় পাঠানো ২০ ফুট কনটেইনারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৮১ হাজারে। এক বছর আগের একই সময় এ সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ৮৯ হাজার। এতে গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রফতানিকারক বৃহত্তম দেশ হিসেবে চীনকে ছাড়িয়ে গেছে মেক্সিকো।
এ পরিসংখ্যান বাইডেন প্রশাসনের জন্য হুমকিস্বরূপ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ চীনের মতো ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চেইনে মার্কিন নির্ভরতা কাটাতে কাজ করছে। এসব দেশের উৎপাদন সক্ষমতা গৃহস্থালি ইলেকট্রনিকস সামগ্রী থেকে শুরু করে বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি পর্যন্ত বিস্তৃত।
ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ রবিন ব্রুকস বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বড় ভোক্তা আর চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় উৎপাদনকারী। সমভাবে বা অন্য কোনো উপায়ে এ দুই শক্তিকে মিলিত হতে হবে।’
দুই পরাশক্তির অব্যাহত বাণিজ্য ও ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার মধ্যে ছেদ পড়েনি যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা বদলের পরও। ট্রাম্প প্রশাসন আরোপিত উচ্চ শুল্ক জারি রেখেছে বাইডেন প্রশাসনও। ফলে চীন থেকে সরাসরি আসা চালানগুলোয় এখন ১৫ শতাংশের কাছাকাছি শুল্ক আরোপ করা হয়, যা ২০১৭ সালে ছিল ৫ শতাংশ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ।
জেনেটার প্রধান পণ্য ও তথ্য কর্মকর্তা এরিক ডেভেটাক বলেন, ‘চীনের ওপর নির্ভরতা কমানোর ঘোষণা রাজনীতিবিদদের পক্ষ থেকে খুবই চটকদার আলাপ। কিন্তু বাস্তবতা একেবারে ভিন্ন।’
মেক্সিকো হয়ে পণ্য রফতানির সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হচ্ছে চীনা গাড়ি নির্মাতারা। মেক্সিকোর বাণিজ্য সংস্থা আইএনএ জানিয়েছে, মেক্সিকান অপারেশনসহ ৩৩টি চীনা মালিকানাধীন কোম্পানি ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ১১০ কোটি ডলারের যন্ত্রাংশ পাঠিয়েছে। ২০২১ সালে ছিল ৭১ কোটি ১০ লাখ ডলার। অন্যদিকে মেক্সিকো গত বছর চীন থেকে গাড়ির যন্ত্রাংশ আমদানি করেছে ৯০০ কোটি ডলারের।
প্রসঙ্গত, মেক্সিকো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা গাড়ির জন্য ২ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। আর দেশটি থেকে গাড়ির যন্ত্রাংশ আনতে হলে শূন্য থেকে ৬ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। বিপরীতে চীন থেকে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা গাড়ি ও যন্ত্রাংশের জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত এবং বাইডেন প্রশাসনের জারীকৃত ২৫ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হয়।