মধ্যপ্রাচ্যে স্বল্পদৈর্ঘ্যের ফ্লাইট সীমিত
কভিডের বিপর্যস্ত অবস্থা কাটিয়ে উঠছে উড়োজাহাজ পরিবহন খাত। বিভিন্ন দেশ কভিডজনিত বিধিনিষেধ শিথিল করায় ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে এ খাত। কয়েক মাস ধরে ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ। তবে দীর্ঘ দূরত্বের ফ্লাইটনির্ভরতার কারণে মধ্যপ্রাচ্যের এয়ারলাইনস খাতের পুনরুদ্ধারে শ্লথগতি দেখা দিয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইএটিএ) একটি সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর অ্যারাবিয়ান বিজনেস।
আইএটিএর সমীক্ষা অনুসারে, মধ্যপ্রাচ্যে স্বল্পদৈর্ঘ্যের ফ্লাইট সীমিত। দীর্ঘ পথের ফ্লাইটের ওপর মনোযোগ বেশি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর। মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত দীর্ঘ পথের ফ্লাইটের উড়োজাহাজ পরিবহন খাত পুনরুদ্ধার ধীর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
চলতি বছর মধ্যপ্রাচ্যের অভ্যন্তরে, মধ্যপ্রাচ্য থেকে এবং মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত ভ্রমণকারী যাত্রীদের সংখ্যা মহামারী-পূর্ব সময়ের ৮১ শতাংশে পৌঁছতে পারে। ২০২৪ সালে এ হার বেড়ে ৯৮ শতাংশ এবং ২০২৫ সালে তা ১০৫ শতাংশে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছর সংশ্লিষ্ট খাতে মন্দা দেখা দেয়। ২০২১ সালে এ হার কমে ৪২ শতাংশে নেমে আসে। আইএটিএ জানিয়েছে, ২০২৪ সালে মোট ভ্রমণকারীদের সংখ্যা ৪০০ কোটিতে পৌঁছার সম্ভাবনা রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো অন্যান্য কয়েকটি খাতে বিধিনিষেধ জারি করার ফলে তার প্রভাব উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোর ওপর পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে খাত পুনরুদ্ধারের সময় তুলনামূলক বেশি লাগতে পারে।
এ বিষয়ে আইএটিএর মহাপরিচালক উইলিশ ওয়ালশ বলেছেন, নভেল করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরনের প্রাদুর্ভাবের ফলে যাত্রী সংখ্যা পুনরুদ্ধার খুব একটি পরিবর্তিত হয়নি। মানুষ ভ্রমণ করতে চায়। ভ্রমণজনিত বিধিনিষেধ শিথিল করা হলেই তারা ভ্রমণ করা শুরু করবে। তবে প্রাক-মহামারী পর্যায়ে পৌঁছতে এখনো আরো সময়ের প্রয়োজন। তবে যাত্রী সংখ্যার পূর্বাভাস উড়োজাহাজ পরিবহন খাত পুনরুদ্ধারে আমাদের আশাবাদী করে তুলেছে।
সম্প্রতি জিসিসিভুক্ত (গালফ কোঅপারেশন কাউন্সিল) দেশগুলোর মধ্যে ভ্রমণকারীদের পিসিআর পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা তুলে নিয়েছে ওমান। এর আগে জিসিসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভ্রমণজনিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার ঘোষণা দেয় সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও বাহরাইন।
তবে আইএটিএ বলছে, বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার কারণে গত বছর নভেম্বরের তুলনায় উড়োজাহাজ পরিবহন খাত পুনরুদ্ধার কিছুটা দ্রুত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা গেছে। উত্তর আটলান্টিক ও ইউরোপীয় দেশগুলোর চাহিদা বাড়ায় পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে সেসব দেশের ওপর নির্ভর করছে মধ্যপ্রাচ্য। তবে এখনো চীনে বিধিনিষেধ শিথিলের কোনো সম্ভাবনা দেখা যায়নি। তাই মধ্যপ্রাচ্যের সংশ্লিষ্ট খাত পুনরুদ্ধারে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলগুলোর কোনো প্রভাব থাকছে না।
উইলিশ ওয়ালশ জানান, এ মুহূর্তে যাত্রী সংখ্যা বাড়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা দেশগুলোর সরকারের। তবে আশার কথা এই যে সরকারগুলো বুঝতে পারছে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে ভ্রমণজনিত বিধিনিষেধের প্রভাব সামান্য। বিধিনিষেধ শিথিলের ওপর ক্রমাগত জোর দিয়ে আসছে আইএটিএ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) অনুমোদিত টিকা নিয়েছে এমন ভ্রমণকারীদের জন্য কোয়ারেন্টিন ও কভিড পরীক্ষা বাতিলসহ সব ধরনের বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার অনুরোধ করে আসছে আইএটিএ।
এদিকে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের ফলে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়েছে রাশিয়ায় উড়োজাহাজ পরিবহন। তবে আইএটিএর পূর্বাভাসের বাইরে ছিল রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট।
এ বিষয়ে আইএটিএ বলেছে, সাধারণত যেকোনো অভিঘাতজনিত প্রভাবের বাইরে থাকে উড়োজাহাজ পরিবহন খাত। রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট সংশ্লিষ্ট খাতের দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না আশা করা যায়। এর ফলাফল কী হতে পারে তা এখনই অনুমান করা যাচ্ছে না। তবে ঝুঁকিও রয়েছে। সংকটের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন খাতে এর প্রভাব পড়বে। ফলে উড়োজাহাজ পরিবহন খাতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা থেকে যায়।