মন্দির নির্মাণে পিছু হঠল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ

১৫২৭ খ্রীষ্টাব্দে ভারতের অযোধ্যায় নির্মিত বাবরি মসজিদের জায়গায় দেশটির লোকসভা নির্বাচনের আগেই রামমন্দির নির্মাণের জন্য গত এক বছর ধরেই জোর দাবি জানিয়ে আসছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)।

এজন্য তারা নির্বাচনের আগেই অধ্যাদেশ জারির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি অনবরত চাপও দিয়ে আসছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই অবস্থান থেকে কিছুটা পিছু হটেছে সংগঠনটি। জানিয়েছে অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ হবে লোকসভা নির্বাচনের পর।

রামজন্মভূমি আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সংগঠন হল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের খবর গত এক বছরের বেশি সময় ধরে দেশ জুড়ে রামমন্দির নির্মাণের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করে চলেছে তারা। তাদের দাবি ছিল, এজন্য নির্বাচনের আগেই অধ্যাদেশ জারি করুক সরকার।

কিন্তু ভারতের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য এখন সেই অবস্থান পরিবর্তন করেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। মঙ্গলবার (৫ফেব্রুয়ারি) সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা চায় না লোকসভা নির্বাচনের আগে রামমন্দির নির্মাণ কোনো ইস্যু হয়ে উঠুক।

রামমন্দির নির্মাণ নিয়ে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ তথা হিন্দু সংগঠনগুলি কার্যত দ্বিধাবিভক্ত। এই ঘটনায় তা আরও একবার প্রকাশ পেল। কিছুদিন আগে প্রয়াগরাজে ধর্ম সংসদ জানায় ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে মন্দির নির্মাণের কাজ। বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রতি আস্থা আছে তাদের।

কিন্তু মন্দির নির্মাণে আর দেরি করা যাবে না। সময় হয়েছে অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের। আগে ভিত্তি প্রস্তর, তারপর হবে মন্দির নির্মাণের কাজ। আর এই ভিত্তি প্রস্তরের জন্য চারটি পাথর নিয়ে যাওয়া হবে অযোধ্যায়। চারজন ব্যক্তি এই পাথর বহন করবে। যাতে ১৪৪ ধারার লঙ্ঘন না হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি হবে মন্দির নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তর।

বিশ্ব হিন্দু পরিষদের আন্তর্জাতিক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুরেন্দ্র জৈনের বরাত দিয়ে দেশটির ইংরেজি পত্রিকা নিউজ নেশন জানিয়েছে, লোকসভা নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের আন্দোলন আপাতত স্থগিত রাখা হল। কারণ তারা রামমন্দিরকে ‘নির্বাচনী ইস্যু’ বানাতে চান না ।

তিনি আরও জানান, কেন্দ্রে নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পরই রামমন্দির নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবেন তারা।

উল্লেখ্য ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবরের উদ্যোগে উত্তর প্রদেশের ফৈজাবাদ জেলার অযোধ্যা শহরের রামকোট হিলের উপর ১৫২৭ খ্রীষ্টাব্দে নির্মিত হয় বাবরি মসজিদ। সম্রাট বাবরের নামানুসারে এই মসজিদের নামকরণ করা হয়।

এর কয়েক শতাব্দী পর ১৯৯২ সালে একটি রাজনৈতিক সমাবেশের উদ্যোক্তারা ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুযায়ী মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হবে না এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় একটি রাজনৈতিক সমাবেশ শুরু করে। এতে প্রায় দেড় লাখ সনাতন ধর্মের অনুসারীরা যোগ দেয়।

পরে ওই সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের একটি উগ্রবাদী অংশ পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে মসজিদটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে। এ ঘটনায় ভারতের প্রধান প্রধান শহরসহ বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। ওই দাঙ্গায় শুধু মুম্বাই ও দিল্লি শহরেই ২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *