মহামারীতে অতিধনীদের সম্পদ বেড়েছে ৪৫ হাজার কোটি ডলার
মহামারীর শুরু থেকেই ঊর্ধ্বমুখী খাদ্যের দাম। কভিডজনিত সরবরাহ চেইনে প্রতিবন্ধকতায় হু হু করে বেড়ে যায় দাম। এ বাধা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই শুরু হয় ইউক্রেনে যুদ্ধ। অস্থিরতা দেখা দেয়া জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের বাজারে। উচ্চমূল্য এ সম্পর্কিত ব্যবসায়ীদের সম্পদও বাড়িয়ে তুলেছে। ব্রিটিশ দাতব্য প্রতিষ্ঠান অক্সফাম জানিয়েছে, ২৪ মাসে খাদ্য ও জ্বালানি সম্পর্কিত ব্যবসায় যুক্ত বিলিয়নেয়ারদের সম্পদে ৪৫ হাজার ৩০০ কোটি ডলার যুক্ত হয়েছে।
সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতারা জড়ো হয়েছেন। এমন সময়ে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অক্সফাম। উন্নয়ন দাতব্য সংস্থাটি বলেছে, বিশ্বজুড়ে খাদ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় মাত্র ২৪ মাসে এ সম্পর্কিত ব্যবসায় জড়িত বিলিয়নেয়ার বেড়েছে ৬২ জন। বিশ্বের অন্যতম খাদ্য ব্যবসায়ী কারগিল পরিবারে বিলিয়নেয়ারের সংখ্যা ১২-তে উন্নীত হয়েছে। মহামারীর আগে ছিল আটজন। মার্কিন পরিবারটি তিনটি আলাদা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বৈশ্বিক কৃষিবাজারের ৭০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে।
খাদ্যের দাম এক বছর আগের তুলনায় গড়ে ৩০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে মহামারীর আগের তুলনায় ২৬ কোটি ৩০ লাখেরও বেশি মানুষকে তীব্র দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দেয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ কারণে চলতি বছরের শেষ নাগাদ দৈনিক ১ ডলার ৯০ সেন্টের কম আয়ে জীবনযাপন করা মানুষের সংখ্যা ৮৬ কোটিতে উন্নীত হবে। এটি যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও স্পেনের সম্মিলিত জনসংখ্যার সমান।
অক্সফাম যুক্তরাজ্যের প্রধান নির্বাহী ড্যানি শ্রীসকন্দরাজাহ বলেন, এটা নৈতিকভাবে অসমর্থনযোগ্য যে পূর্ব আফ্রিকার লোকেরা ক্ষুধায় মারা যাচ্ছে, যখন খাদ্য ও জ্বালানির দাম অতিধনীদের সম্পদ আকাশচুম্বী করছে। একদিকে উচ্চ খাদ্যমূল্যের কারণে লাখ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যের মুখোমুখি হচ্ছে। অন্যদিকে একই কারণে নতুন নতুন বিলিয়নেয়ার তৈরি হচ্ছে। এ অবস্থায় সম্পদের বৈষম্য নিরসনে বিপুল পরিমাণ মুনাফা ও সম্পদের দিকে সরকারের নজর না দেয়ার কোনো অজুহাত থাকতে পারে না।
২০ বছরের মধ্যে চরম দারিদ্র্যের সবচেয়ে বড় বৃদ্ধি মোকাবেলায় সহায়তা করার জন্য অবিলম্বে অতিধনীদের ওপর সম্পদ কর চালুর আহ্বান জানিয়েছে অক্সফাম। দাতব্য সংস্থাটি জানিয়েছে, সরকারগুলোকে আর্জেন্টিনার উদাহরণ অনুসরণ করা উচিত। পাশাপাশি মহামারী বিপর্যয় কাটাতে বিলিয়নেয়ারদের ওপর এককালীন সংহতি কর চালুরও আহ্বান জানানো হয়। সংস্থাটি বলেছে, বিপুল পরিমাণ সম্পদ ও একচেটিয়া ক্ষমতার লাগাম টানতে স্থায়ী সম্পদ কর চালু করা খুবই জরুরি। এক্ষেত্রে মিলিয়নেয়ারদের জন্য ২ শতাংশ থেকে শুরু হওয়া বার্ষিক সম্পদ কর এবং বিলিয়নেয়ারদের জন্য ৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ালে বছরে ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলার রাজস্ব আসতে পারে।
অক্সফাম জানিয়েছে, এ অর্থ দিয়ে ২৩০ কোটি মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে, বিশ্বের জন্য পর্যাপ্ত টিকা এবং নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে বসবাসকারী প্রত্যেকের জন্য সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক সুরক্ষা দেয়া সম্ভব। মাত্র ৩২টি অতিলাভজনক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের ওপর এ ধরনের কর ২০২০ সালে ১০ হাজার ৪০০ কোটি ডলার রাজস্বের জোগান দিতে পারত।
মহামারী চলাকালীন দুই বছরে ৫৭৩ জন নতুন বিলিয়নেয়ার তৈরি হয়েছে। ফোর্বস ম্যাগাজিনের অতিধনীদের র্যাংকিংয়ে বিলিয়নেয়ারদের সম্মিলিত সম্পদ ১২ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। এ সম্পদের পরিমাণ বৈশ্বিক জিডিপির ১৩ দশমিক ৯ শতাংশের সমান। এর মধ্যে শীর্ষ ২০ অতিধনীর সম্পদ আফ্রিকার সমগ্র জিডিপির চেয়ে বেশি।