মার্কিন ব্যাংকগুলোর ব্যয় বেড়েছে বহু গুণ
চলতি বছর বৃহদাকারের মার্কিন ব্যাংকগুলোর ব্যয় বেড়েছে বহু গুণ। এসব ব্যয়ের বেশির ভাগ অংশই খরচ হচ্ছে কর্মীদের বেতন ও বিভিন্ন সুবিধা বাবদ। মূলত মুদ্রাস্ফীতির চাপ ও মহামারীর ঝুঁকি মোকাবেলা, শ্রমিক সংকটের দরুন কর্মীদের বেতন বাড়ানো, কর্মী সংগ্রহ ও কর্মীদের ধরে রাখতে ব্যাংকগুলোকে উচ্চ ব্যয়ের দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ ছয়টি ব্যাংক—জেপি মরগান চেজ অ্যান্ড কোম্পানি, ব্যাংক অব আমেরিকা, সিটিগ্রুপ, ওয়েলস ফার্গো অ্যান্ড কোম্পানি, মরগান স্ট্যানলি ও গোল্ডম্যান স্যাকস গ্রুপ গত বছর কর্মীদের বেতন বাড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। এরই ধারবাহিকতায় অনেক ব্যাংকই চলতি বছর নিজেদের ব্যয় প্রাক্কলন বাড়িয়েছে। খবর রয়টার্স।
ব্যাংক অব নিউইয়র্ক মিলন করপোরেশনের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) এমিলি পোর্টনি বলেন, কর্মসংস্থান খাতে মেধাবীদের বাছাই করার ক্ষেত্রে আমরা হঠাৎ করেই উগ্র প্রতিযোগিতা দেখছি। এটি বেতনজনিত মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতির ফলে নিম্নস্তরের বেতন কাঠামোতেও প্রবৃদ্ধির চিত্র দেখা যাচ্ছে।
কর্মী সংকটের দরুন তৈরি হওয়া এ কঠিন প্রতিযোগিতার ফলে বিভিন্ন বিনিয়োগ ব্যাংক ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান যেমন—জেপি মরগান চেজ, ব্যাংক অব নিউইয়র্ক মিলন ও গোল্ডম্যান স্যাকস কর্মী নিয়োগে আরো বেশি ব্যয় করছে। একই সঙ্গে এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ পদে মেধাবী কর্মীদের ধরে রাখতে তাদের বেতন ও বিভিন্ন সুবিধা বাড়িয়েছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে নিজেদের পরিচালন ব্যয় ২৩ শতাংশ বেড়েছে বলে উল্লেখ করে গোল্ডম্যান স্যাকস। উচ্চ ব্যয় ও সুবিধার জন্য এ পরিমাণ ব্যয় বৃদ্ধির ঘটনা ঘটে। প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যাংকগুলোর অনুসরণে সেকেন্ড ইয়ার অ্যানালিস্ট ও ফার্স্ট ইয়ার অ্যাসোসিয়েটদের বেতন বাড়িয়ে ১ লাখ ২৫ হাজার ডলার ও ১ লাখ ৫০ হাজার ডলার করেছে প্রতিষ্ঠানটি। গোল্ডম্যান স্যাকসের প্রধান নির্বাহী ডেভিড সলোমন বলেন, অর্থনীতির সর্বত্রই এখন বাস্তব বেতনজনিত মূল্যস্ফীতির চিত্র দেখা যাচ্ছে।
মহামারীর ফলে সৃষ্ট সংকটের ফলে বিভিন্ন ব্যাংকের শাখাগুলোয় সম্মুখসারির পদে ও বিপুল সংখ্যক উন্মুক্ত পদে কর্মী নিয়োগে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংক অব আমেরিকা ও ওয়েল ফার্গোর মতো রিটেইল ব্যাংকগুলো তাদের এন্ট্রি লেভেল কর্মীদের বেতন বাড়াতে বাধ্য হয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে ব্যাংক অব আমেরিকা উল্লেখ করে, গত বছরের অক্টোবরে প্রতিষ্ঠানটির প্রতি কর্মঘণ্টায় ন্যূনতম বেতন বেড়ে ২১ ডলারের সমপরিমাণ হয়েছে। ২০২৫ সাল নাগাদ ব্যাংক অব আমেরিকার প্রতি কর্মঘণ্টায় ন্যূনতম বেতন বেড়ে ২৫ ডলারে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে গত বছরের শেষ দিকে স্থানভেদে ওয়েলস ফার্গো তাদের কর্মীদের প্রতি কর্মঘণ্টার বেতন বাড়িয়ে ১৮-২২ ডলার করেছে। যদিও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী প্রতি কর্মঘণ্টায় কর্মীদের ন্যূনতম বেতনের পরিমাণ ৭ ডলার ২৫ সেন্ট।
মিত্সুবিশি ইউএফজি ফাইন্যান্সিয়াল গ্রুপের কো-হেড মার্ক ডকট্রফ বলেন, এমনিতেই শ্রমিক সংকট থেকে ব্যাংকিং খাত উত্তরণ পায়নি। তার ওপর অন্যান্য খাতের আকর্ষণীয় প্রলোভনের দরুন কর্মীরা ব্যাংকিং খাতে আসতে উৎসাহ পাচ্ছেন না।
ওয়েলস ফার্গোর প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) মাইক সান্তোমাসিমো জানান, চলতি বছর ব্যাংকটির বেতন ও বিভিন্ন সুবিধা বাবদ ব্যয়ের পরিমাণ ৫০ কোটি ডলার বাড়তে পারে।
জেপি মরগান চেজ জানায়, গত বছরের শেষ প্রান্তিকে তাদের সুদবিহীন ব্যয়ের পরিমাণ ১১ শতাংশ বেড়েছে। মূলত কর্মীদের উচ্চ বেতনের ফলে এমনটা হয়েছে।