ভয়াবহ অবনমনের শঙ্কায় চীনের স্মার্টফোন বাজার
এক দশকের মধ্যে চীনের স্মার্টফোন বাজার মন্দার সর্বনিম্ন অবস্থায় পৌঁছতে যাচ্ছে। বাজারের ক্রমাগত পরিবর্তন, নতুন পণ্য বাজারজাতে দীর্ঘ অপেক্ষা এবং স্মার্টফোন আপডেটের বিষয়ে গ্রাহকদের রক্ষণশীল চিন্তাভাবনার কারণে এ খাতে বড় ধরনের অবনমনের শঙ্কা করা হচ্ছে। খবর নিক্কেই এশিয়া।
চায়না একাডেমি অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশনস টেকনোলজির তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালের প্রথমার্ধে বিশ্বের অন্যতম বড় মার্কেটটিতে স্মার্টফোন বাজারজাত ২১ দশমিক ৭ শতাংশ কমে ১৩ কোটি ৪০ লাখ ইউনিটে দাঁড়িয়েছে। ক্যানালিসের তথ্যানুযায়ী, অপো, ভিভো ও শাওমির মতো বড় চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিক্রিও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
এক প্রতিবেদনে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি জানায়, চলতি বছর শেষে এ অঞ্চলে স্মার্টফোনের বাজারজাত ৩০ কোটি ইউনিটের নিচে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, ২০১২ সালের পর যা এ খাতে দেশটির সবচেয়ে খারাপ অবস্থানের ইঙ্গিত দিচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মী জানান, গুয়াংজু প্রদেশের একাধিক শপিং সেন্টার পরিদর্শনের মাধ্যমে ব্যয় সংকোচনের বিষয়ে গ্রাহকদের শক্ত অবস্থানের বিষয়টি লক্ষ করা গিয়েছে। এ কারণে দেশটিতে স্মার্টফোনের চাহিদা কমেছে।
প্রদেশটির বেশকিছু স্টোর স্মার্টফোন কেনার ক্ষেত্রে ২০০ ইউয়ান বা ৩০ ডলার পর্যন্ত দাম কমানোর ঘোষণাও দিয়েছে। কিছু কিছু স্টোরের কর্মীরা জানান, এটি গ্রীষ্মকালের সাধারণ বিক্রি হার। চলতি বছর দাম কমানোর আগে অনেক প্রতিষ্ঠান স্মার্টফোনের সঙ্গে অতিরিক্ত অনুষঙ্গ (হেডফোন, কভার, গ্লাস প্রটেক্টর ইত্যাদি) দেয়ার ঘোষণাও দিয়েছিল। বাজারে স্মার্টফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের অবাধ প্রবেশের সুযোগ থাকায় সেভাবে বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায়নি। ডাচ গবেষণাপ্রতিষ্ঠান নিউজুর তথ্যানুযায়ী, চীনের ৬৬ শতাংশ অধিবাসীর কাছে স্মার্টফোন রয়েছে।
দেশটির স্মার্টফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভিভোর একজন কর্মকর্তা জানান, ভোক্তারা এখন খুব কমই স্মার্টফোন পরিবর্তন বা আপডেট করছে। যেখানে আগে ১৬ বা ১৮ মাস পরপর স্মার্টফোন আপডেট করা হতো এখন ৩৬ মাসেও সে রকম কিছু দেখা যায় না। মহামারীর সংক্রমণ রোধে চীন সরকার যে জিরো কভিড নীতিমালা গ্রহণ করেছিল সেটিও স্মার্টফোন বাজারজাতে প্রভাব ফেলেছে। এ কারণে ক্রেতারা আগের মতো আর ব্যয় করেনি।
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান আইডিসি জানায়, কভিড-১৯ মহামারী সংক্রমণের পাশাপাশি মিডরেঞ্জ ও প্রিমিয়াম সেগমেন্টে নতুন পণ্য না আসায় গ্রাহকরা ব্যয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেনি। স্মার্টফোন বাজারজাত কমে আসার প্রভাব যন্ত্রাংশ সরবরাহকারীদের আয়েও প্রভাব ফেলছে। শেনজেন গুডিক্স টেকনোলজি মূলত স্মার্টফোনের জন্য সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন করে। ২০২২ সালের প্রথমার্ধের বাজার অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, বছর শেষে তাদের নিট মুনাফা ৯৫ শতাংশ কমে যাবে। বাজারের চাহিদা কমায় এবং সরবরাহ চেইনের ব্যয় বাড়ায় মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
চাহিদা কমে যাওয়ার প্রভাব বহির্বিশ্বেও ছড়িয়ে পড়ছে। প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়ে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যকার চলমান দ্বন্দ্ব ছাড়াও চীনের স্মার্টফোন উৎপাদনকারীরা যুক্তরাষ্ট্র, তাইওয়ান ও জাপানের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ কেনে। অন্যদিকে প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে চীনের সিচুয়ান প্রদেশে একাধিক প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানের কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে অঞ্চলটিতে ছয়দিনের লকডাউনও ঘোষণা করা হয়েছে।
ছয়দিনের লকডাউনে পলিসিলিকন উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দাম এরই মধ্যে বেড়ে গিয়েছে। চাহিদাও ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। বিশ্লেষকদের ধারণা, এ কারণে সামনের দিনগুলোয় লিথিয়ামের দামও বাড়বে। লকডাউন থাকলেও কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের স্বাভাবিক উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে। অ্যাপলের সরবরাহকারী বিওই ও ফক্সকন জানায়, তারা বিকল্প ব্যবস্থা নিলেও সার্বিক কার্যক্রমে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না।
আরেকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ২৫ দিন ধরে চীনের বিভিন্ন শহরের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি রয়েছে, গত ছয় দশকের ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ। পরিবেশবিদদের পূর্বাভাস, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে এটি নিউ নরমাল তাপমাত্রা হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি পাবে। আবাসস্থল, অফিসসহ প্রায় সব অবকাঠামোয় এয়ারকন্ডিশনিংয়ের চাহিদা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এগুলো বিদ্যুতের চাহিদা বাড়াচ্ছে।