মাইজভান্ডারীর দুই ছেলের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

স্টাফ রিপোর্টার

ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর দুই ছেলেসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এর সহকারী পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় প্রাইম ফাইন্যান্স থেকে প্রায় সাড়ে ৩৯ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ফেরত না দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে।

চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর দুই ছেলে সৈয়দ তৈয়বুল বশর ও সৈয়দ আফতাবুল বশর ছাড়া অন্য আসামিদের মধ্যে প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান কেএম খালেদ ও তার ছেলে কেএম রাকিব হোসেন, তাদের আত্মীয় খন্দকার মো. মোস্তাহিদও আছেন। এছাড়া প্রাইম ফাইন্যান্সের বর্তমান পরিচালক মুসলিমা শিরিন, জেডএম কায়সার, মো. অলিউজ্জামান, এম শাহাদত হোসেন কিরন, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট গুলশান আরা হাফিজ ও অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট তাজরিয়ান হক, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদ খান, সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আহসান কবির খান, সাবেক এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. রেজাউল হককেও আসামি করা হয়েছে।

ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে ১৫ ফেব্রুয়ারি মামলা দায়েরের অনুমোদন দিয়েছিল দুদক। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সৈয়দ তৈয়বুল বশর মাইজভান্ডারী ও সৈয়দ আফতাবুল বশর মাইজভান্ডারীর নামে প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে ৩৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা নেয়া হয়। মূলত প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন কর্মকর্তাসহ অন্যরা অসৎ উদ্দেশ্যে ও পরস্পর যোগসাজশে অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এ ঋণ মঞ্জুর ও বিতরণ করে। এরপর আসামিরা ওই অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ করে। এর সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির অনেক কর্মকর্তা জড়িত থাকার প্রমাণের তথ্য এজাহারে তুলে ধরা হয়েছে। দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারা ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২-এর ৪(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে।

এদিকে দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, সৈয়দ তৈয়বুল বশর ২০১১ সালের ২০ ডিসেম্বর ২০ কোটি টাকা এবং সৈয়দ আফতাবুল বশর ১৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা শর্ত সাপেক্ষে পাঁচ বছর মেয়াদি টার্ম ঋণের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, আবেদনের দুদিন আগেই প্রাইম ফাইন্যান্সের বোর্ড সভায় ঋণ দুটি অনুমোদিত হয়। এছাড়া ঋণ মঞ্জুরে নানা অনিয়মও হয়েছে। নথিপত্র পর্যালোচনা করে দুদক আরো দেখতে পায়, ব্যক্তিগত প্রয়োজন মেটানোর জন্য তারা এ ঋণ নিয়েছেন। ঋণের শর্ত ভঙ্গ করে স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের মাধ্যমে তারা সেই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শরিক দল তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী মহাজোটের প্রার্থী হয়ে পরপর দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ছেলেদের বিরুদ্ধে দুদকের করা মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, ‘৩৯ কোটি টাকা লোনের বিপরীতে ৬৫ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সব তথ্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ইনকাম ট্যাক্স বিবরণীতে উল্লেখও করা হয়েছে। ইনকাম ট্যাক্সে প্রদর্শনের পর যদি কোনো টাকা ঋণ নেয়া হয় সেই অর্থ কীভাবে আত্মসাৎ হয়? দুদকের এ মামলার বিরুদ্ধে আমরা আদালতে যাব।’ ঋণ নিতে যা কিছু করা হয়েছে তার সবই আইনসিদ্ধভাবে হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *